শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
পাকিস্তান বিশ্বাসঘাতক দেশÑ খোদ আমেরিকা এ তকমা দিয়েছে পাকিস্তানকে। বিশ্বের বিভিন্ন সংবাধ্যমে সম্প্রতি এ খবর শিরোনাম হয়েছে। পাকিস্তানের জন্য এ রকম কলঙ্কটিকা অদৌ কি প্রয়োজন ছিলÑ যে কলঙ্ক টিকা দেশটির জন্মের পর থেকেই লেগে আছে। পাকিস্তানের জন্ম-ইতিহাস ও পরবর্তী রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহ তারই সাক্ষ্য দেয়। তাই দক্ষিণ এশিয়ার পরম মিত্র পাকিস্তান সম্পর্কে আমেরিকার ‘বিশ্বাসঘাতক’ অভিধা নতুন কিছু নয়। তবে আমেরিকা সে সত্যটি বুঝতে অনেক সময় নিয়েছে। অবশ্য দেশটির নাম যখন আমেরিকা তখন তাদের স্বার্থে আবারো পাকিস্তানকে কোলে নিয়ে নৃত্য করবে না তার কোনো গ্যারান্টি নেই। কেননা পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী কর্মকা-ে আশ্রয়-প্রশয় দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রসর দেশটিই হলো আমেরিকা।
সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য মতে, মার্কিন কংগ্রেসের প্রভাবশালী সদস্য তথা বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির অন্যতম দ-মু-ের কর্তা টেড পো-এর কথায়, পাকিস্তান এমন একটি দেশ, যারা পিছন থেকে ছুরি মারে। দীর্ঘ দিনের মিত্র পাকিস্তানকে ‘বেনেডিক্ট আর্নল্ড অ্যালায়ি’ (বাংলা প্রবচনে মিরজাফর) বলে আখ্যা দিয়েছেন মার্কিন আইনসভার নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের এই সদস্য। পাকিস্তানকে প্রদেয় ৩৫ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা আটকে দেয়ার যে সিদ্ধান্ত প্রতিরক্ষা সচিব জেমস ম্যাটিস নিয়েছেন, এক টুইট বার্তায় সেই সিদ্ধান্তের প্রশংসাও করেছেন তিনি।
টেড পো পাকিস্তান সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন, তা হাল্কা ভাবে নেয়ার মতো নয়। চলতি মাসেই মার্কিন কংগ্রেসে পেশ করা রিপোর্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন জানিয়েছিল, পাকিস্তান ‘সন্ত্রাসবাদীদের নিরাপদ স্বর্গ’। তার কিছু দিনের মধ্যেই আমেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়ে দেয়, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য পাকিস্তানকে যে অর্থসাহায্য দেয়ার কথা ছিল, তা আমেরিকা দেবে না। কারণ দীর্ঘ দিন ধরে আমেরিকার কাছ থেকে বিপুল অর্থসাহায্য নিয়েও পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করেনি। এ বার এল টেড পো-এর কড়া বয়ান। আমেরিকার বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির অধীনে যে ‘সন্ত্রাসবাদ, পরমাণু অস্ত্র প্রসার রোধ এবং বাণিজ্য’ সাব-কমিটি রয়েছে, পো তার চেয়ারম্যান। তিনি প্রতিরক্ষা সচিবের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন।
পাকিস্তানের বিশ্বাঘাতকতা ও পিছন থেকে ছুরি মারার মর্ম-যাতনা যে কী মারাত্মক তা বাঙালি জাতি ছাড়া বেশি কিছু আর কে জানে। সেই মর্ম-যাতনার মধ্যদিয়েই তো পাকিস্তানের পাজর ভেঙ্গে বাঙালি জাতি তার স্বাধীন সত্ত্বার ঘোষণা দিয়েছিলÑ সেই বাঙালি জাতির বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।
বিশ্বাসঘাতকতা পাকিস্তানের জাতীয় রাজনীতিরই একটি অংশ। এই চরিত্র এতই ভয়ঙ্কর এবং বিকৃত যে তারা অন্য জাতিসত্ত্বাকেই শুধু নয়Ñ নিজেদের মানুষকেও মাঝে মধ্যে গিলে খায়। পাকিস্তান রাষ্ট্রটিই গঠন হয়েছিল বাঙালিদের বলিষ্ট সমর্থনের ফলে। যখনই পাকিস্তার রাষ্ট্র মর্যাদা পেলো তখনই তারা সব কিছু অস্বীকার করে বসলো। বাঙলিদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানালো, ভাষা ও জাতি সত্ত্বার ওপর আঘাত হানলোÑ এর চেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা আর কী হতে পারে!
বাঙালিরা যখন প্রতিবাদ করলো, সংগঠিত হল, স্বাধিকার চাইলো- তখন পাকিস্তানিরা বাঙালি জাতিসত্ত্বাকে ধ্বংস করার মত পাশবিক নেশায় মত্ত হলো। ৩০ লক্ষ বাঙালি শহিদ হলো, বিশ্বাসঘাতক পাকিস্তান পরাজিত হলো, বাংলাদেশ স্বাধীন হলো।
পাকিস্তান এখনো বাঙালি জাতির শত্রু, বাংলাদেশের শত্রু। তাদের ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত থেমে নেই। পাকিস্তান জন্ম-বিশ্বাসঘাতক। এ বদনামই তাদের জাতীয় গৌরব। এ গৌরব অক্ষুণœ রাখতে চায়Ñ কখনো কখনো নিজ দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন করেও। যে রাষ্ট্রের গন্তব্য ভঙ্গুরতার দিকে, সে দেশ তো বিশ্বাসঘাতক হবেই। আমেরিকা বলুক আর না-ই বলুক।