শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
ভারত সরকার বাংলাদেশি পাটপণ্যে উচ্চ হারে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করার পর এর বিরূপ প্রভাব স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রওনা হয়ে বেনাপোল স্থলবন্দরে পৌঁছে বাড়তি শুল্কের বিষয়টি জানার পর দুদিন ধরে সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে পাটপণ্য বোঝাই ৬৮টি ট্রাক।
বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা মাহমুদ শফিউল্লাহ জানান, আগে যেখানে প্রতিদিন একশ থেকে দেড়শ ট্রাক পাটপণ্য ভারতে যেত, সেখানে নতুন শুল্কের গেজেট প্রকাশের পর বৃহস্পতি ও রোববার মাত্র তিন ট্রাক পাটপণ্য রপ্তানি হয়েছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবে, বাংলাদেশ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রায় ৯১ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করেছে। এর ২০ শতাংশ গেছে ভারতে, যা সেখানকার বাজারের প্রায় ৮ শতাংশ।
বাংলাদেশি উৎপাদকরা পাট রপ্তানিতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা পাওয়ায় ভারতীয় পাট মার খাচ্ছে এমন অভিযোগ জানিয়ে দেশটির অ্যান্টি-ডাম্পিং অ্যান্ড অ্যালাইড ডিউটিজ (ডিজিএডি) অধিদপ্তর গত অক্টোবরে বাংলাদেশ ও নেপালের পাটজাত পণ্েয প্রতিরক্ষামূলক শুল্ক আরোপের সুপারিশ করে।
এর ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার ভারতের রাজস্ব বিভাগ অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপের গেজেট প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান ভারতে পাটসুতা, চট ও বস্তা রপ্তানি করতে চাইলে প্রতি মেট্রিক টনে ১৯ থেকে ৩৫২ ডলার শুল্ক দিতে হবে।
ভারতের এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের পাটপণ্যের রপ্তানি কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
খুলনার এমএম জুট ফাইবারস, মুন ইন্টারন্যাশনাল জুট মিলস, প্রবাল শিপিং লাইন্সসহ অন্তত পাঁচটি প্রতিষ্ঠান আগে খোলা ঋণপত্র অনুযায়ী মাল পাঠিয়েও শুল্কের কথা জানার পর তাদের ৬৮টি ট্রাক বেনাপোলে আটকে রেখেছে।
মুন ইন্টারন্যাশনাল জুট মিলসের প্রতিনিধি জাহান আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরি ডটকমকে বলেন, এই হারে শুল্ক দিয়ে আগের দরে মাল পাঠালে ৬০ টন পাটসুতায় তাদের লোকসান হবে ২০ লাখ টাকা।
প্রবাল শিপিং লাইন্সের প্রতিনিধি মহসিন আলী বলেন, বাংলাদেশের অনেক পাটকল ভারতে রপ্তানির ওপর নির্ভর করে ব্যবসা চালিয়ে আসছে। উচ্চ হারে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপের ফলে সেগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
বেনাপোল বন্দর কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আইনবিষয়ক সম্পাদক মশিয়ার রহমান বলেন, বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় আসে পাট থেকে। আর এ পণ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার ভারত। সেই বাজারে পাঁচ বছরের জন্য এই শুল্ক আরোপ করা হল।
প্রতিবছর ভারতে প্রায় দুই লাখ টন পাটসুতা, বস্তা ও চট রপ্তানি করে আসছে বাংলাদেশ, যার মধ্যে পাটসুতার পরিমাণ দেড় লাখ টনের বেশি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতোদিন তারা ৮০০ থেকে ৯০০ ডলারে প্রতি টন পাটসুতা রপ্তানি করে আসছিলেন। এর সঙ্গে নতুন হারে শুল্ক যোগ হলে যে দাম দাঁড়াবে তাতে ভারতের বাজারে প্রতিযোগিতায় টেকা সম্ভব হবে না।- বিডিনিউজ