মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২০ কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
আমানুল হক আমান, বাঘা
রাজশাহীর হাটে-বাজারে পাট কেনাবেচা শুরু হয়েছে। পাটের দাম গত বছরের তুলনায় বেশি হওয়ায় খুশি চাষীরা। বাজারে মানভেদে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা। মাঠে মাঠে পাট কাটা, জাগ দেওয়া, আঁশ ছুড়ানো এবং শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষী ও শ্রমিকেরা। জেলার উপজেলাগুলোর বিভিন্ন হাট-বাজারে চলছে নতুন পাট কেনাবেচা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাজশাহীতে পাট চাষ হয়েছে ১৭ হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে। গত বছর চাষ হয়েছিল ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। গত বছর পানির অভাবে পাট জাগ দিতে ভোগান্তিতে পড়ার কারণে এবার চাষ কমেছে ২ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে। এছাড়া বাঘা উপজেলায় ৪ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। এবার পাট চাষে মোটামুটি অনুকূল আবহাওয়া ছিল। কিন্তু শুরুর দিকে কোনো কোনো স্থানে খরার কারণে কিছু রোপন করা পাট নষ্ট হয়েছিল।
পাট কেনাবেচায় সংশ্লিষ্টরা জানান, পাটের হাট সাধারণত ভোর বেলায় বসে। হাটবারে বিভিন্ন উপজেলার পাট কেনাবেচা হয়। ভোর বেলায় শুরু হয়ে সকাল সাড়ে সাত থেকে আটটার মধ্যে পাট কেনা বেচা হয়ে যায়। এরপরে ওইস্থানে হাটের অন্যসব জিনিসপত্র কেনাবেচা হয়। বুধবার (২৮ আগস্ট) বাঘা উপজেলায় বসে দিঘাহাট। এই হাটে পাট কেনাবেচা হয়েছে প্রকার ভেদে ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে।
ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, গত বছর পাটের ভালো দাম পেয়েছে চাষীরা। এই দাম মৌসুমের শেষের দিকে আরও বেশি ছিল। তবে গত বছরের চেয়ে এই বছর মৌসুমের শুরুতে প্রতিমণ পাটের দাম গড়ে ২০০ টাকা বেশি। ফলে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ধারণা এবছরও শেষ পর্যন্ত আশানুরূপ পাটের দাম পাবেন চাষীরা।
বাঘার দিঘাহাট পাট বিক্রি করতে আশা মকুল হোসেন বলেন, পাটের বীজ বপনের সময়ে বৃষ্টিপাত ছিল না। ফলে অনেকের পাটের বীজ নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া অনেকেই পানির অভাবে পাটের বীজ বপন করেনি। তবে দুই সপ্তা আগেও পাট জাগ দেওয়া নিয়ে এক দুশ্চিন্তা ছিল। কিন্তু বৃষ্টিপাতের ফলে খাল-বিলে পানি জমায় সেই চিন্তা কেটে গেছে। তিনি আরও বলেন, এবছর এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে খরচ হয়েছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। আর এক বিঘা জমিতে পাটের উৎপাদন ধরা হচ্ছে ৭ থেকে ৮ মণ করে।
বাউসা আমরপুর গ্রামের পাট চাষী আমিরুল ইসলাম বলেন, জমিতে পানি থাকায় পাট কাটা শ্রমিকদের বেশি মজুরি দিতে হচ্ছে। বর্তমান বাজারে মানভেদে প্রতি মণ পাটের দাম ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা। এই এলাকার চাষীরা খুব একটা যত্ন নিয়ে পাট ধোয়ার কাজ করেন না। এতে করে অন্য জেলার পাটের মানের চেয়ে আমাদের পাটের মান ও রঙ ভালো হয় না।
বাউসা হেদাতিপাড়া গ্রামের মকসেদ আলী বলেন, গত শুক্রবার দিঘাহাটে ভ্যানে করে ৬ মণ পাট বিক্রি করেছেন ১২ হাজার ৯০০ টাকায়। তবে এরমধ্যে ভ্যান খরচ ও খাজনা খরচ দিতে হয়েছে। হাটে বাজারে পাটের চাহিদা ভালো আছে। বিক্রি করতে কোন সমস্যা নেই।
পাট ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, নওগাঁয় প্রতিমণ পাটের দাম আমাদের চেয়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা প্রতিমণে বেশি। কিন্তু এই এলাকার পাটের মান ভালো না হওয়ার কারণে দাম তুলনামূলক কম পায় চাষীরা।
পাট সংরক্ষণকারী দিঘা গ্রামের ব্যবসায়ী আজিজুল হোসেন বলেন, পাট কিনতে শুরু করেছি। পাটের চাহিদা আছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এবার অন্য এলাকার পাট কম চাষ হয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে স্থানীয়ভাবে পাটকল। এছাড়াও বিভিন্ন মোকামে পাটের চাহিদা রয়েছে।
বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, পাটের জমিতে কিছু পানি থাকলে আঁশের কোনো ক্ষতি হয় না। তবে অপরিপক্ক পাট কাটলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। বর্তমান বাজারে ওঠা পাট হয়তো পরিপক্ক হওয়ার আগে কাটা হয়েছে। এ উপজেলা ৪ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি ফলন হয়েছে ২ দশমিক ৮ মেট্টিকটন।