পার্থ থেকে মেলবোর্ন

আপডেট: মার্চ ১৭, ২০১৭, ১২:১৪ পূর্বাহ্ণ

ওসমান গনি তালুকদার



…০৩মার্চ ২০১৭ সংখ্যার পর
বর্ডার ভিলেজ থেকে সেডুনা (৫১২ কিলোমিটার)- ২
ডিংগো অস্ট্রেলিয়ার দেশজ বন্য কুকুর। দেখতে কিছুটা আমাদের দেশি নেড়ি কুকুরের মত, তবে ক্ষীপ্র গতি সম্পন্ন। অস্ট্রেলিয়ার বন্য প্রাণীগুলির মধ্যে এটিই কিছুটা হিংস্র স্বভাবের, এই অর্থে যে, মাঝে মধ্যে এরা দলবদ্ধভাবে অন্য প্রাণীকে শিকার করে খায়। তবে মানুষকে কখনো আক্রমণ করেছে এমন কথা শোনা যায় না। তবুও সম্ভবত হিংস্রতা অথবা বন্য স্বভাবের কারণে এদেরকে কেউ বাড়িতে পোষে না। অন্তত শহর এলাকায় আমি কখনো কাউকে পুষতে দেখিনি।
ঐ এলাকায় দুই-তিনটা ডিংগো রাস্তার পাশে ঘুরে বেড়াতে দেখলাম। স্বাভাবিক ভাবেই মনে প্রশ্ন জাগল, যে সমস্ত বন্য প্রাণী সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে রাস্তার পাশে সাইন বোর্ডে, তাতে ডিংগোকে উল্লেখ করা হয়নি কেন? ভাবলাম, ক্ষিপ্রগতি সম্পন্ন প্রাণী তাই হয়ত চলন্ত যানবাহনের সাথে সংঘর্ষ এড়িয়ে চলতে পারে। কিন্তু ক্যাঙ্গারু! সেও তো দ্রুত লাফাতে পারে। পরে মনে হলো শুধু গতি নয় বুদ্ধিও এখানে বিবেচ্য। কেননা, একটি বইয়ে দেখেছি প্রাণী জগতের বুদ্ধিমান ১০টি প্রাণীর তালিকায় এক নম্বরে মানুষ আর কুকুরের স্থান ষষ্ঠ অথবা সপ্তম। কাজেই বুদ্ধি এবং ক্ষিপ্রতা এ দুয়ের সমন্বয়ে ডিংগো সংঘর্ষ এড়াতে সক্ষম। কিন্তু ক্যাঙ্গারু বুদ্ধির অভাবে ক্ষিপ্রগতিতে এসে গাড়ির সাথে ধাক্কা খায় আর মৃত্যুবরণ করে। প্রাণীজগতের বোকা দশটি প্রাণীর তালিকা দেখিনি। আমার ধারণা, ক্যাঙ্গারুর স্থান হবে ঐ তালিকার নিচের দিকে। অত্যন্ত নিরীহ স্বভাবের এই প্রাণীটি সত্যিই বড় বোকা এবং নির্বোধ। শব্দ করে চলন্ত কিছু আসতে দেখলে অন্যান্য প্রাণী যখন পালিয়ে যায়, এই প্রাণীটি তখন লাফাতে লাফাতে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়!
অল্পক্ষণের মধ্যেই আমরা নালারবর (ঘঁষষধৎনড়ৎ) গিয়ে পৌঁছলাম। সেখানে রোড হাউসের পাশে গাড়ি থামালাম। আগে থেকেই বেশ কয়েকটা যানবাহন সেখানে পার্ক করা ছিল। অনেকেই গাড়ির পাশে বসে সম্ভবত লাঞ্চ করছিল, আমরাও লাঞ্চের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। জেসমিন চার-পাঁচ রকমের শাক-সবজি দিয়ে রান্না করা তরকারি বের করল। আমি সেটা দেখে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার ঐ পাঁচমেশালি সবজির আলাদা কোন মহাত্ত্ব আছে কী? জেসি বলল, অবশ্যই! আমাদের প্রতিদিন চার-পাঁচ রকমের শাক-সবজি খাওয়া উচিৎ। তবে আলাদাভাবে না করে একসঙ্গে রান্না করলে খেতে বেশি মজা লাগে।
আমরাই যদি সব লতা-পাতা (শাক-সবজি) খেয়ে ফেলি তাহলে তৃণভোজী প্রাণীরা কী খাবে? তাছাড়া ওগুলো তো খেতে তেমন ভাল লাগে না।
গরু, ছাগলের কথা তোমাকে চিন্তা করতে হবে না, নিজের কথা চিন্তা কর। আর ভাল না লাগলেও খেতে হবে। কারণ, আমাদেরকে খেতে হয় শরীরের প্রয়োজনে, মনের চাহিদা মিটাবার জন্য নয়।
আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। এবার বাংলাদেশে গিয়ে তা পরীক্ষা করে দেখব।
কী রকম?
আমরা ভেজিটেরিয়ান মুরগি পুষবো। যে সমস্ত সবজী আমাদের খাওয়া উচিৎ, সেগুলি তাদেরকে খাওয়াব। বড় হলে সেগুলি জবাই করে মাংস খাব। তাহলে আমাদের আর সবজি খেতে হবে না!
মুরগি তো সবজি খায় না।
তাই নাকি? তারা তো যা পায় তাই খায়। সবজি খায় না কেন? যদি অন্য কিছু না দেওয়া হয় তাহলেও খাবে না?
সেটা মুরগিকেই জিজ্ঞাসা করে দেখ।
তাহলে মুরগিকে ভেজিটেরিয়ান বানানোর চেষ্টা না করে বরং খাসি পুষব। সেটা তো আর সবজি খেতে না করবে না বরং খুশিই হবে। সেটাকে প্রতিদিন ঘাস, পাতার পরিবর্তে খাওয়াব লাল শাক, পালং শাক, আলু, পটল, বেগুন ইত্যাদি। তারপর বড় হলে জবাই করে তার মাংস (যার মধ্যে প্রচুর ভিটামিন থাকবে) খাব। বুদ্ধিটা কেমন বলতো?
উদ্ভট বুদ্ধি।
কেন?
এজন্য যে, প্রাণীদেহে কোন ভিটামিন বেশি দিন থাকে না। কাজেই কোন পশুর মাংসে তেমন কোন ভিটামিন পাওয়া যায় না। আবার আগেই বলেছি, মানবদেহে ভিটামিন সি ২৪ ঘণ্টার বেশি থাকে না। সুতরাং, প্রত্যেকেরই প্রতিদিন ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার তথা শাক সবজি খাওয়া উচিৎ।
আচ্ছা, খাদ্য ও পুষ্টি সম্পর্কে তুমি যে সমস্ত কথা বললে সেগুলির ভিত্তি কী?
কেন? তুমি জান না আমি মাঝে মধ্যেই পয়সা খরচ করে পুষ্টিবিদদের পরামর্শ নিতে যাই।
ওহ! এখন মনে পড়ছে, মাঝে মধ্যে তুমি পরীক্ষামূলকভাবে কিছু সবজি আধা বা অল্প সিদ্ধ করে আমাকে খেতে দিতে। তাহলে সেগুলি তুমি উনাদের পরামর্শ মোতাবেক করতে, তাই না?
(কিছুটা রাগত স্বরে) অনেক হয়েছে, আর কোন কথা বল না।
আচ্ছা! তবে ২০১১ সালে দ্বিতীয় যে মজার ঘটনা ঘটে সেটি বলে একদম চুপ হয়ে যাব। ঘটনাটি হলো, বিংশ শতাব্দিতে যত লোকের জন্ম হয়েছে তাদের জন্মসালের শেষের দুটি সংখ্যার সঙ্গে ২০১১ সালে তাদের যে বয়স হবে তা যোগ করলে যোগফল হবে এক এগার (১১১)। উদাহরণস্বরূপ, ধরা যাক কারো জন্ম হয়েছিল ১৯৭০ সালে। সুতরাং ২০১১ সালে তার বয়স হবে ৪১ বছর। তাহলে ৭০ + ৪১ = ১১১।
এতক্ষণ খেতে খেতে আমরা আলাপ করছিলাম। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম দুটি ডিংগো আশে-পাশে ঘোরা-ফেরা করছে। একটি লালচে এবং অপরটি সাদা রং-এর। তাদের দেখে দু-একজন কিছু খাবার ছুঁড়ে মারছে আর তারা তা খাচ্ছে। ওদের দেখাদেখি অভিও কিছু খাবার ছুঁড়ে দিল এবং তারা তা খেল। দেখে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল ডিংগো দুটি বন্য এবং সাদাটি অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই বাচ্চা প্রসব করবে। তাকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছিল। আমাদের দেশে এ রকম সম্পূর্ণ সাদা কুকুর কখনো চোখে পড়ে না। কিছুক্ষণ পর ডিংগো দুটি চলে গেল। আমরাও আমাদের লাঞ্চ সমাপ্ত করলাম। যেখানে লাঞ্চ সারলাম তার পাশেই দেখা যাচ্ছিল একটা ছোট প্লেন দাঁড় করানো। রোড হাউসের একজনকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, সেটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হয়। জনপ্রতি ৮০ ডলার খরচ করে আশে-পাশের নৈসর্গিক দৃশ্যের উপর দিয়ে ৩০ মিনিট উড়ে বেড়ানো যায়। আকাশ থেকে দৃশ্যগুলি দেখার সাধ জাগলেও সাধ্য আর সময়ের অভাবে তা দমন করে ফিরে এলাম গাড়িতে এবং পুনরায় যাত্রা শুরু করলাম।
এখানে বলা দরকার নালারবর শুনে মনে হতে পারে তা কোন আদিবাসীর নামানুসারে রাখা হয়েছে। কারণ অস্ট্রেলিয়ার অনেক স্থানের নামকরণ করা আছে অতীতের প্রসিদ্ধ কোন আদিবাসীর নামানুসারে। আর অনেক আগে থেকেই এ এলাকায় আদিবাসীদের বাস ছিল। কিন্তু নালারবর দুটি ল্যাটিন শব্দ ‘নাল’ এবং ‘আরবর’ এর সমন্বয়ে গঠিত। নাল শব্দের অর্থ ‘নাই’ এবং আরবরের অর্থ ‘গাছ’। কাজেই নালারবরের অর্থ নাই-গাছ বা গাছশূন্য। এলাকাটি বর্ডার ভিলেজ হতে নালারবর রোড-হাউস ছেড়েও বেশ কিছুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। তবে বর্ডার ভিলেজ থেকে নালারবর রোড হাউস পর্যন্ত নাম করণের যথার্থতা খুঁজে পাইনি। কেননা রাস্তার পাশে তো বটেই দূর-দূরান্তেও কিছু বড় বড় গাছ দেখা যাচ্ছিল। আবার রোড ম্যাপে এ অঞ্চলকে প্রকৃত মরুভূমির অংশ বলা আছে। সেটারও কোন গ্রহণযোগ্যতা খুঁজে পেলাম না। কারণ, মরুভূমি বলতে আমরা সাধারণত বুঝিÑ ধূ ধূ প্রান্তর, চারিদিকে শুধু বালি আর বালি, উচ্চ তাপমাত্রা এবং অত্যন্ত শুষ্ক আবহাওয়া। কিন্তু এখানে সবই স্বাভাবিক লাগছিল, পার্থের সাথে কোন রকম তফাৎ খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
যাহোক, মাত্র ১২/১৪ কিলোমিটার এগিয়ে যাওয়ার পর নজরে পড়ল একটা প্রকা- সাইনপোস্ট যাতে লেখা – ‘বাইটের মাথা ® এই পথে ® ১২ কি. মি.।’ অর্থাৎ রাস্তা থেকে সোজা দক্ষিণ দিক (অ্যারো মোতাবেক) সাগর অভিমুখে যেতে হবে ১২ কি. মি.। কোন রকম দ্বিধা না করে গাড়ি চালিয়ে দিলাম সেই পথে।
রাস্তাটা ছিল পাকা, সেটা ধরে কিছুদূর এগিয়েই দেখতে পেলাম বামপাশে একটি ছোট বিল্ডিং। তার সামনে একটি সাইনপোস্টে নির্দেশ দেওয়া আছে টিকিট সংগ্রহের। পাশেই গাড়ি দাঁড় করালাম। গেলাম কাউন্টারে- দেখি একজন যুবক দাঁড়িয়ে। আলাপ প্রসঙ্গে জানতে পারলাম সে এখানকার দায়িত্বে একা এবং কাজ শেষে নালারবর রোড হাউসে গিয়ে থাকে। শুনে অবাক হলামÑ জনমানবশূন্য (অন্তত বার/চৌদ্দ কিমি-র মধ্যে কেউ নেই) এই ধূ-ধূ প্রান্তরে একা! উপরন্ত তার কাছে থাকে নগদ অর্থ, যার তদারককারী তার সততা। সে যাক, আমি তিনটি টিকিটের জন্য চব্বিশ ডলার দিলাম। সে দুটি টিকিট ও আট ডলার ফেরত দিয়ে মুচকি হেসে বলল, তোমার মেয়েকে ফ্রি দেখার সুযোগ দিলাম।
তার অভিব্যক্তি দেখে বুঝতে অসুবিধা হল না যে, বন্ধুসুলভ আচরণের জন্যই এ সৌজন্যতা। তাই তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফিরে এলাম গাড়িতে। কিছুক্ষণের মধ্যে গাড়ি নিয়ে পৌঁছলাম বাইটের মাথা হিসেবে পরিচিত স্থানে। এটি যদিও একটি ক্লিফের মাথায় অবস্থিত তবু কোথাও কোন রকম ঝুঁকি ছিল না। দুই দিকে দুইটা সিঁড়ি নেমে গেছে সৈকতের কাছাকাছি পর্যন্ত মাঝে মধ্যে প্লাটফর্ম আছে, যেখানে দাঁড়িয়ে আশে-পাশের দৃশ্যাবলি অবলোকন করা যায়। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে প্রত্যেক সিঁড়ির দু-পাশে এবং প্লাটফর্মগুলির কিনারায় লোহার রেলিং দেয়া আছে। মধ্য জুন থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত এখানকার সমুদ্রসংলগ্ন এলাকায় এসে ভীড় জমায় এক প্রজাতির তিমি, যা সাউদার্ন রাইট ওয়েল (ঝড়ঁঃযবৎহ জরমযঃ ডযধষব) নামে পরিচিত। এ সময় এখানে আসে মূলত বাচ্চা প্রসবের জন্য। মাঝে মধ্যে একসাথে কয়েকশও দেখা যায়।
অস্ট্রেলিয়ান সরকারের তত্ত্বাবধানে এলাকাটি তিমির অভয়ারণ্য হিসেবে সংরক্ষিত। উল্লেখ্য, এ জাতীয় তিমি প্রায় বিলুপ্তির পথে। সারা দুনিয়ায় আনুমানিক চার হাজার বেঁচে আছে, যার মধ্যে প্রায় আটশত অস্ট্রেলিয়ার আশে-পাশে দেখা যায়। এদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পিঠে কোন ডানা নেই এবং গায়ে লোমের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়, যা মাছ জাতীয় জলজ প্রাণীর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এদের একটা বিস্ময়কর স্বভাব হল মাঝে মধ্যে এক সঙ্গে কিছুসংখ্যক সৈকতে উঠে মরে পড়ে থাকে। জীববিজ্ঞানীগণ এখনো এ ঘটনার কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তবে অনেকে মনে করেনÑ তারা এমনিভাবে হয়ত আত্মহত্যা করে। তাহলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগেÑ তবে কি তাদের মন আছে? এমনতর অনেক রহস্যের সন্ধানে কাজ করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। সাধারণ তিমির মত এরাও স্তন্যপায়ী, বাচ্চা প্রসব করে এবং বাচ্চাকে দুধও পান করায়। ফুলকা না থাকায় পানি হতে দ্রবীভূত অক্সিজেন নিতে পারে না তাই বাতাস থেকে সরাসরি নিশ্বাস নেয় ডাঙ্গায় বসবাসকারী প্রাণীদের মত। সব মিলিয়ে বলা যায় তিমি একটা বিস্ময়কর সৃষ্টি। পানিতে বসবাস করলেও এদের মাছ বলা যায় না। এদের সম্পর্কে আরো কিছু বলা আবশ্যক বোধ করছি। সাধারণত এরা সতের/আঠার মিটার লম্বা হয়। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ওজন প্রায় পঞ্চান্ন আর মহিলাদের পঁচাশি টনের মত। জন্মের সময় বাচ্চাদের দৈর্ঘ্য থাকে প্রায় আড়াই মিটার এবং ওজন এক টনের মত। তিন মাসের মধ্যে এদের ওজন দাঁড়ায় সাত/আট টন। বাচ্চারা শুধু মায়ের দুধ পান করেই বড় হয়। ফলে তিন মাসে মায়েদের ওজন পনের/বিশ টন কমে যায়। আকারে এরা দ্বৈত্যাকার হলেও স্বভাবে কিন্তু অত্যন্ত ভদ্র। এ কারণে এদের বলা হয় সাগরের ফেরেস্তা।
অক্টোবরের মাঝামাঝি বাচ্চাসহ সবাই এ অঞ্চল ত্যাগ করে খাবারের সন্ধানে অন্যত্র চলে যায়। সৌভাগ্যক্রমে আমরা যখন ভ্রমণ করি তখন ওদের বাচ্চা দেবার সময়। কাজেই অনেকগুলিকে দেখতে পেয়েছি। কেউ বাচ্চাসহ ঘুরে বেড়াচ্ছে আবার কেউ বা পানির উপরে লেজ তুলে আছে। কয়েকটি তিমি একদম কিনার ঘেঁষে ছিল। সবাই প্রাণভরে তাদের দেখলাম এবং অভি ভিডিও করে নিল।
একটি প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে চারিদিকে তাকালামÑ সে এক অদ্ভুত দৃশ্য। বাম দিকে যতদূর দৃষ্টি যায় দেখা যাচ্ছিল সেই ধবধবে সাদা বালির ঢিবি। সামনে সাগরের তীর থেকে প্রায় দেড়শ মিটার পর্যন্ত পানির রং সবুজ। তার পরই শুরু হয়েছে ঘন নীল, যা দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত বিস্তৃতÑ যেখানে ঘটেছে আকাশ আর সাগরের মিতালি। দূর হতে ছুটে আসা পানির ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ে ধব ধবে সাদা রং নিয়ে ছিটকে যাচ্ছে। ডান দিকটা যেন ব্যাক্সটার ক্লিফের একটা ছোট সংস্করণ। মনে হচ্ছিল, এ যাবৎ যা কিছু দেখে এসেছি তার শুধু সম্মিলনই নয় কিছু অতিরিক্ত সংযোজনও আছে। আমরা প্রায় চল্লিশ/পঞ্চাশ মিনিট কাটালাম সেখানে। ফেরার পথে লক্ষ্য করলাম একটি পাথর খ-ে খোদাই করে লেখাÑ ‘এই অবস্থান থেকে সোজা দক্ষিণে অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া আর কোন স্থলভূমি নাই।’ এর দূরত্ব ওখান থেকে চার/পাঁচ হাজার কিলোমিটার। তবুও মনের অজান্তে তা দেখার উদ্দেশ্যে তাকালাম সে দিকে। মুহূর্তে নিজের বোকামি বুঝতে পেরে মনকে প্রবোধ দিলাম ‘নাই বা পেলাম দেখতে কিছু, এই যে এমন স্থানে দাঁড়িয়ে সামনে তাকালাম সেটাই বা কম কিসে? এ রকম সুযোগ তো দুনিয়ায় আর কোথাও পাওয়া যাবে না।’