পাক প্রধানমন্ত্রীর উপলব্ধি || পূর্বের সকল দায় স্বীকার করতে হবে

আপডেট: মার্চ ১৭, ২০১৭, ১২:১১ পূর্বাহ্ণ

ধর্মীয় উন্মাদনা সম্পর্কিত যত অপরাধ আছে তার সবগুলোই পাকিস্তানে সংঘটিত হয়। জন্মের পর থেকেই দেশটি ধর্মীয় উন্মাদনা সর্বস্ব। দ্বিজাতি তত্বের ভিত্তিতিই দেশটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই ভিত্তিমূলকে টিকিয়ে রাখার জন্য যত ধরনের ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে- বিকৃত করে দেশটি ৭০ বছর পরিচালিত হ”েছ। সময়ের ব্যবধানে ধর্মীয় উন্মাদনা ভয়ঙ্করভাবে বেড়েছে। সেখানে ধর্মের নামেই হত্যা, ধর্ষণ, ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। ধর্মীয় উপসনালয় ও কবর¯’ানেও নির্বিচার হত্যাকা- সংঘটিত হ”েছ। অন্য ধর্মীয় মতপথের লোকেরা সেখানে দ্বিতীয় শ্রেণি ও বৈষম্যের জীবন কাটায়। ধমীয় ভেদবুদ্ধি ও জাতিগত সংঘাত সেখানের প্রায় প্রতিদিনের ঘটনা। একটি ভঙ্গুর রাষ্ট্রের সবকিছুই পাকিস্তানে বিদ্যমান।
রাষ্ট্রের এমনই ভয়ঙ্কর পরি¯ি’তিতে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জোর করে কারও ধর্ম পরিবর্তন করা বা কারও ধর্ম¯’ানে ভাঙচুর চালানো ইসলামে অপরাধ? খোদ পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের মুখে শোনা গেল এ কথা? ধর্ম নিয়ে যে দেশে ‘গোঁড়ামি’ তুঙ্গে, সেখানকার প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ?এ সংক্রœবত একটি প্রতিবেদন দৈনিক সোনার দেশসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যওেম প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে।
পাকিস্তানে প্রায়শই সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নেমে আসে আক্রমণ? ভেঙে দেয়া হয় মন্দির? জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয় তাঁদের? অনেকে আবার একে ইসলামের অঙ্গ বলেই মনে করেন? কিš’ সে সবের বিরুদ্ধে এবার কড়া বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী? জানালেন, কে স্বর্গে যাবে আর কে নরকে যাবে, তার বিচার করার দরকার নেই? বরং সকলে মিলে চেষ্টা করা উচিত, যাতে পাকিস্তান স্বর্গসমান হয়ে উঠতে পারে? ধর্মীয় গোঁড়ামিতে রাশ টানতে পাক প্রধানমন্ত্রীর চেষ্টা ছিল প্রশংসনীয়? তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ই্সলাম কখনও কোনও ধর্মকে অসম্মান করতে শেখায় না? বরং জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেকটি মানুষকে সমান সম্মান দেয়ার কথাই শেখায় ইসলাম ধর্ম? তাই কারও ধর্মবোধে আঘাত করা বা ধর্ম¯’ানে আঘাত হানা ইসলামে অপরাধ? তাঁর মতে, ধর্ম নিয়ে পাকিস্তানের কোনও সমস্যা নেই? সমস্যা যদি কিছু থেকে থাকে তবে তা দেশের অভ্যন্তরে বাসা বেঁধে থাকা সন্ত্রাস? সেই সন্ত্রাসীরাই ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা করে, মানুষকে উত্যক্ত করে?
নেওয়াজ শরীফের এই বোধকে স্বাগত জানাতে হয়। কিš’ অতীতের অপকর্মগুলো যা রাষ্ট্রীয়ভাবে সংঘটিত হয়েছে সেগুলোর দায়ও পাকিস্তানের নেয়ার সময় এসেছে। নতুবা পাক প্রধানমন্ত্রীর আজকের তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য অসাড় বলে পরিণত হবে। কেননা পাকিস্তানের ইতিহাসে ধর্মকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও রক্তপাতের ইতিহাস অত্যন্ত ভয়াবহ- মর্মান্তিক। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মানবাধিকার লড়ঘনের যে পরাকাষ্টা দেখিয়েছিল পাকিস্তান- তা বিশ্ব ইতিহাসে নির্মম সাক্ষি হয়ে আছে। সেখানে জোর করে ধর্মান্তর থেকে শুরু করে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটনা বিশ্বের নির্মমতম ঘটনা হয়ে আছে। এইতো সেদিন পাকিস্তানের ক্রিকেটার ক্যানেরিয়াকে প্রভাবিত করে খ্রিস্টান থেকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা দেয়ার ঘটনা বিশ্ববাসী জানেন।
ধর্মীয় উন্মদনা স”ষ্টিতে এখনো বিশ্বের শীর্ষ দেশ হিসেবে পরিগণিত হ”েছ। এই উন্মাদনায় রাষ্ট্রীয় প”ষ্ঠপোষকতা শুধু নয়Ñ সম্প”ক্ততাও লক্ষনীয়। বাংলাদেশে যখন কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হ”েছ তখন পাকিস্তানের পার্লামেন্টে তার বিরুদ্ধাচারণ করা হ”েছ। এর অর্থ এই যে, পাকিস্তানের জাতীয় রাজনীতি ও সরকার ব্যব¯’ায় ধর্মীয় সন্ত্রাসের আশ্রয়-প্রশ্রয় খুব ঘনিষ্টভাবেই আছে। পাকিস্তানকে সব জাতিগোষ্ঠির জন্য নিরাপদ করতে আগে আগের বিষয়গুলোর মীমাংসা এবং প্রতিকার হওয়া উচিৎ হবে। একই সাথে অতীত কর্মকা-ের জন্য ক্ষমা ও অনুতপ্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। নতুবা পাক প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য কথার কথা হিসেবেই বিবেচিত হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ