মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১১ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নগরীর নওদাপাড়া এলাকার নগর মাতৃসদন থেকে নবজাতকটি চুরির উদ্দেশ্য পুলিশের কাছে প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকপতিœ শাহিন আক্তার শুভ্রা। তিনদিনের রিমান্ডে পুলিশের কাছে তিনি স্বীকার করেছেন সংসার টেকাতেই নবজাতকটিকে তিনি চুরি করেছেন। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহ মখদুম থানার এসআই মতিয়ার রহমানের সঙ্গে কথা বলে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বুধবার তিনদিনের রিমান্ড শেষে শুভ্রাকে আদালতে হাজির করা হয়। সংশ্লিষ্ট আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। দৈনিক সোনার দেশে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৯ জানুয়ারি নওদাপাড়ার নগর মাতৃসদন আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ারে জন্মের পরপরই নাবজাতকটি চুরি যায়। এই ঘটনা নগরীতে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। সংবাদ মাধ্যমগুলোও ফলাও করে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করতে থাকে। ঘটনার আট দিন পর ২৭ জানুয়ারি নগরীর টিকাপাড়ার একটি বাড়ি থেকে নবজাতকটিকে উদ্ধার করা হয়। এসময় ঘটনার সঙ্গে জড়িত শাহীন আক্তার শুভ্রা নামে এক নারীকে আটক করে পুলিশ। এর আগে ২০ জানুয়ারি শাহমখদুম থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করলে মানব পাচার দমন ও প্রতিরোধ আইন ২০১২ এ মামলা হিসেবে রুজু হয়।
নবজাতক তার মায়ের কোলে ফিরে গেছে এটা একটি স্বস্তির খবর। আর অস্বস্তি হলো যে, অসতর্ক হলে নবজাতক চুরি হয়ে যেতে পারে। কিন্তু যে নারী সন্তান চুরি করেছে তার কারণ হিসেবে তিনি যে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন তা রীতিমত উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার। কথিত ভদ্র ও শিক্ষিত নামধারী পরিবারে কী ভয়ঙ্কর অশ্লীলতা, নিষ্ঠুরতা বিরাজ করছে গ্রেফতার শুভ্রার স্বীকারোক্তি সেই সাক্ষ্য দেয়। একবিংশ শতকে বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার যুগে পুত্র সন্তানের জন্য এ ধরনের বিবেকহীনতা, নিষ্ঠুরতা আমাদেরকে হতবাক করে। আর এটা যদি উচ্চশিক্ষিত লোকেরা করে তখন বাকরুদ্ধ হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। তবে এটাই দেশের সমাজ ব্যবস্থায় নিরেট বাস্তবতা। এক সমীক্ষা মতে শহরের ৮০ শতাংশ নারী শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিত হয়।
শুভ্রার স্বীকারোক্তি মতে তিনি যখন সর্বশেষ গর্ভধারণ করেছিলেন তখনও আল্ট্রাসনো করে গর্ভে মেয়ে সন্তানের খবর জানতে পারেন। ফলে স্বামীর সঙ্গে তার দাম্পত্য কলহ চরমে পৌঁছে। এ কারণে গত আট মাস ধরে তার স্বামী বাড়িতে আসতেন না। তাই তিন মাস আগে তিনি আবার গর্ভপাত ঘটান। কিন্তু স্বামীর কাছে তিনি বিষয়টি গোপন রাখেন। এরপর তিনি একটি ছেলে সন্তান চুরির পরিকল্পনা করেন। দীর্ঘ প্রস্তুতির পর মুক্তির বাচ্চা চুরির পর শুভ্রা তার স্বামীকে জানিয়েছিলেন, তিনি একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। এভাবে তিনি তার সংসার রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন।
শুভ্রার মত অসহায় নারীর সংখ্যা এ দেশে নেহাতই কম নয়Ñ এরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। পরিবারের স্বার্থে, দাম্পত্যজীবন টিকিয়ে রাখার স্বার্থে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ‘বিধাতার লিখন’ হিসেবে মেনে নিতে হয়। আর স্বামী বা স্বামীর পরিবারের চাহিদা মেনে নিতে অনেক সময় নারীরা অপরাধমূলক কর্মকা-েও জড়িয়ে পড়তে হয়। সমাজের এই চিত্রটি খুবই নির্মম। নারীই এ ক্ষেত্রে সবদিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নারীর প্রতি ক্রমাগত নির্যাতনের সংস্কৃতি গড়ে তুলে আমাদের অসভ্য ও বিকৃতি চেহারার প্রকাশ ঘটিয়েই চলেছি। লিখাপড়া শিখেও পরিশুদ্ধ হওয়া যাচ্ছে না। পরিবারগুলো সত্যিকার অর্থেই পরিবার হয়ে উঠছে না। সেখানে শান্তির স্থানে অশান্তি, নির্যাতন, বঞ্চনা আর অন্যায্যতার কাহিনী তৈরি হয়। এটি সমাজের নিরব অস্থিরতার এক ভয়ঙ্কর চিত্রই বটে।
সন্দেহ নেই পুত্র সন্তানের আশে, দাম্পত্য জীবন টিকিয়ে রাখার স্বার্থে শুভ্রা যা করেছে তা আইনের চোখে অপরাধ। কিন্তু এই অপরাধে প্ররোচিত করাটাও অপরাধ। শুভ্রার স্বাকারোক্তি যাচাই করে এর সত্যতা মিললে প্ররোচণাকারীকেও আইনের আওতায় আনা বাঞ্ছনীয় হবে।