পৃথিবীর বিষাক্ত এলাকা

আপডেট: জানুয়ারি ১৭, ২০১৭, ১২:০২ পূর্বাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক



গত একশ’ বছর ধরে মানব সভ্যতা অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় আমাদের জীবন এখন অনেক সহজ ও আরামদায়ক। যাকে আমরা উন্নত সভ্যতা হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকি। তবে এই উন্নতির অন্ধকার দিকও আছে। উন্নতির ছোঁয়া সব জায়গায় লাগে নি। মানব কর্তৃক বৈশ্বিক পরিবর্তনের এই ধারায় কোথাও উন্নতি ঘটেছে। আবার কোথাও ভয়ঙ্কর রকম ক্ষতিও হয়েছে। তেমনই কিছু বিষাক্ত এলাকা নিয়ে এই আয়োজন।
চেরনোবিল, ইউক্রেন: শহরটিতে অবস্থিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১৯৮৬ সালে বিস্ফোরণ ঘটে। স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক সেই দুর্ঘটনার ফলে বাতাসে ছড়িয়ে পড়া তেজস্ত্রিয়তা ইউক্রেন, বেলারুশ, রাশিয়্ াও পূর্ব ইউরোপের স্ক্যান্ডনেভিয়াতেও পৌছায়। মানুষের আধুনিকতার জেরে চেরনোবিল বর্তমানে ভূতুরে শহর। প্রায় ৫০ মাইল এলাকায় মানুষের বাস পর্যন্ত নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের বিষাক্ত খাল: দূষণের তালিকা থেকে বাদ নেই যুক্তরাষ্ট্রও। লাভ ক্যানেল, নিউইয়র্ক, টার ক্রিক, ওকলাহোমাসহ বেশ কিছু এলাকার খালে দূষণ ছড়িয়ে পড়ায় চরম বিষাক্ত ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বলা হচ্ছে, হাইড্রোলিক ব্যবস্থার ত্রুটি দেখা দেয়ায় ঐ অঞ্চলের পানি এবং বায়ু বিষাক্ত হয়ে ওঠছে।
লিনফেন, চিন : বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর বলা হয় একে। লস এঞ্জেলেসের বাতায় ভারী হলেও লিনফিনের তুলনায় নস্যি। মূলত কয়লা খনি ও মাত্রাতিরিক্ত কলকারখানা গড়ে ওঠা, সেই সাথে পণ্য উৎপাদনকালে সৃষ্ট বর্জ্য ও ধোঁয়ার প্রভাবে লিনফেন’র এই পরিণতি। শহরের বায়ুম-ল এতোটাই বিষাক্ত যে ভেজা কাপড় রোদে দিলে শুকানোর আগেই তা কালো হয়ে যায়।
গ্রেট প্যাসিফিক গার্বেজ প্যাচ: এক কথায় বলা যায় প্রশান্ত মহাসাগরের ঘুর্ণিবলয়ে আটকে থাকা ভাসমান ময়লার গিঁট। আমাদেরই ফেলে দেয়া ময়লা আবর্জনা থেকেই মহাসাগরে এর সৃষ্টি। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে খাল-বিল, নদী-নালা হয়ে ময়লাগুলো সাগরে এসে পড়ে। সে সব ময়লাই স্রোতের টানে একসময় প্রশান্ত মহাসাগরের ঘূর্ণিবলয়ে আটকে থাকে। আর এভাবেই সৃষ্টি ময়লার এত বড় ভাসমান পর্বতের। মহাসাগরের বিশাল এলাকা জুড়ে থাকা ময়লাগুলোর বেশিরভাগই প্লাস্টিক ও রাসায়নিক বর্জ্য। সাধারণত কেউ ঐ অঞ্চলে যায় না, স্যাটেলাইটের কোন পরিস্কার ছবিও নেই। তবে এটুকু জানা গেছে, আয়তনে ময়লার স্তুপটি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের দ্বিগুণ। ময়লার গভীরতা হবে ত্রিশ ফুট।
রনডোনিয়া, ব্রাজিল: ব্রাজিলের একটি প্রদেশ রনডোনিয়া। আমাজন বনের পাশ্ববর্তী প্রদেশটিতে দাবানল আর বনাঞ্চল কাটার ফলে এখন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে। সবুজ হারিয়েছে প্রদেশটি ধুসর বর্ণে পরিণত হয়েছে।
যমুনা নদী, ভারত: ভারতের রাজধানী দিল্লি ও তার আশপাশ দিয়ে বয়ে চলা বিশ্বের অন্যতম দূষিত নদী এটি। পৌরানিক ও ঐতিহাসিক দিক থেকে পরিচিত প্রেমের নদী যমুনার পানি এখন পুরোপুরি বিষাক্ত। সম্রাট শাহজাহানের প্রেমের স্মৃতি বিজড়িত নদীটি এখন মরতে বসেছে। পানি যা আছে তা এত বিষাক্ত যে পান করা দূরে থাক, গোসল কিংবা কাপড় কাচাও বিপদজনক। যমুনার দুপাশে গড়ে ওঠা কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়। সেই সাথে মানুষ ও গবাদি পশুর মলমূত্র, নর্দমার পানি ও প্লাস্টিক এবং চাষাবাদের কীটনাশক পদার্থ নদীর দূষণের মাত্রা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। নদীর পানিতে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়ায় মাছ কিংবা জলজ প্রাণী বিলুপ্তির পথে। অভিযোগ আছে, দিল্লি শহরের ৬০ ভাগ বর্জ্য এই নদীতেই ফেলা হয়।