আজ পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ণ


রাবি প্রতিবেদক:প্রকৃতির মিষ্টি রোদ আর গাছে গাছে রক্তরঙা পলাশ জানান দিচ্ছে বসন্তের। শীতকে বিদায় দিয়ে প্রকৃতিতে বসন্তের আগমন। ঋতুরাজ বসন্তে রঙিন সাজে সেজে উঠছে প্রকৃতি। আজ বসন্ত বরণের উৎসব দ্বিগুণ করে দেবে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের আনন্দ।

১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও বেশ আয়োজন করেই পালন করা হয় দিনটি। বিশেষ করে প্রেমিক যুগলদের পদচারণা, হাসিতে ভাঙে প্রকৃতির নিস্তব্ধতা। বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, বসন্তের প্রথম দিন ছিল ১৩ ফেব্রুয়ারি। তবে বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের পর থেকে একই দিনে পড়ছে বসন্ত উৎসব আর ভালোবাসা দিবস।

সারাদেশের মত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও (রাবি) আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে পালন করা হবে দিনটি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের পক্ষ থেকেই বসন্ত উৎসব পালন করা হবে। এরমধ্যে প্রতিবারের ন্যায় এবারও বসন্ত উৎসবের মূল আয়োজন করেছে রাবির চারুকলা অনুষদ। অনুষদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে এটি। এই উৎসবে থাকবে বেশ কিছু খাবারের দোকান। এরমধ্যে আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় খাবার নিয়ে থাকবে ‘খেই চাং’ নামে একটি দোকান। রাবিতে অধ্যয়নরত পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের গ্রুপ ‘জুম্ম শিক্ষার্থী পরিবার’ এর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে দোকানটি।

বসন্ত উৎসব উপলক্ষে ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বসন্ত বরণ ও পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘এসিসিই গ্রুপ’ আয়োজন করেছে অনুষ্ঠানটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসি সংলগ্ন মাঠে অনুষ্ঠিত হবে এটি। এছাড়াও, রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগসহ বেশ কয়েকটি বিভাগ আয়োজন করেছে বসন্ত উৎসবের।

বসন্তের দিনের আয়োজন নিয়ে কথা হয় চিত্রকলার শিক্ষার্থী উম্মে রুম্মান অভির সঙ্গে। তিনি বলেন, এবারের বসন্তে কাঁথা পুড়িয়ে শীতকে বিদায় জানানোর পাশাপাশি চারুকলার নবীনদের বরণ করে নেয়া হবে। কাঁথা পুড়ানোর আগে থাকবে আলোচনা সভা। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যদ্বয় এবং কোষাধ্যক্ষসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। এরপরে একটি র‌্যালি নিয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করা হবে। এছাড়া বসন্তের দিনে চারুকলা প্রাঙণে থাকবে বেশকিছু পিঠার দোকান আর দিনব্যাপী পুতুল চত্বরে চলবে চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। আর সাংস্কৃতিক আয়োজনে থাকবে বাঙ্গালী সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত আবৃতি, নাচ ও গানের পরিবেশনা।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে চারুকলা অনুষদের ডীন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বসন্ত বরণের আয়োজন করেছি। এটা পর্যায়ক্রমে আমাদের অনুষদের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর আয়োজন করে থাকে। এই উৎসবের মাধ্যমে আমরা আমাদের বাঙালীর ঐতিহ্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করি। পহেলা বৈশাখ যেভাবে জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে, সেভাবে এই উৎসবটিও যেন জাতীয় উৎসবে পরিণত হয় আমি সেই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

বসন্তবরণের ইতিহাস
ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রাচীন আমল থেকেই বাঙালি বসন্ত উৎসব পালন করে আসছে। হিন্দুদের পৌরাণিক উপাখ্যান ও লোককথাগুলোতে এই উৎসবের উল্লেখ পাওয়া যায়। হিন্দু বৈষ্ণবরা এটি বেশ আয়োজনের সঙ্গে পালন করে থাকেন। এরও আগে ভারতবর্ষের পূর্বাঞ্চলের প্রাচীন আর্য জাতির হাত ধরে এই উৎসবের জন্ম। খ্রিস্টের জন্মেরও বেশ কয়েকশো বছর আগে থেকে উদযাপিত হয়ে আসছে এই উৎসবটি। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দে পাথরের উপর খোদাই করা এক পাথরে পাওয়া গেছে এই উৎসবের নমুনা। এছাড়া হিন্দুদের গ্রন্থ বেদ ও পুরাণেও রয়েছে এই উৎসবের উল্লেখ।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় থেকে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে বিশেষ নৃত্যগীতের মাধ্যমে বসন্ত উৎসব পালনের রীতি চলে আসছে। বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল হতে বাংলাদেশে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। তবে খুব বেশি ঘটা করে পালন হয় ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আকবর বাংলা বর্ষপঞ্জি হিসেবে আকবরি সন বা ফসলি সনের প্রবর্তন করার পর। একইসঙ্গে প্রবর্তিত হয় প্রতি বছর ১৪টি উৎসব পালনের রীতিও। এর মধ্যেই অন্যতম ছিল বসন্ত উৎসব। বেশ আয়োজন করেই বাঙালি বরণ করে নেয় ঋতুরাজ বসন্তকে। তাই তো ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত।

বর্তমানে বাংলাদেশের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে বসন্ত বরণ। সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে বসন্তের প্রথম দিন তথা পহেলা ফাল্গুন অন্যতম বৃহৎ সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে, এর পেছনে অবদান রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। আরো নির্দিষ্ট করে বললে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের একদল শিক্ষার্থীর। ১৯৯১ সালে কোনোরকম পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই বসন্ত বরণ উৎসব পালন করেছিল তারা।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ