মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
সনাতন পদ্ধতিতে অবকাঠামো নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ইট তৈরির ফলে ভূমি, পরিবেশ ও বায়ুম-লের মারাত্মক ক্ষতির কথা তুলে ধরে এতে আধুনিক পদ্ধতি স্থানান্তরে ইটভাটা মালিকদের আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
গতকাল রোববার ঢাকায় বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড লিমিটেড (বিআইএফএফএল) আয়োজিত প্রথম ‘গ্রিন ব্রিকস্ কনভেনশন’ এ এই আহ্বান জানান অর্থমন্ত্রী।
“ইট তৈরিতে যে টপ সয়েল বা মাটির উপরিভাগ ব্যবহার করা হয় তা পরিবেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিকল্প কোনো পথে ইট তৈরি করা যায় সেটাই চিন্তার বিষয়। সরকার আধুনিক পদ্ধতি ‘হলো ব্রিকস’ উৎপাদনের প্রচেষ্টা আরও জোরদার করবে,” বলেন অর্থমন্ত্রী।
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর পরই স্থায়ী চিমনিতে কাঠ কয়লা পুড়িয়ে তৈরি করা ইটের পরিবর্তে আধুনিক ইট ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েও সুফল না পাওয়ার কথা জানান অর্থমন্ত্রী।
“২০০৯ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পর পরই একটা সিদ্ধান্ত দিই, সরকারের সব ধরনের নির্মাণ কাজে ‘হলো ব্রিকস’ ব্যবহার করতে হবে। অবশ্য আমাদের পিডব্লিউডি সেটা মানে নি বলেই মনে হচ্ছে।” আধুনিক পরিবেশ বান্ধব ইটের ভাটা শুল্কমুক্ত রাখা হয়েছে জানিয়ে সবাইকে সেই সুযোগ গ্রহণের আহ্বান জানান মুহিত। তিনি বলেন, “আমি ট্যাক্সের ক্ষেত্রে এর জন্য ভালো একটা ব্যবস্থা করে রেখেছি। টুকটাক আমাদের দেশের লোকে গ্রহণ করছে। কিন্তু ব্যাপকভিত্তিতে সেই সুযোগ নিচ্ছে না। আমাদের সবাই হুজুগে ছোটে। কিন্তু অনেক সুযোগ তাদের হাতছাড়া হয়। আশা করছি এই সুযোগটি সবাই নেবে।” অনুষ্ঠানে ইট তৈরিতে সনাতন পদ্ধতিসহ মোট চার ধরনের পদ্ধতির কথা জানানো হয়।
ক. স্থায়ী চিমনির ইটভাটা, যাতে কাঠ ব্যবহৃত হয়।এই চিমনির ইটের আকার ভালো হয়না। সরকারিভাবে এর উৎপাদন নিষিদ্ধ।
খ. উন্নত পদ্ধতির জিকজ্যাক ইটভাটা, যাতে চুলার আঁকাবাঁকা পথে কয়লা জ্বালানির তাপ গিয়ে ইট পোড়ার কাজ করে।
গ. হাইব্রিড হফম্যান ভাটা, যাতে গ্যাস অথবা কয়লার আগুনে বিশেষ আকৃতির চুলায় ইট তৈরি হয়।
ঙ. এবং আধুনিক ট্যানেল পদ্ধতির ইট ভাটা, যাতে মেশিনের সাহায্য ইট তৈরির অধিকাংশ কজ হয়।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক এ আতিক রহমান।
তিনি বলেন, জিডিপিতে ৮ দশমিক ১৮ শতাংশ অবদান রয়েছে অবকাঠামো খাতের। আর ইটের রয়েছে এক শতাংশ অবদান। বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব মতে, বর্তমানে ইটের ব্যবহার প্রতি বছর ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হারে বাড়ছে।
পরিবেশ বান্ধব ইটভাটার জন্য আধুনিক পদ্ধতিতে স্থানান্তর হওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রচলিত ইট ভাটায় ১৮ থেকে ২২ টন কয়লা পুড়িয়ে এক লাখ ইট তৈরি করা যায়। অন্যদিক অপর তিন আধুনিক পদ্ধতির ভাটায় ১২ থেকে ১৫ টন কয়লা জ্বালিয়ে সমপরিমাণ ইট পোড়ানো যায়। এছাড়া চিমনির ভাটায় অধিক পরিমাণ ধোঁয়া নিঃসরণ করে পরিবেশের ক্ষতি করে। আধুনিক টানেলে যেখানে ৯৫ শতাংশ এক নম্বর ইট তৈরি হয়, সেখানে পুরোনো স্থায়ী চিমনির ভাটায় ৬ শতাংশের বেশি এক নম্বর ইট পাওয়া যায় না। “আধুনিক কারখানায় ইটের উৎপাদন খরচও এখন কমে এসেছে। যেখানে প্রচলিত ইটের খরচ প্রতিটি ৬ টাকা সেখানে ৮ টাকায় উৎপাদন করা যাচ্ছে অটো ইট। আকারে সঠিক, অধিক চাপসহ, ভূমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার করতে হয় না,” বলেন তিনি।
২০১৩ সালে ইট ভাটা নিয়ন্ত্রণ অ্যাক্টে প্রচলিত ইট ভাটা নিষিদ্ধ করা হয়। ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে স্থায়ী চিমনির ইটভাটার জন্য নতুন করে লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ আছে।
দেশে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিবেশ বান্ধব শিল্প ও অবকাঠামো অর্থায়নের উদ্দেশ্যে গঠিত এ প্রতিষ্ঠানটি প্রচলিত চিমনি নির্ভর ইট ভাটায় পরিবেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়া, সেই সাথে পরিবেশ বান্ধব টানেল কিলন্ নির্ভর প্রযুক্তি ব্যবহারের গুরুত্ব তুলে ধরতে এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফিন্যান্স ফান্ড লিমিডেট (বিআইএফএফএল) রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠার পর থেকে অবকাঠামো ও পরিবেশ বান্ধব প্রকল্প বাস্তবায়নে এক হাজার কোটি টাকা (১০ বিলিয়ন) বিতরণ করেছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র, অর্থনৈতিক অঞ্চল, ট্যুরিজম এবং সামাজিক অবকাঠামো খাতে তাদের এই বিনিয়োগ।
অনুষ্ঠানে ছয়টি আধুনিক ইটভাটাকে ঋণ দেওয়া হয়। এগুলো হলো ধর্মপুর সিরামিকস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ফার্স্ট অটো ব্রিকস লিমিটেড, আসিম অটোব্রিকস লিমিটেড, মাকরেইল অটো গ্রিন ব্রিকস, এমআরডি ব্রিকস ও নাজ অটো ব্রিকস।
বিআইএফএফএল এর চেয়ারম্যান ও অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ সভাপতিত্বে বাংলাদেশে ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কান্ট্রি ডাইরেকটর কাজুহিকো হিগুচিসহ অন্যান্য বক্তব্য রাখেন।-বিডিনিউজ