পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াই সম্মেলন বর্জনের কারণ: শেখ হাসিনা

আপডেট: অক্টোবর ১৪, ২০১৬, ১১:৪৩ অপরাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক
পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়া নিয়ে বাংলাদেশ ‘হতাশ হলেও’ ইসলামাবাদে সার্ক সম্মেলন থেকে সরে আসার পেছনে ভারত ও বাংলাদেশের কারণ ভিন্ন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, “আমরা যে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেটা পাকিস্তানের পরিস্থিতির কারণে। (পাকিস্তান থেকে) সন্ত্রাসবাদ সব জায়গায় ছড়িয়েছে, যে কারণে আমাদের অনেকেই পাকিস্তানের ওপর হতাশ। ভারত সার্ক শীর্ষ সম্মেলন থেকে সরে এসেছে (উরি হামলার) কারণে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কারণটি সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন।”
শুক্রবার ভারতের গণমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের উরি সেনাঘাঁটিতে সন্ত্রাসীর হামলার পর পাকিস্তানে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন বর্জনের ভারতীয় অবস্থানের সঙ্গে বাংলাদেশের বিবেচনার তফাৎ স্পষ্ট করেন শেখ হাসিনা।
১৫-১৬ অক্টোবর ভারতের গোয়ায় অনুষ্ঠেয় ব্রিকস-বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার আগে গণভবনে তার এই সাক্ষাৎকার নেন দ্য হিন্দুর সাংবাদিক সুহাসিনী হায়দার।
শেখ হাসিনা বলেন, সার্ক সম্মেলন থেকে সরে আসার পেছনে তার সরকারের কাছে অন্যতম প্রধান কারণ ছিল, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বিচার ও সাজা কার্যকরের প্রক্রিয়া নিয়ে পাকিস্তান সরকারের কঠোর প্রতিক্রিয়া।
যুদ্ধের সময় ও পরে ভারতের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পাকিস্তানের আচরণের কারণে দেশটির সঙ্গে সকল কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য আমার উপর অনেক চাপ ছিল। কিন্তু আমি বলেছি, সম্পর্ক থাকবে এবং আমাদেরকে সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে।
“মূল কথা হলো- আমরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে জয়ী হয়েছি, এবং তারা ছিল পরাজিত শক্তি।”
তবে গত ১৮ সেপ্টেম্বর উরির ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলায় ১৯ সেনা নিহত হওয়ার পর নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতের অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, “দুই দেশেরই উচিৎ হবে নিয়ন্ত্রণরেখার পবিত্রতা রক্ষা করা, যাতে শান্তি আসে।”
ওই হামলার পর দুই দেশের উত্তেজনার মধ্যে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে পাকিস্তানের সীমানায় ঢুকে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানোর দাবি করে। তবে পাকিস্তান সীমান্ত অতিক্রমের দাবি নাকচ করে দুই পক্ষে গোলাগুলি হয়েছে বলে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়। এরপর থেকে কাশ্মির সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সৈন্যদের মধ্যে কয়েক দফায় গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে।
এ প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানে নভেম্বরে সার্ক সম্মেলনে যোগ না দেয়ার ঘোষণা দেয় ভারত। পরে বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানও সম্মেলনে না যাওয়ার ঘোষণা দিলে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার শীর্ষ এ সম্মেলন বাতিল হয়।
গত দুই দশকে কাশ্মিরে সবচেয়ে বেশি প্রাণঘাতী এই হামলা নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনেও উত্তাপ ছড়িয়েছে ভারত-পাকিস্তান। সংকট নিরসনে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন।
প্রতিবেশী দুই দেশকে সংঘাত থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি বজায় থাকুক। দক্ষিণ এশিয়ায় কোনো রকম সংঘাত হোক, কোনো রকম উত্তেজনা হোক, সেটা আমরা কখনও চাই না।”
এই অঞ্চলের এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের সংঘাত হলে বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানান তিনি।- বিডিনিউজ