পাবনায় সপ্তাহব্যাপী বৃক্ষমেলায় ক্রেতাদের উপস্থিতি কম, সময় বাড়ানোর দাবি

আপডেট: জুলাই ৩০, ২০২৪, ১২:৪৫ অপরাহ্ণ


শাহীন রহমান, পাবনা :


পাবনা শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল স্বাধীনতা চত্বরে চলছে সপ্তাহব্যাপী বৃক্ষমেলা। কিন্তু চলমান কারফিউ ও অস্থিরতার মাঝে বেচাকেনা অনেকটাই কম। এদিকে দেরীতে শুরু হওয়া মেলা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ৩১ জুলাই। এমন অবস্থায় বৃক্ষমেলার সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন নার্সারী মালিক ও বৃক্ষপ্রেমীরা।

“বৃক্ষ দিয়ে সাজাই দেশ সমৃদ্ধ করি বাংলাদেশ” এই প্রতিপাদ্য নিয়ে গত ২৫ জুলাই থেকে পাবনা জেলা প্রশাসন ও সামাজিক বন বিভাগের এই আয়োজনে শুরু হওয়ার কথা ছিল সপ্তাহব্যাপী বৃক্ষমেলা। কিন্তু দেশব্যাপী কারফিউ থাকায় নির্ধারিত সময়ে মেলার কার্যাক্রম শুরু করতে পারেনি আয়োজকরা। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর গত শনিবার (২৭ জুলাই) শুরু হয় বেচাকেনা।

জেলার তালিকাভুক্ত ২৫টি নার্সারী এই মেলায় অংশগ্রহণ করেছে। দেশি বিদেশি ফল ও ফুলের চারা নিয়ে এসেছেন বিক্রেতারা। রোববার সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা যায় ক্রেতাদের আনাগোনা বেড়েছে। নানা বয়সী বৃক্ষপ্রেমীরা ঘুরে ফিরে নিজেদের পছন্দের গাছ কিনছেন।

মেলায় গাছ কিনতে আসা গৃহবধূ সালমা খাতুন বলেন, ‘শহরে বাসায় থাকলেও গাছের প্রতি অদ্ভূত ভালবাসা আছে আমার। তাই সুযোগ পেলেই বিভিন্ন ফুলের গাছ কিনি। বাসার ছাদে বিভিন্ন ফুলের গাছে আছে। ফুলের সাথে সময় কাটাতে ভাল লাগে।’

বৃক্ষপ্রেমি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দিন দিন রোবট হয়ে যাচ্ছি। গাছ আমাদের যে কত উপকারী তা সবাই বুঝতে পারছে না। তবে এবারের তীব্র তাপপ্রবাহ সেটি বুঝিয়ে দিয়েছে। তাই বেশি বেশি গাছ লাগানোর কোনো বিকল্প নেই। বাড়ির আঙিনা ও বাসার ছাদে ফুল ফলের গাছ লাগিয়েছি। বুক ভরে নি:শ্বাস নিতে পারি।’

মেলায় নার্সারী মালিকরা ফলজ, বনজ, ঔষধি ও ফুলের চারা মিলে প্রায় অর্ধলক্ষ গাছের সমাহার ঘটিয়েছেন। দেশি ফুল ও ফল থেকে শুরু করে বিদেশ থেকে সংগৃহিত নানা জাতের ফুল ও ফলের গাছের চারা পাওয়া হচ্ছে মেলায়।

প্রতিদিন সকাল সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকছে মেলার গেট। ৩১ জুলাই আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে শেষ হবার কথা রয়েছে বৃক্ষমেলার। তবে সময় বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন মেলায় অংশগ্রহণকারী নার্সারী মালিকরা।

জেলা নার্সারী মালিক সমিতির সভাপতি আনিসুর রহমান বলেন, এই মেলায় আমরা যারা অংশগ্রহণ করেছি সবাই একই গাছ বা চারা নিয়ে আসিনি। সবাই ভাগ করে আলাদা আলাদা গাছ ও গাছের চারা দিয়ে স্টল করেছি।

তিনি বলেন, বিক্রি কম। মেলার সময় বৃদ্ধি না করলে এই মেলা করে লাভ হবে না। কৃষি বিভাগ বা বন বিভাগ এই মেলার কোন খরচ তো আমাদের দেয়না। তাই খরচ পুষিয়ে নিতে মেলার সময় বৃদ্ধির দাবি জানান তিনি।

শিক্ষক গবেষক ড. এম আব্দুল আলিম বলেন, এই প্রজন্মের নতুন যারা রয়েছে তারা বেশিরভাগই অনেক গাছের নাম জানে না। এই বৃক্ষ মেলার মধ্যে দিয়ে নতুন প্রজন্ম গাছ চিনতে পারছে, গাছের নাম জানতে পারছে। শিশু কিশোরদের গাছের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সুযোগ রয়েছে বৃক্ষমেলায়। তাই অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের বৃক্ষমেলায় নিয়ে যাওয়া।

সামাজিক বন বিভাগের পাবনার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজ আহম্মেদ বলেন, বৃক্ষমেলার মাধ্যমে আমরা সৌখিন বৃক্ষপ্রেমীদের কাছে একটি বার্তা পৌছে দিতে চেয়েছি। বিশেষ করে যারা শহরের ছাদবাগান সহ বাড়ির আঙ্গিনায় বৃক্ষরোপন করে থাকেন। তারা খুব সহজে এই মেলা থেকে নিজেদের পছন্দের বৃক্ষ সংগ্রহ করতে পারবেন।

তিনি আরো বলেন, এবার মেলার শুরু সময়ে দেশে একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনার কারণে সময়ে পিছিয়ে গেছে। তবে মেলার সময় বৃদ্ধির বিষয়ে নার্সারী মালিকরা আবেদন করেছেন। আমরা জেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে দেখছি সময় বাড়ানো যায় কি না।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ