মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
দিনাজপুর প্রতিনিধি
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জঙ্গি এবং মাদক বড় চ্যালেঞ্জ। এই দুইটিকে নির্মূল করার জন্য পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই জঙ্গি দমনে যথেষ্ট সাফল্য অর্জিত হয়েছে। দেশের জনগণ ও কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সহায়তায় সারা দেশ থেকে জঙ্গি দমন ও মাদক নির্মূল করা হবে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
গতকাল শনিবার দুপুর ১২টায় দিনাজপুর গোর-এ শহীদ ময়দানে কমিউনিটি পুলিশিং সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক একথাগুলো বলেন।
তিনি আরো বলেন, এ পর্যন্ত যতগুলো জঙ্গি ধরা পড়েছে এবং যারা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে তাদের অধিকাংশই উত্তরাঞ্চলের। উত্তরাঞ্চলের ২টি বিভাগ রাজশাহী ও রংপুর রেঞ্জের মধ্যে জঙ্গির তৎপরতা যে কোন কারণেই হোক বেশি করে মাথা চাঁড়া দিয়েছে। রংপুর রেঞ্জের ৮টি জেলার মধ্যে দিনাজপুরে বেশ কিছু অঞ্চলে জঙ্গির আস্তানা রয়েছে। যেগুলো পুলিশ প্রশাসন অভিযান চালিয়ে তাদের দমনে সচেষ্ট রয়েছে। তবে জঙ্গি দের মেরুদ- অনেকাংশই ভেঙে গেছে। কিন্তু তাদের অস্তিত্ব রয়েছে। জঙ্গিরা যাতে পুনরায় সুসংগঠিত হয়ে দেশের ক্ষতি করতে বা নাশকতা কর্মকা- চালাতে না পারে এর জন্য পুলিশ প্রশাসনকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
একেএম শহীদুল হক বলেন, একইভাবে মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে প্রত্যেক পরিবারকে তাদের সন্তানের প্রতিদিনের কর্মকা- দেখাশুনার জন্য সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। স্কুল-কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের মাদকমুক্ত সমাজ ও জীবন গড়তে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মধ্যে পাঠদান করতে হবে। তবেই যুব সমাজকে মাদকমুক্ত করা সম্ভব হবে। আইন প্রয়োগ করে কোন ভাবেই মাদক বিক্রেতাদের দমন করা সম্ভব নয়। মাদক বিক্রেতাদের উদ্বুদ্ধ করে তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে এই খারাপ কাজ থেকে নিভৃত করতে হবে। তবেই মাদক সেবন ও বিক্রি রোধ করা সম্ভব হবে। দেশের কল্যাণে সকলকে এগিয়ে এসে জঙ্গি ও মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, ২০১৩ থেকে ১৫ সাল পর্যন্ত হিংসাত্মক কর্মকা-ে ১৬ জন পুলিশে হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি নেই যে রাজনৈতিক কর্মকা-ে পুলিশকে টার্গেট করা হয়েছে। আগামীতে এ ধরনের কর্মকা- যারা সৃষ্টি করতে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সমাবেশে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মো. হামিদুল আলমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম, কমিউনিটি পুলিশিং জেলা শাখার আহ্বায়ক ডা. শহীদুল ইসলাম খান, সদস্য সচিব গোলাম নবী দুলাল, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আনোয়ারুল ইসলাম, কোতয়ালী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ ঘোষ কাঞ্চন, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ১৩টি উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দসহ প্রমুখ।
সভা শেষে দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলার ১৭৬ শতাধিক মাদক বিক্রেতাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে শপথবাক্য পাঠ করান মওলানা জামাল উদ্দীন আহমেদ। আইজিপি একেএম শহীদুল হক তাদের স্বাবলম্বী করতে ১৭৬ জনকেই সেলাই মেশিন ও ভ্যান গাড়ি প্রদানে সহায়তা করা হয়। সমাবেশে প্রায় ২৫ হাজার কমিউনিটি পুলিশিং সদস্য ও মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
এর আগে ৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি পুলিশ ফাড়ি ও নারী পুলিশ ব্যারাক উদ্বোধন করেন আইজিপি একেএম শহীদুল হক।