পাকিস্তান পরিস্থিতি দেশটি আবারো ভাঙ্গনের মুখে?

আপডেট: মে ২৭, ২০২৩, ১:০৪ পূর্বাহ্ণ

পাকিস্তানের সেনাবাহিনি দেশটির ওপর জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসে আছে সেই জন্মলগ্ন থেকেই। কখনো প্রত্যক্ষ, কখনো বা পরোক্ষভাবে সেনাবাহিনিই দেশটির রাজনীতি ও সরকার নিয়ন্ত্রণ করেছে, এখনো করছে। এর ব্যত্যয় ঘটানোর চেষ্টা যে বা যে দলই করুক না কেন দেশটির সেনাবাহিনি সহ্য করেনি। সেই সে ব্যক্তি কিংবা রাজনৈতিক দলকে তাদের কোপানলে পড়তে হয়েছে। এমন কী বেঘওে জীবন পর্যন্ত হারাতে হয়েছে।
যদিও ইমরান খান সেনাবাহিনির প্রচ্ছন্ন সহায়তায় সরকার গঠন করেছিলেন। কিন্তু যেই সেনাবাহিনিকে দেশের সরকার ও জনগণের প্রতিপক্ষ ভাবতে শুরু করেন- তখনই ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফকে (পিটিআই) সরকার থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। মূলত দেশটিতে কোনো রাজনৈতিক দলই পূর্ণমাত্রায় ক্ষমতায় পাঁচবছর ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। কিন্তু দেশটির তরুণ সমাজ সেনাবাহিনির কুক্ষিগত ক্ষমতার অবসান চাইছে। তারা এটা পরিস্কার বুঝতে পারছে যে, সেনাবাহিনির রাষ্ট্র পরিচালনায় খবরদারি বন্ধ করতে না পারলে পাকিস্তান ও দেশটির জনগণের কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। তরুণ সমাজ এটাও উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনি বাংলাদেশে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল এবং সেটা পাকিস্তান সেনাবাহিনির ষড়যন্ত্র ছিল। এই বোধের পথ ধরেই পাকিস্তানে ইমরান খান ও তার দল পিটিআই জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে। পাকিস্তানের ইতিহাসে এই প্রথম সেনানিবাসে বিক্ষুব্ধু জনতা সেনানিবাসে হামলা চালিয়েছে। ইমরান খানকে গ্রেফতারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশটি নানামাত্রিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এবং এই পরিবর্তিত ধারা পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির অস্তিত্বের মারাত্মক ঝুঁকিও তৈরি করেছে। দেশটির বিচার বিভাগও সেনাবাহিনির প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে। কিন্তু সেনাবাহিনর ষড়যন্ত্র তত্ত্ব মোটেও থেমে নেই। যা তারা দেশটির রাজনৈতিক দল ও নেতাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই অব্যাহতভাবে করে আসছে। বর্তমানে সেনাবাহিনি ইমরানের পিটিআ্ইকে নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে বলেই ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী তেমনই ধারণা দিয়েছেন। পিটিআই নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে এটা বোঝা যাচ্ছে। ইমরান খানকে তার দলের মধ্যেই একা করে দেয়ার ক্ষেত্রে ইতোমধ্যেই সেনাবাহিনি সাফল্য দেখাতে পেরেছে। পিটিআই-এর শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতাই পিটিআই থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। সেনা গোয়েন্দাদের হুমকির মুখে পিটিআই-এর নেতারা একে একে দল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। সারা দেশে ১১ হাজারের বেশি পিটিআই নেতাকর্মিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইমরান খান ও তার স্ত্রী বুশরা বিবিসহ দলটির অন্তত ৮০ জন নেতার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
পাকিস্তানের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি ভীষণভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। দেশে মূল্যস্ফিতি ভয়ঙ্কররূপে দেশের মানুষের ওপর চেপে বসেছে। অকার্যকর রাষ্ট্রের একেবারে প্রান্তিকতায় অবস্থান করছে দেশটি। তদুপরি সেবাহিনির ষড়যন্ত্রের রাজনীতি বন্ধ নেই। পাকিস্তান যে খুবই ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকেই যাচ্ছে এটা স্পষ্ট হয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে এই প্রশ্ন সামনে এসেছে যে, পাকিস্তান কি আবারো বিচ্ছিন্ন হওয়ার মুখে? সময়ই এর যথার্থ উত্তর দিবে নিশ্চয় এখন অপেক্ষার পালা।