ডিএম রাশেদ, পোরশা:
নওগাঁর পোরশায় ২০১৬ সালে তৎকালীন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পোরশা উপজেলা শাখার সভাপতি আনোয়ারুল ইসলামের সারাইগাছী বাজারের নিজ ভবন ভাড়া নিয়ে চালু করা হয় নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জোনাল অফিসের কার্যক্রম। অফিসটির কার্যক্রম শুরু হবার পর থেকেই দলীয় বিভিন্ন নেতা কর্মীদের ছত্রছায়ায় কিছু লোক শুরু করে দালালি। দালাল ছাড়া কোন কাজ হয় না গ্রাহকদের। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে দালাল ধরে কাজ করে নিতে হয় পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকদের। দালালদের সুযোগ করে দেন বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা। বিনিময়ে তাদের নিকট থেকে নির্দিষ্ট অঙ্ক নিতেন কর্মকর্তারা। এই সুযোগে কর্মচারীরা বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
অনিয়ম, দুর্নীতি, ভুতুড়ে বিল আর লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকরা। গ্রাহক নিজে কোন কাজ করতে গেলে পাত্তা দিতেন না পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে কর্মরত কর্মকর্তারা। কাজ করিয়ে নিতে হয় ওই অফিসের দালালদের মাধ্যমে। কর্মকর্তাদের নিকট কোন কাজ নিয়ে গেলে কাগজপত্রের ভুল বের করে ওই কাজ নিয়মের মধ্যে পড়ে না, তাই কাজ হবেনা বলে জানিয়ে দেন গ্রাহকদের। কাগজপত্র হাতে নিয়ে অফিস রুম থেকে বের হয়ে আসলে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা দালাল নিজেই গ্রাহককে বলে আপনার কাজ হলো? গ্রাহক তার কাজ হয়নি জানালে, দালাল তার কাজ করে দিতে পারবে বলে গোপন স্থানে নিয়ে গিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দাবী করে।
নিরুপায় হয়ে গ্রাহক মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সেই কাজ করে নিতে বাধ্য হন। সময়মত বিল পরিশোধ করেও পরের মাসে বিলের কাগজে পূর্বের বিল তুলে দেওয়া হয় এমন অভিযোগও রয়েছে গ্রাহকের। বিল কপিতে ব্যবহৃত ইউনিটের কলাম শূন্য থাকলেও পরিশোধের কলামে বিরাট অঙ্কের টাকা বসিয়ে বিল সরবরাহ ও আদায় করা হয়। বিদ্যুতের ব্যবহার স্বাভাবিক থাকলেও হুটহাট করেই মাস শেষে বিল বেশি দিতে বাধ্য করা হয় গ্রাহকদের। চলে সীমাহীন লোডশেডিং। মাঝে মধ্যেই লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ করে তোলে উপজেলাবাসীকে।
উপজেলার ছাওড় গ্রামের গ্রাহক আব্দুল বারী অভিযোগ করে বলেন, তিনি সময়মত বিদ্যুৎ বিলের কাগজ হাতে পান না। কোন মাসে বিল পরিষদের শেষ তারিখের ১দিন আগে তার বাড়িতে বিলের কাগজ দেওয়া হয়। কখনো কখনো আবার এমন সময় কাগজ দেয় যে, বিল পরিষদ করার সময়ও থাকে না। সহড়ন্দ গ্রামের রাশেদুল হক জানান, তার প্রায় মাসে ৫ থেকে ৬শো টাকার মধ্যে বিল আসে। বিদ্যুৎ ব্যবহার একই রকম থাকলেও হঠাৎ করে কোন মাসে ১৫ থেকে ১৭শো টাকা বিল চলে আসে।
উপজেলার নিতপুর সদরের শাহাদৎ হোসেন জানান, বিলের কাগজে তার জুলাই মাসের বিল দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল আগস্ট মাসের ১১তারিখ। তিনি তার ওই বিল নির্দিষ্ট তারিখের আগেই পরিশোধ করেন। এর পরেও পরের আগস্ট মাসের বিলের কাগজে পরিশোধ করা জুলাই মাসের বিলও যোগ করে দেওয়া হয়েছে।
পোরশা সদরের তৈয়ব শাহ্ জানান, তিনি মিটার নেওয়ার জন্য বেশ কয়েকবার অফিসে যাতায়াত করেছেন। তাকে অফিসের কেউ পাত্তা দেয়নি। পরে তিনি বাধ্য হয়ে বিদ্যুৎ অফিসের এক দালালকে টাকা দিয়ে মিটার নিয়েছেন। বড়বই গ্রামের সামছুল আলম জানান, সেচ কাজে গভীর নলকূপে তিনি ২০১৩ সাল হতে ৪.৫ কেভি ট্রান্সফরমার ব্যবহার করছেন। বর্তমানে পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় গভীর নলকূপটি প্রায় সময় চালু রাখতে হচ্ছে। এতে করে ৪.৫ কেভি ট্রান্সফরমারটি চাহিদামত বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে পাচ্ছে না।
বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করলে কর্মকর্তারা তাকে জানিয়েছেন ট্রান্সফরমার পরিবর্তন করে ১০ কেভি ট্রান্সফরমার স্থাপন করতে হবে। গ্রাহক সামছুল আলম ১০ কেভির জন্য আবেদন করলে বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা তাকে ২০১৩ সালে হতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১০ কেভি ট্রান্সফরমারের ভ্যাট ট্যাক্স ইত্যাদি টাকা বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা দাবী করেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি এখনও বিভিন্ন জনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর পোরশা জোনাল অফিসের ডিজিএম সেকেন্দার আলী সকল অভিযোগের উত্তর দিতে না চাইলেও তিনি দাবী করেন, তার অফিস দালাল ও দুর্নীতিমুক্ত।