শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
পাকিস্তানের পেশোয়ারে পুলিশ লাইনস এলাকার একটি মসজিদে বোমা বিস্ফোরণে মঙ্গলবার পর্যন্ত মৃত্যু ছুঁয়েছে ৯৩ জন। মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমের তথ্যমতে সোমবার ওই মসজিদে জোহরের নামাজ আদায়কালে এক আত্মঘাতি বোমা হামলায় ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের সময় মসজিদের ভেতরে প্রায় ২৬০ জনের মতো মুসল্লি ছিলেন। বিস্ফোরণে মসজিদের একটি অংশ ধসে পড়ে। মসজিদে আত্মঘাতী বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে পাকস্তানি তালিবান বা তেহরিক-ই-তালিবান। একই সঙ্গে তারা বার্তা দেয়, এই হামলা হল উমর খালিদ খুরাসানির মৃত্যুর বদলা।
পাকিস্তানের মাটিতে লাগাতার নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে পাক তালিবান বা তেহরিক-ই-তালিবান। সম্প্রতি এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে তালিবান শাসন কায়েম হওয়ার পর থেকেই অতিসক্রিয় হয়ে উঠেছে তেহরিক-ই-তালিবানসহ বিভিন্ন জেহাদি সংগঠনগুলি। বিশেষ করে পাকিস্তানে একাধিক হামলা চালিয়েছে, টিটিপি। বারবার আলোচনায় বসেও সংগঠনটিকে অস্ত্র পরিহারে বাধ্য করতে পারেনি পাক প্রশাসন। আফগান তালিবানের কাছে দরবার করেও বিশেষ ফল পায়নি ইসলামাবাদ। এবারও মসজিদের হামলার পিছনে সেই পাক তালিবানের নামই উঠে এলো। একদিকে দারিদ্র্য তো অন্যদিকে সন্ত্রাসবাদ, জোড়াফলায় কার্যত বিধ্বস্ত পাকিস্তান সরকার।
পাকিস্তানে যা ঘটছে তা মোটেও অস্বাভাবিক কিছু নয়। ধর্মীয় উন্মাদনাসর্বস্ব দেশটি জন্মের পর থেকে কখনোয় রাষ্ট্র হিসেবে দাঁড়াতে চায়নি। বরং সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদকেই তারা রাষ্ট্রের মৌল উপজীব্য করে নিয়েছে। দেশটির নিয়ন্ত্রক শক্তিই হলো সে দেশের সেনাবাহিনি। যাদের হাত ধরেই পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনগুলো বিস্তার লাভ করেছে। একই সাথে সেনাবাহিনি জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদকে আশপাশের দেশগুলোতেও ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে, এখনো রেখে চলেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতে জঙ্গি-সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার ক্ষেত্রে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থ্য আইএস- এর সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পাকিস্তানের অভ্যন্তরে যে জঙ্গিসংগঠন ক্ষমতায়িত হয়েছে- এখন তারাই পাকিস্তান রাষ্ট্রকেই চ্যালেঞ্জ করছে। আফগানিস্তানের তালিবান সরকার যথার্থই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে টিটিপিকে। অথচ আফগানিস্তানে তালিবান ফিরে আসলে পাকিস্তানের আহলাদের শেষ ছিল না। তেহরিক-ই-তালিবান এখন পাকিস্তান দখল করে সেখানে শারিয়া আইন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ পাকিস্তান অন্য দেশের ক্ষতি করতে যে আগুন জ্বালিয়েছিল সেই আগুনেই পাকিস্তান পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।
আফগানিস্তান ও পকিস্তানের পরিস্থিতিই বলে দেয় বাংলাদেশকে কতটা সতর্ক হতে হবে। জঙ্গি গোষ্ঠি কতটা ভয়াবহ ও প্রতিশোধ পরায়ণ হতে পারে তা ওই দুটি দেশের তালিবানি ধ্বংসযজ্ঞ থেকে শিক্ষা নেয়া যথার্থ হবে। একজন নেতার হত্যাকা-ের প্রতিশোধ নিতে নিরীহ মানুষের ওপর আত্মঘাতি বোমা হামলার মত নৃশংসতা আর কী হতে পারে?
বাংলাদেশের তালিবানদের প্রেত্মারাও বাংলাদেশেকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মত অকার্যকর রাষ্ট্রে পরণত করতে চায়। এ ক্ষেত্রে সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনি সতর্ক-পদক্ষেপের মধ্যেই আছে কিন্তু সেই সাথে দেশের মানুষকেও আরো বেশি করে জঙ্গিবিরোধী কাজে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ চালিয়ে যেতে হবে।