রবিবার, ২৬ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১২ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ অফিস
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থানায় পুলিশি হেফাজতে রিমান্ডে নেয়া আসামি মাহফুজুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনায় থানার ওসিসহ আট জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত মাহফুজুর রহমানের বড় ভাই শাহিনুর আলম বাদী হয়ে গতকাল রোববার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে ২০১৩ সালের হেফাজত মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন, নাচোল থানার ওসি আনোয়ার হোসেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবদুল বারিক, এসআই আহসান হাবিব, ঘটনার দিনের ডিউটি অফিসার এসআই জহুরুল, এএসআই সামসুল, ডিউটিরত কনস্টেবল চাঁনজারুল, রিমান্ডে নেয়া মামলার বাদী নাসির উদ্দিন এবং তার ভগ্নিপতি জাফর ইকবালসহ অজ্ঞাত আরো কয়েকজন।
দায়েরকৃত এই মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আকরামুল ইসলাম জানান, মামলাটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরিফুল ইসলাম। এছাড়া বিষয়টি পুলিশের আইজি ও রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজিকে অবহিত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, মাহফুজুর রহমানকে রিমান্ডে নেয়ার পর পুলিশ তার ভাইয়ের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করে, কিন্তু ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়। বাকি টাকা নিয়ে যথাসময়ে থানায় হাজির হতে না পারায় আসামির উপর শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনে মাহফুজুর রহমান মারা যায়। পরে পুলিশ তার লাশ হাজতখানার টয়লেটে ঝুলিয়ে মাহফুজ আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করে।
মামলার বাদী শাহিনুর আলম জানান, বিষয়টি নিয়ে নাচোল থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা গ্রহণ করে নি। তাই বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন তিনি। তিনি এই মামলার ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করেন।
এর আগে গত ২৬ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থানায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু হয় রিমান্ডের আসামি মাহফুজুর রহমানের। ভুয়া চিকিৎসক সেজে নাচোলের একটি ক্লিনিকে এক স্কুলছাত্রীর অপারেশন করে তাকে হত্যার দায়ে গত ১৯ জুলাই মাহফুজুরকে গ্রেফতার করা হয়। এই মামলায় গত ২৫ জুলাই তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নেয় নাচোল থানা পুলিশ।
নাচোল থানার ওসি আনোয়ার হোসেনের দাবি, ২৬ জুলাই দুপুর সোয়া একটার দিকে থানার পুরুষ হাজতখানার টয়লেটে নিজের প্যান্ট ছিড়ে দরজার ফাঁকা বিমে ঝুলে আত্মহত্যা করে আসামি মাহফুজুর রহমান। পরে টয়লেটের দরজা ভেঙে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে পেটে ব্যাথায় আক্রান্ত নাচোল উপজেলার জাহিদপুর গ্রামের নাসির উদ্দিনের মেয়ে নাহিদাকে গত ১৭ জুলাই জননী ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ওইদিন এইচএসসি পাস করা ভুয়া ডাক্তার মাহফুজুর রহমান তার অপারেশন করেন। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে ১৯ জুলাই মারা যায় নাহিদা। এই ঘটনায় ওই দিন রাতে ভুয়া চিকিৎসক মাহফুজুর রহমানকে গ্রেফতার করে পুলিশ।