শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
বরেন্দ্র অঞ্চলে সুপেয় পানির সংকট প্রতি বছরই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। প্রতিনিয়তই পানির লেয়ার নিম্নমূখী। সম্প্রতি সুপেয় পানির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন রাজশাহীর আদিবাসীরা। ভুক্তভোগীরা বলছেন, তানোরের মাহালীপাড়ায় ভূ-অভ্যন্তরের পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এছাড়া ৩ শতাধিক মানুষের বসবাসকৃত গ্রামে কোন টিউবয়েল নেই। দূর থেকে সুপেয় পানি কিনে আনতে হচ্ছে। সুপেয় পানির এই অভাব আদিবাসীদের জীবনযাপন মানকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। যা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনও উদ্বিগ্ন। দ্রুত এই সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির সংকট দীর্ঘ দিনের। ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে সেখানে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও পড়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এরপরও সেখান থেকে যে পানি মেলে তাতে আয়রন ও আর্সেনিকের উপস্থিতি সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি।
পানির অভাবে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হচ্ছে প্রান্তিক দরিদ্র মানুষদের। যাদের বড় একটি অংশই আদিবাসী। তাদেরকে সুপেয় পানি সংগ্রহের জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। এরপরও কোনো কোনো দিন পানি মেলে না। পানি সংগ্রহের ভোগান্তি পোহাতে হয় নারী ও শিশুদেরও। মৌলিক এই অধিকার আদায় করতে গিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকারও হচেছন তারা। পানি সংকট দূর করতে বরেন্দ্র অঞ্চলে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে স্থানীয়দের চাহিদা মিটছে না। আবার অনেক প্রকল্প টেকসই হয় নি। এজন্য অনেকে অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন।
তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলের বার্ষিক বৃষ্টিপাত ছিল গড়ে ১ হাজার ৪০০ মিলিমিটারের কম। আর এ সময়ে দেশে গড়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২ হাজার ৫৫০ মিলিমিটার। অর্থাৎ বরেন্দ্র অঞ্চলে ৪৫ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টি কম হওয়ায় কৃষিসহ নানা কাজে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কারণেও সেখানে পানির সংকট তীব্র হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। এ অঞ্চলে গড়ে ওঠা শিল্প-কারখানাগুলোতেও নির্বিচারে পানি উত্তোলন বন্ধ করে কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সুপেয় পানি সংকট ভবিষ্যতে আরও বড় সংকট তৈরি করতে পারে। এ বিষয়ে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় দরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। পানির এই সংকট দূরকরণে টেকসই প্রকল্প নিতে হবে। এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে উপেক্ষিত স্থায়ীয় জনগোষ্ঠীকেও সম্পৃক্ত করা জরুরি। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্বদ্বিচ্ছা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতাগুলোও নিরসন করতে হবে।