পুলিশ ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান রাবি সমন্বয়কের

আপডেট: অক্টোবর ২০, ২০২৪, ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ


রাবি প্রতিবেদক :


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদদের মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত সরকারি কোনো আমন্ত্রণ গ্রহণ করবেন না বলে জানিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অন্যতম সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার। ৪০তম বিসিএসে নিয়োগপ্রাপ্ত ৬২ জন পুলিশ ক্যাডারের (এএসপি) প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে শনিবার (১৯ অক্টোবর) এমনটি জানিয়েছেন তিনি।

পুলিশ বাহিনীর সংস্কার না হওয়া, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ক্যাডার বানানোর অভিযোগসহ শহিদদের হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনো সরকারি আমন্ত্রণে অংশগ্রহণ করবেন না বলে ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন এই সমন্বয়ক।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডি থেকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “দাওয়াতটা স্বজ্ঞানে প্রত্যাখ্যান করছি। প্রথম কারণ এই ৬২ জন এএসপি হাসিনার আমলে নির্বাচিত হয়েছে। আর কত চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বিসিএস (পুলিশ)-এ নিয়োগ হতো, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

ব্যক্তি আমার জায়গা থেকে তাই উক্ত প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার পক্ষপাতী নই। তাদের ব্যাপারে তদন্ত হয়েছে কিনা! দ্বিতীয়ত, পুলিশ বাহিনীতে এখনো কোনো সংস্কার হয়নি। অপরাধীরা এখনো ধরা পড়েনি। তাই আমি শহীদের রক্তের সাথে বেইমানি করে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের বৈধতা দিতে পারি না।

দাওয়াতের কার্ডটা নিয়ে আপনাদের কাছে দেখানোর উদ্দেশ্য ছিল মামলার নাম ঠিকানায় দাওয়াত পাঠিয়েছে এটা দেখানো। আমি নিতান্তই একজন নগণ্য মানুষ কিন্তু আমার এথিক্স স্পষ্ট, আমার শহীদ ভাই আলী রায়হান, সাকিব আঞ্জুমসহ সকলের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমি সরকারি কোনো দাওয়াত গ্রহণ করব না।”

এ বিষয়ে সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, আমরা জানতে পেরেছি কোনোরকম তদন্ত ছাড়াই আওয়ামী লীগের দোসরদের এএসপি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের ভাইদের মৃত্যুর মিছিল এখনো চলছেই। এমতাবস্থায় এই দোসরদের নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া মানে শহিদদের রক্তের সাথে বেইমানি করা। তাই আমি উক্ত অনুষ্ঠানের একজন আমন্ত্রিত অতিথি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক হিসেবে এই অনুষ্ঠান প্রত্যাখ্যান করলাম।

অপরাধীদের শাস্তির বিষয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী শাসনামলে প্রশাসনে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতিসহ নানা অনিয়ম করে অবৈধভাবে নিয়োগের সুষ্ঠু তদন্ত করার পাশাপাশি আন্দোলনের সময় প্রশাসনের যারা অপরাধ করেছিল, তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে ৪০তম বিসিএসের পুলিশ ক্যাডারদের এই প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ আজ রোববার (২০ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও, তা স্থগিত করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি মিডিয়া জানিয়েছেন, অনিবার্য কারণবশত ৪০তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের রোববারের সমাপনী কুচকাওয়াজ হচ্ছে না। এই অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা সারদা পুলিশ একাডেমিতে অবস্থান করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৬২ জন পুলিশ ক্যাডারকে ছাত্রলীগ আখ্যা দিয়ে তাদের নিয়োগ নিয়ে ইউটিউব, ফেসবুকসহ অনলাইন মিডিয়াতে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনার ছাত্রলীগের ক্যাডারদেরকে কীভাবে বর্তমান সরকার সমাপনী পর্ব শেষে পুলিশ বাহিনীতে যোগদানের সনদ দিচ্ছে, তা নিয়ে বিরুপ প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে।

নেটিজেনরা বলছেন, সরকারের উচিত ছিল এই ৬২ জনের খোঁজ খবর নিয়ে তারপর প্রশিক্ষণ সমাপণী অনুষ্ঠানে যোগদানের অনুমতি দেয়া। তা না হলে এরা পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করে জনগণের পক্ষে নয়, হাসিনার পক্ষেই কাজ করবে। এই বির্তকের মধ্যে শেষ মুহূর্তে এসে এই অনুষ্ঠান বাতিল করা হল

জানা গেছে, ৪০তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের এসব কর্মকর্তা ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর সারদা পুলিশ একাডেমিতে যোগদান করেন। অভিযোগ রয়েছে, হাসিনা সরকার তিনটি ক্যাটাগরিতে ৪০তম বিসিএস থেকে প্রার্থী নির্বাচন করে। এগুলো হলো ছাত্রলীগ, গোপালগঞ্জের বাসিন্দা এবং দলীয় ক্যাডার।

সে সময় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও অনেকেই বাদ পড়েন শুধুমাত্র এসবি এবং এনএসআই-এর রিপোর্টের কারণে। আওয়ামী লীগ না করলে কাউকেই নিয়োগ দেওয়া হয়নি। একই সাথে ফলাফল যত ভালোই হোক, পরিবারের কেউ বিএনপি অথবা জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ