মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১১ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
রাজশাহী মহানগরীর হেতেমখাঁ ছোটমসজিদ এলাকার গোরস্থান পুকুরে গোসল করতে নেমে ৭ বছর বয়সী দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ৩০ মে দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। ২৮ মে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার হাড়িয়াকাহন গ্রামে আরেক ঘটনায় ৫ বছরের রিয়াদ ও চার বছরের নাহিদ পুকুরে গোসল করতে নেমে ডুবে মারা যায়। এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা বাংলাদেশে অহরহই ঘটে যাচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমে ইত্যকার ঘটনা প্রায়ই প্রকাশ পায়Ñ যা উদ্বেগজনক। কিন্তু প্রতিকারের উপায় থাকলেও বিষয়টি উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে।
সংবাদ মাধ্যমের তথ্য বলছে, জনসংখ্যার অনুপাতে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায় বাংলাদেশে। প্রতি বছর ১৪ হাজারের বেশি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। দেশে প্রতিদিন পানিতে ডুবে ৫ বছরের কম বয়সী ৩০ জন শিশু মারা যায়। ১৮ বছর বয়স সীমার বিবেচনায় এ মৃত্যুহার ৪০। এ দু’টি পরিসংখ্যানের আলোকে বলা যায়, এ মৃত্যু প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া না হলে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে বাংলাদেশের সাফল্য ম্রিয়মাণ হয়ে যেতে পারে।
রোগে ভুগে মৃত্যুর চেয়ে দেশটিতে পানিতে ডুবে মৃত্যুর হারই বেশি বলে মনে করেন গবেষকরা। দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ পানিতে ডুবে যাওয়া, যা এটিকে একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত করেছে।
বিশ্বব্যাপী পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করার মতো দুঃখজনক ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্দেশ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৯ মে’র অধিবেশনে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের যৌথ নেতৃত্বে একটি রেজ্যুলেশন গৃহীত হয়েছে। জেনেভাতে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত এ রেজ্যুলেশনটিতে ৭৪টি দেশ কোস্পন্সরশিপ করেছে। রেজ্যুলেশনের উপর আলোচনায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলো তাদের বক্তব্যে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে পানিতে ডুবে মৃত্যুহার সর্বাধিক উল্লেখ করে বলে যে, অল্প খরচেই এ মৃত্যুহার কমানো সম্ভব। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো ইতোমধ্যে শিশুদের সাঁতার শেখানোর মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে।
তথ্য-প্রমাণ বলে, খুব সহজেই পানিতে ডুবে যাওয়া প্রতিরোধ করা যায়। পরিবার ও কমিউনিটির মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সাঁতারে দক্ষ করে তোলা, প্রাক-স্কুলের শিশুদের জন্য শিশু যতœ কেন্দ্রের সুবিধা নিশ্চিত করা এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করতে জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও বিনিয়োগ এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। শিশুদের সুরক্ষার জন্য ঘনবসতি এলাকার পুকুর- ডোবা ইত্যাদি ঘিরে রেখেও পানিতে ডুবে মৃত্যুহার কমানো সম্ভব হবে। নিঃসন্দেহে জনস্বাস্থ্য সুররক্ষা এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকার ইস্যু হওয়াই বাঞ্ছনীয়। যা সহজ প্রতিরোধযোগ্য তা সহজভাবে প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার সময় এসেছে। উদাসীনতা হত্যায় উৎসাহেরই সামিল নয় কী!