বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ৯ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
পারিবারিক নৃশংসতায় একের পর এক বলি হচ্ছে অবুঝ শিশু। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে গতবছর বাবা-মা’র হাতে শিশু সন্তানের মৃত্যু হয়েছে সবচেয়ে বেশি। বাবা-মা’র সংযত আচরণই শিশুদের এ থেকে রক্ষা করতে পারে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
১০ জানুয়ারি দারুসসালাম এলাকায় স্বামী শামীম হোসেন ও স্ত্রী মোছা. আনিকার ভাত খাওয়া নিয়ে ঝগড়া হয়। বাসা থেকে স্বামী বের হয়ে গেলে মা আনিকা একা ঘরে প্রথমে তার দু’সন্তানকে জবাই করে হত্যা করেন। একজন মা কীভাবে নিজ সন্তানদের হত্যা করতে পারলেন- এ নিয়ে ওই এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার দারুসসালাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সেলিমুজ্জামান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ঘটনার দিন পারিবারিক কারণে স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া হয়। এর জের ধরে মা তার দু’সন্তানকে হত্যা করেছেন। সামান্য কারণে দুটি অবুঝ শিশুকে বলি হতে হবে ! সমাজ গেছে কোথায়?’
গত ২৯ ফ্রেব্রুয়ারি রামপুরার বনশ্রীতে মা মাহফুজা তার দু’সন্তানকে নিজের ব্যবহৃত গলার ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে তিনি ঘটনা ভিন্ন খাতে নেয়ারও ফন্দি করেন।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শিশু অধিকার ফোরামের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়তই পারিবারিক নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে অবুঝ শিশুদের। গত এক বছরের মধ্যে দেশে বাবা-মায়ের হাতে সন্তানের প্রাণ যাওয়ার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে দেড় গুণ। ২০১৫ সালে যে সংখ্যা ছিল ৪০। সেখানে ২০১৬ সালের শেষে এসে দাঁড়ায় ৬০। এর মধ্যে রাজধানীতে ১৮টি এ ধরনের ঘটনা ঘটে। যা উদ্বেগজনক।
এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদুর রহমানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘শিশু হত্যাকা- রোধে মা-বাবা সবাইকে নিয়ে সামাজিক সম্পর্ক জোরদার ও মূল্যবোধ উন্নয়নের বিষয়ে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সন্তানদের নিরাপত্তার প্রধান জায়গা হচ্ছে বাবা-মা ও পরিবার। আর সেখানে যদি এ রকম ঘটনা ঘটে তাহলে পুলিশ কি করবে। তারপরও প্রতিটি ঘটনায় বাবা-মাকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।’
মনোরাগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘শিশুর সবচেয়ে পরম নিরাপদ জায়গা বাবা-মায়ের কোল। অথচ বাস্তবতা ভিন্ন। শিশুরা তাদের হাতেই হত্যা হচ্ছে। বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানদের সম্পর্ক শিথিল হয়ে আসার প্রবণতা, শিশুদের লাগামহীন চাহিদা এবং শহরগুলোতে সনাতন পরিবার কাঠামো ভেঙে পড়ার কারণে এমন ঘটনা ঘটছে।’
রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এখন একটা ভোগবাদী পুঁজিবাদী সমাজ যেখানে পরিবারগুলোকে বিস্তর প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে চলতে হচ্ছে। আর্থিক ও সামাজিক এই প্রতিযোগিতার কারণে বাবা-মায়েরা মনে করছেন, বেঁচে থেকে লাভ কি, সন্তান বেঁচে থেকে লাভ কি? এই যে মানসিক অবস্থা, তা থেকে বের হতে হলে সামাজিক শৃঙ্খলা এবং নৈতিক শক্তিগুলোকে আবার ঠিক করে নেয়া দরকার। পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে আসা, ভোগবাদী সংস্কৃতি ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ও এ জন্য দায়ী।’- রাইজিংবিডি