শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১১ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
শিহাবুল ইসলাম
ব্যানার-পোস্টারে ঢাকা পড়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রধান ফটক। চারদিকে ব্যানার-পোস্টারে যেন বিলবোর্ডে পরিণত হয়েছে ফটকটি। এর ফলে সৌন্দর্য হারাচ্ছে উত্তরবঙ্গে এ শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লোগোর (প্রতীক) আশপাশ পর্যন্ত ঢেকে গেছে নানা প্রচারণামূলক ব্যানার-পোস্টারে। অথচ এসব অপসারণে প্রশাসনের নেই কোনো জোরালো উদ্যোগ।
গতকাল রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মূল ফটকসহ এর সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে কোচিং সেন্টার, পাবলিক ও বাণিজ্যিক বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তির বিজ্ঞাপণ ও পোস্টার। লাগানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের খাবার, মেস ও বাড়ি ভাড়াসহ বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন। আবার ক্যাম্পাসসহ আশপাশের এলাকা ও মহানগরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা, সম্মেলন ও নির্বাচনের প্রচারণামূলক পোস্টার, ব্যানার ও বিলবোর্ড ঝুলছে।
এছাড়া ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের প্রধান ফটকের বিপরীত পাশে শিক্ষার্থী ছাউনিতেও লাগানে হয়েছে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পোস্টার ও বিভিন্ন প্যণের বিজ্ঞাপণ। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবুল হাসান বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতীক ব্যবহৃত হওয়ায় এটি একটি সম্মানের জায়গা। তাছাড়া এটি দেখতে সুন্দর ও আমাদের কাছে গর্বের জায়গা। কিন্তু কিছু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা কাজ ও ত্যাগের মাধ্যমে নিজেদের পরিচয় না দিয়ে এভাবে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে ব্যানার ও পোস্টার লাগিয়ে নিজেদের রাতারাতি প্রচার করতে চায়। তাছাড়া এক শ্রেণির অসাধু ব্যাবসায়ী নিজেদের পণ্য বিক্রির জন্য এভাবে প্রধান ফটক ব্যবহার করা অন্যায় বলেই মনে করি’।
এভাবে যারা ব্যক্তিগত কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ব্যবহার করে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়কে অসম্মান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য নষ্ট করছে বলে যোগ করেন তিনি।
ফলিত গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী কুতুব উদ্দীন বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে অবস্থিত হওয়ায় যানবহনে চলাচলের কারণে অনেকে এর ভিতরে না আসতে পারলেও প্রধান ফটক দেখে তারা বিশ্ববিদ্যালয়কে মনে-প্রাণে ধারণ করে। কিন্তু প্রধান ফটকে এখন যেভাবে পোস্টার, ব্যানার ও বিলবোর্ড সাঁটানো আছে তা দেখে এখন আর কারো মনে হবে না এটা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক। ফলে একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও অসাধু ব্যবসায়ীদের মধ্যে পোস্টার ও ব্যানার সাঁটানোর প্রতিযোগিতা বাড়ছে।
যশোর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসা ফয়সাল আহমেদ বলেন, অনেকদিনের আশা বিশ্ববিদ্যালয়টা দেখবো। এবার সেই আশা পূর্ণ হয়েছে। তাই স্মৃতিপটে ধরে রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে কয়েকটা ছবি তুলেছি। তবে যখন প্রধান ফটকে ছবি তুলতে আসি, তখন প্রধান ফটকের ছবি তুলতে গেলেই শুধু ব্যানার ও পোস্টারের ছবি আসছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে দায়িত্ব পালন করা দারোয়ান, আনসার ও পুলিশ সদস্যদের কাছে এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে কোনো নির্দেশনা দেয়া আছে কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, আমাদের সেভাবে কোনো নির্দেশনা দেয়া নেই। তবে আমরা দেখলে অনেক সময় তাদের নিষেধ করি। এখানে যেন পোস্টার বা ব্যানার না লাগায়। তবে অনেকে গোপনে বা রাতে লাগানোর কারণে আমাদের চোখে পড়ে না।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মুজিবুল হক আজাদ খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচার-প্রচরণা, বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কিছু বিষয় থাকার কথা। তবে অনেক সময় বিভিন্ন সংগঠন পোস্টার ও ব্যানার লাগানোর অনুমতি নিতে আসলে আমরা তাদের নিষেধ করে দিই। সেইসঙ্গে এটাও বলে দিই কোথায় কোথায় এগুলো লাগানো নিষেধ।
তিনি আরো বলেন, প্রধান ফটক বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ভূখ-ের বাইরে হওয়ায় যারা আমার ছাত্র না বা বাইরের মানুষরাই এ কাজগুলো করে। পোস্টার ও ব্যানার দেখে পরিচয় শনাক্ত করে আমি অনেক সময় তাদের কাছে ফোন করি। প্রধান ফটকে এগুলো লাগানো নিষেধ তারপরও লাগানোর কারণ জানতে চাইলে, অনেকে দুঃখ প্রকাশ করে আবার অনেকে বলে আমি তো লাগায় নি। রিক্সা ওয়ালাকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম, সে লাগিয়েছে বলে নিজে বাঁচার চেষ্টা করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এগুলো অপসারণ করা হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বর্তমান উপাচার্য দায়িত্বে এসেছেন বেশিদিন হয় নি। তারপর তিনি অসুস্থাতার কারণে অফিস করতে পারছেন না। সুস্থ হয়ে ফিরে আসলে আমি তার সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেবো।