পারিবারিক নৃশংসতার শিকার শিশুরা ।। চাই, বাবা-মার সংযত আচরণ

আপডেট: জানুয়ারি ১৪, ২০১৭, ১১:৫৯ অপরাহ্ণ

বাঙালি জাতির ঐতিহ্যগতভাবে পারিবারিক যে বন্ধন তা ক্রমশই শিথিল হয়ে আসছে। দ্বান্দ্বিকতা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে সহিংসতার সাথে সাথে আত্মহত্যার প্রবণতাও আশংকাজনক হারে বাড়ছে। আর এর নির্মম শিকারে পরিণত হচ্ছে অবুঝ শিশুরা। এটি স্থিতিশীল সমাজব্যবস্থার জন্য এটি হুমকিই বটে। এ বিষয়ক একটি প্রতিবেদন শনিবার দৈনিক সোনার দেশে প্রকাশিত হয়েছে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শিশু অধিকার ফোরামের পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পারিবারিক নৃশংসতায় একের পর এক বলি হচ্ছে শিশুরা। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ২০১৬ সালে বাবা-মা’র হাতে শিশু সন্তানের মৃত্যু হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এটি ভয়ঙ্কর ও উদ্বেজনক সামাজিক প্রতিচ্ছবি।
রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়তই পারিবারিক নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে অবুঝ শিশুদের। গত এক বছরের মধ্যে দেশে বাবা-মায়ের হাতে সন্তানের প্রাণ যাওয়ার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে দেড় গুণ। ২০১৫ সালে যে সংখ্যা ছিল ৪০। সেখানে ২০১৬ সালের শেষে এসে দাঁড়ায় ৬০। এর মধ্যে রাজধানীতে  ১৮টি এ ধরনের ঘটনা ঘটে।
মনোরাগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘শিশুর সবচেয়ে পরম নিরাপদ জায়গা বাবা-মায়ের কোল। অথচ বাস্তবতা ভিন্ন। শিশুরা তাদের হাতেই হত্যা হচ্ছে। বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানদের সম্পর্ক শিথিল হয়ে আসার প্রবণতা, শিশুদের লাগামহীন চাহিদা এবং শহরগুলোতে সনাতন পরিবার কাঠামো ভেঙে পড়ার কারণে এমন ঘটনা ঘটছে।’
তাদের মতে এখন একটা ভোগবাদী পুঁজিবাদী সমাজ যেখানে পরিবারগুলোকে বিস্তর প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে চলতে হচ্ছে। আর্থিক ও সামাজিক এই প্রতিযোগিতার কারণে বাবা-মায়েরা মনে করছেন, বেঁচে থেকে লাভ কি, সন্তান বেঁচে থেকে লাভ কি? এই যে মানসিক অবস্থা, তা থেকে বের হতে হলে সামাজিক শৃঙ্খলা এবং নৈতিক শক্তিগুলোকে আবার ঠিক করে নেয়া দরকার। পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে আসা, ভোগবাদী সংস্কৃতি ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ও এ জন্য দায়ী।
ভোগবাদী সমাজের উগ্রতা এতই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, মানুষ অর্থের পেছনে দিকভ্রান্ত যেমন ছুটছে, আবার অনেকের চারিত্রিক অধঃপতনও পারিবারিক অস্থিতিশীলতা বাড়াচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নারীরা খুবই দুর্বলতর অবস্থানে আছে। তারা কোনোভাবে পেরে উঠতে না পেরে অনেক সময় নিজ আত্মঘাতী হয় এবং তার অবর্তমানে সন্তানের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তা তাকে সন্তানের ঘাতকেও পরিণত করে। সামাজিক মূল্যবোধ ও পারিবারিক মর্যাদার জায়গাটি এতই বেশি নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে যে, আমাদের পরিবেশ ও প্রতিবেশ থেকে সম্পর্ক-ব্যবধান বাড়ছে। এই প্রবণতা সমাজে এক ধরনের দায়হীনতা তৈরি করছে।
এখান থেকে উত্তরণের উপায় বাবা-মা’র সংযত আচরণ। তবেই অবুঝ শিশুদের পারিবারিক নিষ্ঠুরতা থেকে রক্ষা করা যাবে।  সেই সাথে পরিবারকে সুসংহত করতে সেই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের চর্চা ফেরাতে হবে, যেখানে নৈতিকতা ছিল, মূল্যবোধ ছিল এবং জীবন, পরিবেশ ও প্রতিবেশের প্রতি অগাধ ভালবাসা ছিল।