শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
সাজিদ রহমান:
সম্প্রতিকাল থেকে শুরু হয়েছে। কেউ আমাকে ফোন দিলে কিংবা আমি কাউকে ফোন দিলে শুরুতেই একটা কাজ করছি। কিংবা কাজটা করতে বাধ্য হচ্ছি। কল কল রিসিভ হওয়ার সাথে বলতে হচ্ছে, আপনি সঠিক লোকের সাথেই কথা বলছেন। আমি সেই সাজিদ, যে সাজিদকে কল দিয়েছেন। কসম বাংলার মাটি! ভয় পেয়েন না।
অনেক সময় এমনও হচ্ছে, নিজের পরিচয় দেয়ার সুযোগও পাচ্ছি না। তার আগেই কেউ কেউ বেশ খানিকটা ভড়কে যাচ্ছেন। কি বলবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না। কি যে মুশকিল! মুশকিলটা ঠিক কোন পক্ষের তা তৃতীয় পক্ষ দ্বারা নির্ধারণ করা যেতে পারে! তবে স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, ঘটনাটা সাময়িক। সেটা দূরীকরণে এলাচ, আদা, লবঙ্গ, তেজপাতার সাথে হালকা করে লেবুর রসে গরম পানির থেরাপি চলছে। আপনারা বেশ অধৈর্য হয়ে পড়ছেন। এবার ঝেড়ে কেশে ঘটনার আদ্যোপান্ত জানাই। গত পরশুদিন সকালে ঠান্ডা লেগে কণ্ঠস্বর পুরাই ‘আলঝালিখাল্লা’ হয়ে গেছে। এখন যদি আলঝালিখাল্লার অর্থ জানতে চান তাহলে চুপ থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই। কারন শব্দটা মাত্রই আবিষ্কার করলাম। এর অর্থ এখনও ঠিক হয়নি।
বর্ষার দিনে সন্ধার দিকে চারিদিক থেকে নানাবিধ শব্দ আসা যাওয়া করে। এর মধ্যে ব্যাঙের চেঁচামেচিটাই বেশি। অন্ধকারে ঢোড়াসাপ ওত পেতে থেকে সেই শব্দ শোনে। তারপর সুযোগ বুঝে বড় কোলাব্যাঙ শিকার করে। কিন্তু ব্যাঙের ওভার সাইজের জন্য পুরোপুরি পেটে চালান দিতে পারে না। ঐ সময় জীবন বাঁচাতে সেই ব্যাঙ এক ধরনের শব্দ করে থাকে। শব্দটা ঠিক কেমন তা এখানে লিখে বোঝাতে পারবোনা। তবে এটুকু বলতে পারি, সেই শব্দে বেশ তীক্ষ্ণতা থাকে, থাকে বাচার আকুতি। সব মিলিয়ে সেটা বেশ করুন প্রকৃতির হয়। যদি গ্রামে থাকার কিংবা যাতায়াতের অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে বেশ মিলাতে পারবেন। আমি বলতে চাচ্ছি, ঐ শব্দটাই আলঝালিখাল্লা। আমার কন্ঠের অবস্থাও ঢােড়া সাপের অর্ধেক পেটে যাওয়া কোলাব্যাঙের সেই শব্দের মত হয়েছে। মানে আলঝালিখাল্লার মত।
প্রমাণও পেলাম একটু আগে। বাসায় কথা বলছিলাম। সাফিন ও ওর মা বিষয়টা বুঝে চেপে গেছে। কিন্তু মা জননী সাফিয়া? সে আমার আলঝালিখাল্লা শুনে হেসে একদম লুটোপুটি। কথা আর বাড়ালাম না। পরে না আবার হাসতে হাসতে হুটোপুটি লেগে যায়। অনেক সময় অধিক হাসিতে পেটে খিল ধরে যায়। সেটা আবার আরেক মুশকিলের জন্ম দিতে পারে। কথা শেষ করে এলাচ, আদা, লবঙ্গ, তেজপাতার পানির সাথে হালকা করে লেবুর রসে গরম পানি মিশিয়ে ফের খেতে লাগলাম। সাথে সুধীজনের জন্য একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি রয়েছে। এই স্টাটাস পড়ে আলঝালিখাল্লা প্রমাণ করার জন্য কেউ কল দিয়েন না। যদি প্রমাণ পাই সেই জন্য কল দিয়েছেন, তাহলে দেশের একটি বেসরকারি টিভির মালিকের গাওয়া গানের রেকর্ড শুনিয়ে দেবো। মাইরি বলছি।
অশুভ আলঝালিখাল্লার মাঝে শুভ হোক গোটা রাত্রি। (এই লেখাটা বন্ধু এম এম হাসিবকে উৎসর্গ করছি। বিজিতের পলায়নবিদ্যার প্রচারনায় এরকম লেখা আসছেনা বলে সে হালকা অনুযোগ করেছিলো। আর সেখান থেকেই এই আলঝালিখাল্লা চলে আসলো।
লেখক : নির্বাহী প্রকৌশলী, সড়ক বিভাগ, নওগাঁ।