বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
উপলব্ধিটা যদি আন্তরিক অর্থে হয়, তাহলে এটা বলাই যায় যে পরিবর্তনটা হচ্ছে। যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নতুন যুগের সূচনা হবে- যা পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে স্বস্তির পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এটা শান্তি, উন্নয়ন ও মানবিক যাত্রায় বৈশ্বিক দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে। তবে এই উপলব্ধির জন্য ৭৬ বছর সময় লেগে গেল। ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে।
এটা খুবই অবিশ্বাস্য ব্যাপার নয় যে, যুদ্ধ থেকে ছুটি চায় পাকিস্তান? প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে ক্রমাগত সংঘাত থেকে মুক্তি চায় তারা। বদলে পাকিস্তানের একটাই আশা- ‘শান্তি’। ভারতকে সেই শান্তির প্রস্তাব দিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কাশ্মীর নিয়ে কথা বলতে চান। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিভিন্ন দেশের সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। দুবাইয়ের একটি টিভি চ্যানেল আল আরাবিয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী তাঁর এই অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন।
দু’দেশের সংঘাতের মূলে এই কাশ্মীর। ভূস্বর্গের অধিকার নিয়ে বহু বার দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে দুই দেশ। বেধেছে যুদ্ধ। সেই সব যুদ্ধে প্রাণ গিয়েছে দু’দেশেরই কাতারে কাতারে সেনা জওয়ানের। শাহবাজ সেই সমস্ত যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করে আমাদের যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে। ৩টি যুদ্ধের জেরে প্রায় দেউলিয়া হয়ে যেতে বসেছে পাকিস্তান। তাই আর যুদ্ধ নয়, এ বার পাকিস্তান শান্তি চায়।’
সত্যিকার অর্থেই পাকিস্তান দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। ৭৬ বছরের রাষ্ট্রটি জীর্ণ ভবনের পসেন্তারার মত খসে খসে পড়ছে। রাষ্ট্রের কাঠামোটাই ভেঙ্গে পড়তে চলেছে। পাকিস্তানে যেভাবে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে তা জাতিসমূহ এগিয়ে না আসলে রাষ্ট্রটির অস্তিত্বই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। দেশটি ক্রমাগত অর্থনৈতিক মন্দা কোনোভাবেই কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হচ্ছে না। বৈদেশিক ঋণে জর্জরিত পাকিস্তান ক্রমাগত শ্রীলংকার পথেই হাঁটছে। দেশটিতে খাদ্যঘাটতিও ব্যাপক রূপ নিয়েছে।
কেন দেশটির এই অবস্থা হলো? দেশটিতে কখনো অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি এসব কিছু ছিল কি? এসব প্রশ্নের উত্তর খুবই দুরূহ। বিশ শতকের পঞ্চাশ্ ও ষাটের দশকে পাকিস্তানে সামন্তবাদী অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু সেটাও পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে ওই অর্থনীতির পুরোটাই বাংলাদেশকে ও বাঙালিদের শোষণ করা অর্থনীতি। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে পাকিস্তান মূলত দান-খয়রাতির অর্থনীতি নির্ভর হয়ে পড়ে। দেশের কৌশল-পরিকল্পনা ও ব্যবস্থপনার উন্নয়নের চেয়ে যুদ্ধ খেলাতেই তারা মত্ত থেকেছে। দেশটির সামরিক বাহিনিই দেশটির নিয়ন্তা। সেখানে রাজনীতি কখনোয় দাঁড়াতে পারিনি। রাজনীীতকরাও দাঁড়াতে চায়নি। কিন্তু বৈশ্বিক ব্যবস্থাটা বেশ পাল্টেছে। যে তালিবানরা পাকিস্তানের জতুগৃহ থেকে সৃষ্টি- এখন তারাই পাকিস্তানের সেনাবাহিনিকে চ্যালেঞ্জ করছেই শুধু না তাদের ওপর হামলা করছে। কারণ পাকিস্তান আর সন্ত্রাস ও জঙ্গি চাষাবাদের জন্য বৈদেশিক অর্থের যোগান আর পাচ্ছে না। ধর্ম-উন্মাদনাসর্বস্ব একটি জাতি কখনোয় দাঁড়াতে পারে না। পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সেটিই হয়েছে। রাষ্ট্রকে ধীর লয়েও এগিয়ে নিতে হলেও রাষ্ট্রকে নূন্যতম মানবিক হতে হয়। কিন্তু সৃষ্টির পর থেকেই পাকিস্তান কোনো পরিস্থিতিতেই মানবিক হতে পারে নি।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বেশ অসহায়, সেটা বোঝা যায়। কিন্তু তার এই আত্মউপলব্ধি পাকিস্তানের ওপর মোটেও প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না। কেননা দেশটিকে মানবিক চর্চার ধারায় আনাটাই একটি দুরূহ কাজ। তদুপরি প্রত্যাশা করতেই হয় পথ যত কঠিন ও দুর্ভেদ্য হোক না কেন, আন্তরিকতা থাকলে তা অতিক্রম করা যায়।