সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
বৃহস্পতিবার রাতে সিন্ধুর শেহওয়ান এলাকার বিখ্যাত সুফি সাধক লাল শাহবাজ কালান্দারের মাজারে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ ৮৮ জনে দাঁড়িয়েছেÑ সংবাদ মাধ্যমগুলি এ তথ্য জানিয়েছে। হামলায় আরো প্রায় আড়াইশ জন আহত হয়েছে। জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।বোমা হামলার পর শুরু করা নিরাপত্তা অভিযানে ১০০ সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীকে হত্যার কথা জানিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। মর্মান্তিক এই ঘটনার সংবাদ বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব সংবাদ মাধ্যম গুরুত্বের সাথে প্রকাশ ও প্রচার করেছে।
পাকিস্তানে এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা নতুন কিছু নয়Ñ এটি নিত্যনৈমিত্তকভাবেই ঘটে যাচ্ছে। জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান রাষ্ট্রটির সাময়িক লোক দেখানো ব্যবস্থা লক্ষ্য করা গেলেও মূলত এই পরিস্থিতির নিরসন হওয়া দেশটির সরকার কিংবা সেনাবাহিনীর বাঞ্ছিত বিয়য় নয়, বরং দেশটি জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক ও আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক দলগুলোর মস্তিস্কের কোষে কোষে জঙ্গি-সন্তাসবাদ নিবিষ্ট আশয়-প্রশ্রয়ে আছে। সেখান থেকে এই জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদকে সরানো খুব সহজ কাজ নয়Ñ পাকিস্তানের বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা অসম্ভবও বটে। জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ দমনে সে দেশের সরকারের ব্যর্থতার কিছু নেই, বরং জঙ্গিপনা তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং তা তাদের জন্য গৌরবেরও। সন্ত্রাসের মধ্যেই সে দেশের জনগণের একটি অংশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। যদি তা-ই না হবেÑ জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের এতো দোর্দ- প্রতাপ ও প্রভাব কেন? জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ থেকে বেরিয়ে আসার কোনো আগ্রই দেশটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই লক্ষ্য করা যায় না। বরং পাকিস্তানের জাতীয় রাজনীতিতে ও শাসন প্রক্রিয়ায় প্রবলভাবে ধর্মের অপব্যবহার, চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছে এবং তা আজও অব্যাহত আছে। দেশটি উগ্র সাম্প্রদায়িকতায় অভ্যন্তরীণভাবেই ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে তা-ই নয়Ñ তারা জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ প্রতিবেশী দেশগুলোতেও ছড়িয়ে দিচ্ছে। আফগানিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে, জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। পাকিস্তানের যোগসাজস ও সম্পৃক্ততার বিষয়টি বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধীদের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট পর্যন্ত অসত্য ও কুৎসিত আচরণ করেছে যা সব ধরনের সভ্যতা ও ভব্যতার পরিপন্থী। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে তারা বার বার নাক গলিয়েছে যা কূনৈতিক শিষ্টাচারের চরম লঙ্ঘন। তারা মানবতাবিরোধীদের সমর্থন দিয়েছে এবং বাংলাদেশকে নানা ধরনের হুমকি-ধামকিও দিয়েছে।
একটি রাষ্ট্র যদি জঙ্গি-সন্তাসবাদের সমর্থক হয় সে দেশ যে অনিবার্যভাবে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে নাÑ পাকিস্তান তেমনই একটি দেশ।
সন্দেহ নেই পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। তার একটি বড় প্রমাণ এই যে, দেশটির উগ্র সাম্প্রদায়িক দলগুলো জাতীয় নির্বাচনে সুবিধে করতে পারছে না। কিন্তু মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলোও ওই সব দলের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করছে না। ফলে উগ্র সাম্প্রদায়িক দলগুলো নির্বিঘেœ ধর্মকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ওই দেশের জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ দমনে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো সে দেশের সেনাবাহিনী। যে সেনাবাহিনী পাকিস্তানের রাজনীতিকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তারাই জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদকে পরিপুষ্ট করে নিজ দেশকে ভঙ্গুর করছে, অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের বিভন্ন স্থানে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ রফতানি করছে। ভীষণ এই অর্গল ছিঁড়ে বের হতে পারছে না সে দেশের জাতীয় রাজনীতি।
পেশোয়ারে সেনা পরিচালিত একটি স্কুলে জঙ্গিদের পৈশাচিক হত্যাকা-ের পর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সে দেশের জনগণ সংহতি দেখিয়েছিল কিন্তু পাকিস্তান এমন এক দেশ যেখানের সেনাবাহিনী জনমানুষের আকাক্সক্ষার পরিপন্থী সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে। অভ্যন্তরীণ সঙ্কট থেকে দেশের মানুষের দৃষ্টি ফেরাতে বার বার ‘ভারত জুজু’ কে ব্যবহার করেছে সে দেশের সরকার- সেনাবাহিনী। ফলে সাধারণ নিরীহ মানুষ সেখানে অসহায় অবজ্ঞায় জঙ্গিদের হাতে জীবন ও সম্পদ হারাচ্ছে। সেখানে মানবাধিকার সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্থ। তাদের কিন্তু কিছুই করার নেই।