মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন খাতে শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুপেয় পানি ব্যবস্থাপনাকে একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিনিধিত্বমূলক করতে জবাবদিহিতা বৃদ্ধিও লক্ষ্যে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওয়েভ ফাউন্ডেশন উদ্যোগে পয়ঃনিষ্কাশন এবং স্বাস্থ্যবিধি এর ঝুঁকি মোকাবেলায় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন খাতে জবাবদিহিতা বৃদ্ধির জন্য সহায়তা শীর্ষক প্রকল্পটি রাজশাহীতে কাজ করছে।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) নগরীর সাহেববাজার এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় পরিচালিত গণশুনানিতে ফলাফল উপস্থাপন করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা আহমেদ বোরহান।
গণশুনানীতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আল্লা হাফিজ, রাজশাহী ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী পারভেজ মামুদ, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মামুন ডলার, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা সেলিম রেজা রঞ্জু এবং প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মেহেদী হাসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সুশাসন, অধিকার ও ন্যায্যতা কর্মসূচির উপ-পরিচালক কানিজ ফাতেমা এবং গণশুনানিটি সঞ্চালনা করেন বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টা নির্বাহী পরিচালক ফয়জুল্লাহ চৌধুরী।
এছাড়াও এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন, যুব ও ছাত্র প্রতিনিধি, লোকমোর্চা ও সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের ওয়াসার গ্রাহকবৃন্দ, নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ। মুক্ত আলোচনায় ওয়াসার গ্রাহকসেবার কার্যক্রম বিষয়ে তাদের বিভিন্ন মতামত ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।
গণশুনানিতে সামাজিক নিরিক্ষার তথ্য দেখা যায়, রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকার ৩০ টি ওয়াডের ১০ টিতে সামাজিক নিরীক্ষা পরিচালনা করা হয়। পানি ও পয়ঃনিস্কাশন সেবা প্রদানকারী রাজশাহী পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিস্কাশন (ওয়াসা) কর্তৃপক্ষ এবং সিটি কর্পোরেশন এর ওয়াসার গ্রহীতাদের সাথে নির্দিষ্ট প্রশ্নপত্রের আলোকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এই ১০ টি ওয়ার্ডের ৫ টিতে (২, ৩, ৫, ৬, ১৯) সচেতনতা প্রোগ্রাম পরিচালনা করা হয়। অন্য ৫ টি ওয়ার্ড থেকে (১, ৪, ৭, ৯,১১) নমুনা নেওয়া হয়েছে।
সেবা প্রদানকারী এবং সেবাগ্রহীতা উভয়ই উত্তরদাতা ছিলেন এবং পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সংক্রান্ত সেবা কার্যক্রমে তাদের উপলব্ধি এবং অভিজ্ঞতাকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে ২০০ (১৯৫ সেবা গ্রহীতা ও ৫ জন সেবা দাতা) এই সমীক্ষায় সম্পৃক্ত করা হয়।
সামাজিক নিরীক্ষায় ওয়াসার গ্রাহক সন্তুষ্টি ছিল মাত্র ৪১.০২%, সেখানে অসন্তুষ্টি মাত্রা ছিল ৫৮.৯৭%। সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে ৫১.১১% ওয়াসার কর্মীকে সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা অর্থ প্রদান করেছেন। সাধারণ মানুষ ওয়াসার সেবা সংক্রান্ত কোন অভিযোগ বা মতামত জানানোর কোন মাধ্যম রয়েছে কিনা সে উত্তরে সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা জানে না বলেছে ৫৯.৪৮%।
সামাজিক নিরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের অসন্তুষ্টির কারণ হিসেবে বলেছেন আয়রণযুক্ত ময়লা পানি-খাবারের অযোগ্য; দুগন্ধযুক্ত ময়লা পানি; সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয়ের অভাব; পানির বিল বেশি; গ্রাহক সেবার মান উন্নয়নের উদ্যোগের অভাব; অনেক সময় পানি কম আসে ইত্যাদি। এছাড়া নাাগরিকদের ওয়াসার সেবার মূল্য সম্পর্র্কে কোন ধারণা না থাকা; পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সেবা প্রদানকারীদের সম্পর্কে অধিকাংশ নাগরিকদের ধারণার অভাব; নাগরিকদের জন্য ওয়াসার কার্যক্রম সম্পর্কে প্রচার প্রচারণা কম থাকা এমনটিই উঠে আসে সামাজিক নিরীক্ষার ফলাফলে।
সামাজিক নিরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা ওয়াসার কার্যক্রমকে জনমুখী করতে বেশ কিছু পরামর্শ প্রদান করেন। প্রচারণা বাড়ানো, জনবল বাড়ানো, তদারকি বাড়ানো, সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা, অবৈধ সংযোগ বন্ধ করা এবং জনগণের সাথে নিয়মিত যোগাযোগসহ সিটি কর্পোরেশনের সাথে সংযোগ রেখে বাকি কার্যক্রম পরিচালনা করার কথাও ওয়াসার পক্ষ থেকে উঠে আসে। এবং গণশুনানিতে জনগণের সমস্যা নিরষণের কার্যকরি পদক্ষেপ রাখবে বলেও তারা জানান।