রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৫ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
ডিএম রাশেদ, পোরশা:
ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন চাঁনবতী। তিনি নওগাঁর পোরশা উপজেলার ছাওড় ইউনিয়নের কামারধা গ্রামের সমাতিগ্যার স্ত্রী। ছোটবেলা থেকেই চাঁনবতীর স্বপ্ন ছিল উদ্যোক্তা হওয়ার। কিছু একটা করে সবাইকে চমক লাগিয়ে দেবেন। কিন্তু কী করবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না। এর মধ্যে বিয়ে হয় সমাতিগ্যার সঙ্গে। স্বামী কখনো ভ্যান চালান কখনো অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। এর মধ্যে তাদের সংসারে আগমন ঘটে ১ ছেলে ও ১ মেয়ের। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে সংসারে দেখা দেয় অভাব-অনটন। ঠিক তখনই তিনি ভাবতে শুরু করেন উদ্যোক্তা হওয়ার।
৩ বছর পূর্বে এলাকায় কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিসিডিবি’র সার্বিক সহযোগিতায় তিনি প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন কেঁচো সার উৎপাদনের উদ্যোগ। প্রকল্পের সহযোগিতায় বাড়ির উঠানের একপাশে প্রথমে তিনি ২টি রিং পার্ট দিয়ে শুরু করেন। সফলতা পেয়ে বর্তমানে তার বাড়িতে ৮টি রিং পার্টে কেঁচো সার উৎপাদন করছেন তিনি। স্থানীয় কৃষকরা কেঁচো বা ভার্মি কম্পোস্ট সার কিনতে আসেন তার বাড়িতে। ছোট খামার থেকেই তিনি এখন প্রতিমাসে ৪ হাজার টাকার উপরে আয় করছেন।
কেঁচো সার উৎপাদনকারী চাঁনবতী জানান, প্রথমে ২টি রিং পার্টে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করেন। এই সার দিয়ে তিনি প্রথমে অন্যের জমি চেয়ে নিয়ে পিঁয়াজ, রসুন, সিম ও বিভিন্ন শাক-সবজি চাষাবাদ করেন। উৎপাদিত সবজি নিজেরা খেয়ে বাড়তিটুকু বিক্রি করতেন তিনি।
পরবর্তীতে ভাল গুনাগুন পেয়ে বাড়াতে বাড়াতে বর্তমানে তিনি ৮টি রিং পার্টে সার তৈরি করছেন। বর্তমানে স্থানীয় কৃষকরা তার নিকট থেকে প্রতি কেজি কেঁচো সার ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যান। প্রতি মাসে সার বিক্রি করে তিনি প্রায় ৪ হাজার টাকা, সাথে কেচোঁ বিক্রি করেও আয় করেন বলে তিনি জানান। তবে আগামীতে তিনি সার উৎপাদন আরো বাড়াবেন বলে জানান।
সিসিডিবি’র উপজেলা কো-অর্ডিনেটর স্টিভ রায় রুপন জানান, কেচোঁ সার উৎপাদনে আমাদের প্রকল্পের রোলমডেল চাঁনবতী ও সমাতিগ্যার পরিবার। তাদের এই কেচোঁ সার উৎপাদন দেখে উৎসাহিত হয়ে প্রকল্পের কৃষিকাজের সাথে জড়িত রয়েছে এমন অন্যান্য সদস্যরাও সার উৎপাদনের জন্য পরামর্শ গ্রহণ করছেন, আমরাও কৃষকদের উপকরণ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা প্রদান করছি। ভবিষ্যতে আরো অন্তত ৭০-১০০ জন এমন উদ্যাক্তা তৈরি এবং “কেচোঁ সার উৎপাদন গ্রাম” করার লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি যা ভবিষ্যতে উত্তম জৈব কৃষি চর্চায় সহায়ক হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মামুনূর রশিদ বলেন, বাজারের রাসায়নিক সারের চেয়ে কেঁচো সারের দাম তুলানামূলক অনেক কম। এই সার ব্যবহারে ফসলের অনেক রোগবালাই কম হয়। তিনি সকল কৃষকদের কেঁচো সার প্রয়োগ করার পরামর্শ দেন।