পুঠিয়ায় থেমে নেই ফসলি জমিতে পুকুর খনন

আপডেট: জানুয়ারি ১৬, ২০১৭, ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ

পুঠিয়া প্রতিনিধি



পুঠিয়ার বিভিন্ন স্থানে ফসলি জমিতে শ্রেণি পরিবর্তন ছাড়াই প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পুকুর খননের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রশাসনকে খরচ বাবদ ও এলআর ফান্ডের নামে গোপন চুক্তির মাধ্যমে টাকা জমা দিয়ে অনুমোদন নিয়ে পুকুর খনন করছে যার কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, সরকারি নির্দেশ অমান্য করে কালেক্টর বাহাদুরের অনুমতি ছাড়াই পুঠিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিভিন্ন কৌশলে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে স্কেভেটর মেশিন দিনে পুকুর খনন করছে।
এলকাবাসী জানান, মৎস্য ব্যবসায়ীরা বিলের পানি প্রবাহের স্থানে পুকুরের পাড়ি বেধে বিলের পানি বন্ধ রাখে। যাতে করে বছরের বেশীর ভাগ সময় তারা পুকুরে পানি রেখে মাছ চাষ করতে পারে। এতে করে বিলের বেশীরভাগ এলাকা পানি বন্দি হয়ে ধানসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে যায়। এ সকল পুকুর খননের ফলে কৃষকদের প্রতি বছর লাখ লাখ টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে। অপরদিকে প্রতি বছর পুকুরের পাড়ি ভেঙে পাশ্ববর্তী জমিগুলো বিলিন হয়ে যাবে।
উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নে পমপাড়া মাঠের ৩টি করে  স্কেভেটর  মেশিন দিয়ে পশ্চিম পার্শ্বে রঞ্জু ও রহিম মিলে ৬০ বিঘা জমি এবং পমপাড়া মাঠের পূর্ব পার্শ্বে আলী আহম্মেদ ৮০ বিঘা ফসলি জমিতে পুকুর খনন করছে।
মালিপাড়ায় জমির মোল্লা ৪০ বিঘা জমিতে, রাতুয়ালে জুয়েল ৪০ বিঘা জমিতে, ছাতারপাড়া আক্কাস আলী, মালিপাড়ায় গাফ্ফার আলী, কার্তিকপাড়া (বরবরিয়া স্কুলের পার্শ্বে) বেলাল উদ্দীন, সরগাছী, তেবারিয়া, ফসলী জমিতে ১ ও ২ আবার কোথাও ৩ টি  স্কেভেটর মেশিনের মাধ্যমে দ্রুতগতিতে খনন কাজ চলছে।
শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের পুকুর খননকারীদের মধ্যে সাতঘোষপাড়া পাশাপাশি ২টা স্থানে বাচ্চু ও মহাব্বত জানান, আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে স্কেভেটর মেশিন দিয়ে কৃষি জমিতে পুকুর খনন করছি।
শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের দনকড়ি এলাকায় আওয়ামী লীগের কর্মী আশরাফুল ইসলাম, পমপাড়া মাঠে পুকুর খননকারী রঞ্জু ও রহিম, রাতোয়াল বাজারের পাশের্^ এবং মালিপাড়া মাঠে ফসলি জমিতে পুকুর খননকারী জমির  মেম্বর, খলিশাখড়ি বিলে মিদ্দাদ জানান, আমরা হাইকোর্ট থেকে অনুমোদন নিয়ে এসেছি। সেখানে অনুমোদন নিতে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনকে খরচ বাবদ ৫০ হাজার টাকা ও এলআর ফান্ডে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে অনুমোদন নিয়ে পুকুর খনন করছি। তাই আপনারা লেখালেখি করে কিছুই করতে পারবেন না।
শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ জানান, ফসলি জমিতে পুকুর খননের সাথে আওয়ামী লীগের কোন নেতৃবৃন্দ জড়িত নাই। সাবেক ও বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বারবার অভিযোগ দিলেও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এছাড়া প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে এখানে পরো উদ্যোমে পুকুর খনন কাজ চলছে। কিছু প্রভাবশালী মাছচাষী প্রথমে  বেশী টাকার  লোভ দেখিয়ে কৃষকদের ফসলি জমিগুলো বছর চুক্তি ইজারা নিচ্ছে। আবার ওই পুকুরগুলোর মধ্যে কিছু প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিদের ফসলী জমি প্রভাব খাটিয়ে দখল করার অভিযোগও রয়েছে। শিলমাড়িয়ায় যে ভাবে পুকুর খনন শুরু হয়েছে তাতে করে আগামী কয়েক মাস পর কোথাও ফসলি জমি থাকবে না।
পমপাড়া এলাকার একজন মুরব্বী নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, এই এলাকায় স্থানীয় কিছু লোক ও তাহেরপুর এলাকার লোকের কাছে লিজ দিয়ে পুকুর খনন করছে। আর ইউএনও যদি অভিযানে আসে তাহলে পুঠিয়া থেকে আগেই এই এলাকায় খবর চলে আসে যার কারণে খনন কারীরা পালিয়ে যায়।
অপরদিকে একই উপজেলার দাশমাড়িয়া পূর্বপাড়া আ. মান্নান ও নজরুল ভিন্ন কৌশলে লেবার দিয়ে এছাড়া নয়াপাড়া বাজারের সামাদ স্কেভেটর মেশিন দিয়ে ফসলী জমিতে পুকুর খনন করছেন।
শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন মুকুল জানান, প্রায় ১২টি স্থানে মাঠে স্কেভেটর মেশিন দিয়ে ফসলি জমিতে পুকুর খনন চলছে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হলেও কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় পুকুর খনন দিন দিন বেড়েই চলেছে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ