পূজায় ক্রিকেটকে প্রেরণা দিতে বাঘের প্রতীক

আপডেট: অক্টোবর ১০, ২০১৬, ১১:৫০ অপরাহ্ণ

rajphoto-10-10-16-copy-01
শামীউল আলীম শাওন

 
কাঠ ও শলাকা দিয়ে নির্মিত একটি বিশালাকৃতির বাঘের মুখাবয়ব। ওই মুখের ভেতর দিয়ে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে লোকজন ভেতরে ঢুকে পূজা-অর্চনা করছেন আবার বাহির হচ্ছেন। এটা নগরীর রাণীবাজার রেশমপট্টির রাস্তার ওপর নির্মিত পূজা ম-পের চিত্র। বাইরে আলোকসজ্জা।

 

 

 

বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দিতে ও সুন্দরবন বাঘ নিধন বন্ধের দাবিতে এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ওই এলাকার ‘টাইগার সংঘ’ নামের একটি সংগঠন। তারা ৩৫ বছর ধরে পূজা উৎসব করছেন।

 
উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, টাইগার সংঘ গত ৩৫ বছর ধরে নগরীতে দুর্গোৎসব উদযাপন করছেন। যার মধ্যে তারা একটানা ১২ বছর রাণীবাজার রেশমপট্টির রাস্তায় পুজার ম-প তৈরি করে পূজা উদযাপন করছেন। এরপর জায়গা সংক্রান্ত সমস্যার কারণে তারা মাঝে ২২ বছর রাণীবাজার মাদ্রাসার পেছনে তারা পুজার ম-প তৈরি করে পূজা উদযাপন করেন। তবে এবছর রাণীবাজার রেশমপট্টির রাস্তা সম্প্রসারণ করায় আবারো তারা এ রাস্তায় ম-প করে পূজা উদযাপন করছেন। এ পূজা ম-প তৈরিতে খরচ হয়েছে ৬ লাখ টাকা।

 
গতকাল সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ম-পের সামনে অগণিত ভক্ত। কেউ কেউ ভিতরে গিয়ে পূজা-অর্চনা করছেন, অনেকে আবার ম-পের সামনে দাঁড়িয়ে তুলছেন সেলফি। আর সেগুলো পোস্ট দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। পাশেই বাজছে ঢোল-বাদ্যি। বাজছে সঙ্গীত।
টাইগার সংঘের সাধারণ সম্পাদক পার্থ পাল চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সোনার দেশকে বলেন, ‘আমাদের টাইগার সংঘের নাম অনুযায়ী পুজা ম-পের নাম রাখা হয় ‘টাইগার’। এ টাইগার আমাদের দেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রতীকী নাম। তাই বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের সকল খেলোয়াড় ও ক্রিকেট অনুরাগীদের উৎসাহিত করতে এবার আমাদের পুজা ম-পকে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের মনোগ্রামের আদলে ‘বাঘ আকৃতি’তে সাজানো হয়েছে।’

 
টাইগার সংঘের সাধারণ সম্পাদক পার্থ পাল চৌধুরী সোনার দেশকে আরো বলেন, ‘ক্রিকেট দলকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি আরো একটি উদ্দেশ্য রয়েছে সেটা হলো প্রতীকীভাবে সুন্দরবনের বাঘ নিধনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বাঘ রক্ষার দাবি জানানো। যাতে বনের মধ্যে বাঘ স্বাভাবিকভাবে বসবাস ও অবাধ বিচরণ করতে পারে।’

 
তাদের এ উদ্যোগ রঙ দেখিয়েছে। মন্দিরের প্রতিমা দেখতে আসা দর্শনার্থী ও রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী সকলের নজর কেড়েছে। সকলে ম-পের সামনে গিয়ে ম-পের ছবি তোলার সঙ্গে সঙ্গে তারা তুলছেন সেলফি। আর সেগুলো পোষ্ট দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। আর ফেসবুকের মাধ্যমে সেগুলো ছড়িয়ে যাচ্ছে বিশ্বব্যাপী।

 
তাদের এ ম-প তৈরি ও সম্পূর্ণ দুর্গোৎসবের আয়োজনে ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টাকা। টাইগার সংঘের নিজস্ব অর্থায়নে এ আয়োজন করা হয়েছে। তাদের ম-পের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি নিয়োজিত রয়েছে টাইগার সংঘের ২০ থেকে ২৫ জন নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবী। ম-পে স্থাপন করা হয়েছে চারটি অত্যাধুনিক ক্লোজসার্কিট (সিসি) ক্যামেরা। এছাড়াও ম-পে রয়েছে পর্যাপ্ত আলো, প্রবেশের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষদের পৃথক প্রবেশ পথ ও টয়লেটের ব্যবস্থা।

 
এ বিষয়ে টাইগার সংঘের সাধারণ সম্পাদক পার্থ পাল চৌধুরী সোনার দেশকে আরো বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে প্রতিবছর আমরা এ পূজার আয়োজন করে থাকি। এবছর পূজার আয়োজনে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। ম-পের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি আমাদের পক্ষ থেকে রয়েছে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবী। আর স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরাও।’

 
আগামিতে আরো বড় ধরনের আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। যেখানে তারা আরো নিত্যনতুন কিছু তুলে ধরবে এবং রাজশাহীর বাইরের শিল্পীদের এনে সাংস্কৃতিক আয়োজনের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।

 
এ বছর ‘টাইগার’ নামে দুটি পূজা ম-প হয়েছে নগরীতে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে টাইগার সংঘের সাধারণ সম্পাদক পার্থ পাল চৌধুরী সোনার দেশকে বলেন, ‘যেহেতু প্রায় ২২ বছর রাণীবাজার মাদ্রাসার পেছনে আমরা টাইগার নামে ম-প করে দুর্গোৎসব উদযাপন করেছি। সেহেতু ওইখানের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ‘টাইগার’ নামটা পছন্দ হওয়ায় সেই নামেই ম-প করে ওই খানে দুর্গোৎসব উদযাপন করছে। এতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। আমরা চাই ‘টাইগার’ নামটা ছাড়িয়ে যাক।’