পানি কমে যাওয়ায় বিরূপ প্রভাব বরেন্দ্র অঞ্চলে

আপডেট: নভেম্বর ২৪, ২০১৬, ১১:৫৫ অপরাহ্ণ


একেতোতা, গোদাগাড়ী  
রাজশাহীর গোদাগাড়ীর পদ্মা নদীতে জেগে উঠেছে অসংখ্যা ছোট-বড় চর। কমে গেছে নদীর নাব্যতা। এতে করে নদীর পানি তিনভাগে বিভক্ত হয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীতে পানি কমে যাওয়ায় এর বিরুপ প্রভাব পড়েছে নদী তীরবর্তী গ্রাম ও বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষিতে। তবে নদীতে কোল সৃষ্টি হওয়ায় মাছ চাষের উৎস তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি ভরে যাওয়ার কারণে নদীর তীর ভেঙে গৃহহারা হয় শত শত মানুষ। আর শুল্ক মৌসুমে নদীর পানি কমে যাওয়ায় নৌযান চলাচলে বিঘœ হওয়ায় মালামাল নিয়ে নদী পারাপারে চরের মানুষের দুর্ভোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছে। যা গত দুই সপ্তা ধরে চরের মানুষকে তিনবার নৌকা যোগে পদ্মা নদী পারা পার হতে হচ্ছে।
নদী তীরবর্তী গ্রামের চরনওশেরা গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ্ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের চর আলাতুলি ইউনিয়নে বসবাস করে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ। এই সব মানুষের জীবন জীবিকা পদ্মা নদীকে ঘিরে। কিন্তু শুল্ক মৌসুমে নদীর বুকে ছোট বড় চর জেগে উঠায় এবং নদীর পানি কমে যাওয়ার বিরুপ প্রভাবে চরঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় বর্ষায় অল্প পানিতে নদী ভরে যায়। দেখা দেয় নদী ভাঙন। গত কয়েক বছরে নদী ভাঙনে চরাঞ্চলের হাজার হাজার একক ফসলি জমি ও বাড়ি-ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো শত শত জেলে। নদীতে পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে মাছ কমে যাওয়ায় জেলেরা এই সময় বেকার হয়ে পড়েছে।
গোদাগাড়ীর বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ রবিউল ইসলাম বলেন, পদ্মা নদীতে সব সময়ের জন্য পানি ভরে থাকতো। পদ্মা রাজশাহী-চাঁপাইনব্বগঞ্জ পর্যন্ত নৌ পথে যোগাযোগ ছিল। ভারতের জঙ্গীপুর থেকে মাল বঝায় জাহাজ পদ্মা নদীদিয়ে গোদাগাড়ী রেলবাজার বন্দরে আসতো। ১৯৬৫ সালে জঙ্গীপুর থেকে জাহাজ আসা বন্ধ হয়ে গেলে চালু ছিল রাজশাহী চাঁপাইনব্বাগঞ্জের মধ্যে সরাসরি নৌযান চলাচল। নদীর নাব্যতা কম ও নদীতে অসংখ্য চরে জেগে ওঠার পর থেকেই রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের মধ্যে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও গোদাগাড়ীর উপজেলার প্রেমতুলী থেকে ভাটোপাড়া পর্যন্ত বিশাল চর জেগে উঠায় নদীর পানি এখন প্রবাহিত হচ্ছে ভারতের প্রায় দুই কিলোমিটার ওপর দিয়ে। শুল্ক মৌসুমে সরাসরি নৌযান চলাচল করতে গেলে দুই কিলোমিটার নৌপথের ভারতের অনুমতি লাগবে।
এ বিষয়ে ইউডিপিএস নদী ও জীবন ২ প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আমিনুল ইসলাম বলেন, পদ্মা নদীর এই অবস্থা হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবে। শুল্ক মৌসুমে নদী পানি কমে যাওয়ায় বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্¯’ পানির স্থর নিচে নেমে যাওয়ায় ফলে সেচ সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির জন্য বসানো নলকূপ গুলিতে পানি কম ওঠে। নদীর তীরবর্তী গ্রাম গুলির পরিবেশ কিছুটা রুক্ষ হয়ে ওঠে। বিরূপ আবহাওয়া বিরাজ করায় ফসল, গাছপালা গাবাদিপশু, হাস-মুরগির ক্ষতি হয়। মানব দেহে দেখা দেয় বিভিন্ন রোগ। প্রায় মৃত পদ্মা নদীতে জীবিত করে আগের যৌবনে ফিরিয়ে আনতে হলে ড্রেজিংএর মাধ্যমে নদীর গভীরতা বাড়াতে হবে।
এ প্রসঙ্গে গোদাগাড়ী নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শান্তকুমার মজুমদার বলেন, গোদাগাড়ীর পদ্মা নদীতে ড্রেজিং করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি দ্রুত প্রস্তাবিত গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। এই জন্য গোদাগাড়ী নাররিক কমিটি মানববন্ধন, সভাসমাবেশ ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। গত ২৩ নভেম্বর উপজেলা সদরে মানববন্ধনে কৃষক নেতা মুখলেসুর রহমান বলেন, পদ্মা নদী বাঁচলে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষি বাঁচবে। রাজশাহীর রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান তার বক্তব্যে বলেন, গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বরেন্দ্র অঞ্চল ও পদ্মা নদীর তীরবর্তী ৮টি জেলার ১৯ লাখ হেক্টর জমিতে ফসলের উৎপাদন বাড়বে। ব্যাপক সম্প্রাসারিত হবে মাছ চাষ। যা এ অঞ্চলের মানুষের পুষ্টির চাহিদার পাশাপাশি ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে। গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প উৎপাদিত হবে ১১৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।