নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামি কয়েকদিন পরই উপস্থাপন হতে যাচ্ছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট। জাতীয় সংসদে এই বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের বিভিন্ন মত রয়েছে। তাদের মতে বাজেটে জনগণকে প্রাধান্য দিয়ে করতে হবে। বাজেট প্রণয়ন এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে যায়।
‘কেমন বাজেট চায়’ এমন প্রশ্নকে সামনে রেখে রাজশাহীতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সমাজ বিশ্লেষক, চাকরিজীবী, কৃষক, দিনমজুরের সাথে কথা বলা হয়েছে। তারা নিজ নিজ জায়গা থেকে বাজেট বিষয়ে মত প্রকশ করেছেন।
এরমধ্যে বাজেটের বিষয়ে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল শোয়েব বলেন, পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে মূলত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পড়তে আসে। বিশ^বিদ্যালয়ের মূল সমস্যা থাকে আবাসনের। প্রতিটি বিশ^বিদ্যালয়ের আবাসন সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষার মানও বৃদ্ধি করতে হবে। বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য বেশি বাজেট রাখতে হবে।
নগরীর একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে চাকরি করেন ফাহাদ চৌধুরী। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের মতো সরকারি চাকরীজীবীরাও ভালো নেই। বর্তমান সরকার জনবান্ধব। বাজেটে জনগণকে প্রাধান্য দিলে ভালো হবে। বাজেট প্রণয়ন এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে যায়।
কৃষক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, জমিতে ফসল চাষে সবকিছুই কিনতে হয় চাষীদের। বর্তমান সময়ে সার ও কিটনাশকের দাম বেশি। কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কিন্তু সেইভাবে আমাদের উৎপাদিত ফসলের দাম বাড়েনি। তবে আমাদের ফসল দিয়ে উৎপাদিত পণ্যের দাম বেড়েছে। সেই জায়গা থেকে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত। আসলে ফসল উৎপাদন করে তেমন লাভ হয় না। আমাদের প্রত্যাশা আগামি বাজেটে কৃষি প্রণোদনা বাড়াতে হবে। ফসল চাষের কাজে ব্যবহৃত সবকিছুর দাম কমাতে হবে। সার, কিটনাশকের দাম কমলে উৎপাদন খরচ কমে যাবে। এতে করে চাষীরা ফসল ফলিয়ে লাভবান হবেন।
অটোরিক্সা চালক শামসুল হক বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম বেড়েছে। আমারা রিক্সা চালিয়ে যে উপার্জন করি তা দিয়ে সংসার চলে। তবে খুব ভালোভাবে সংসার চলে না। কারণ সব কিছুর দাম বেশি। তাই আমরা চাই বাজেটে খাদ্য সামগ্রীর দাম যেনো কমায় সরকার। এতে করে আমরা নি¤œ আয়ের মানুষগুলো ভালো থাকব।
বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও রাজশাহী মহানগর সভাপতি ওহিদুর রহমান ওহি বলেন, অন্য দেশের তুলনায় শিক্ষায় আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। বিশ^বিদ্যালয় বা কলেজগুলোতে বাজেট খুব অল্প থাকে। পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে বাজেট বাড়াতে হবে। একই সাথে প্রাথমিক ও গণশিক্ষারও বাজেট বাড়াতে হবে। শিক্ষা জীবন শুরু হয় প্রাথমিক থেকে। প্রাথমিকে বাজেট দিতে হবে বেশি। শিক্ষার্থীরা যেন ঝরে না পরে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গত বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ ছিল প্রায় ১২ শতাংশ। এবার ২০ শতাংশ করতে হবে।
রাজশাহীর একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আঞ্জুম আরা সীফা বলেন, আমরা যে টাকা বেতন পাই। তার তিনভাগের দুইভাগের বেশি কেনা-কাটায় চলে যায়। ফলে অনেক সময় ধার করে মাস পার করতে হয়। আমরা এবার শিক্ষাবান্ধব বাজেট চাই।
সমাজ বিশ্লেষক আহম্মেদ সফিউদ্দিন বলেন, একটি দেশের বাজেট হচ্ছে সেই দেশের রাষ্ট্র দর্শনের প্রতিচ্ছবি। অর্থাৎ রাষ্ট্র সেই দেশের মানুষের সামগ্রিক কল্যাণের জন্য কী ভাবছে। কোন খাতে কী বরাদ্দ দেবে, কোন খাতে বরাদ্দ কম দেবে।
লক্ষ্য কোটি টাকার বাজেট বড় বিষয় না। সাধারণ মানুষের কল্যাণে আমরা কত টাকা বাজেট রাখবো সেটাই বড় বিষয়। চিকিৎসা সেবার দিকে নজর দিতে হবে। কারণ চিকিৎসা সেবা বাবদ অনেক মানুষ দেশের বাইরে যাচ্ছে।
রাজশাহী বিশ^বিদ্যলয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক হাসনাত আলী বলেন, আমাদের কৃষি প্রধান দেশ। বাজেট কৃষিবান্ধব হওয়া বাঞ্ছনীয়। কৃষকের বিষয়গুলো বুঝে কৃষিবান্ধব বাজেট করতে হবে। বর্তমান অবস্থায় ইউক্রেন যুদ্ধ ও করোনার প্রভাব রয়েছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে শিল্প কারখানা তৈরি করে হবে। কৃষি, শিক্ষার পাশাপাশি শিল্প কারখানা করা জরুরি। বাজেটে এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।