প্রজন্মের ভাবনায় একুশ

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৭, ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ

ফারিন সুমাইয়া



“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি”। খুব পরিচিত এই পঙক্তি। যার মাঝে আছে ভাষার প্রতি সম্মান, ভালোবাসা, মমতা আর তাকে ছিনিয়ে আনার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। প্রিয় বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষার স্থানে জায়গা দিতে ধ্বনিত হয়েছিল রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালামসহ কয়েকজন ছাত্রযুবা নিহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে সমবেত হয়। নানা নির্যাতন সত্ত্বেও ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ জানাতে পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি পুণরায় রাজপথে নেমে আসে। তারা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহিদদের জন্য অনুষ্ঠিত গায়েবি জানাজায় অংশগ্রহণ করে। ভাষাশহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি এক রাতের মধ্যে মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে ওঠে একটি স্মৃতিস্তম্ভ, যা সরকার ২৬ ফেব্রুয়ারি গুঁড়িয়ে দেয়। একুশে ফেব্রুয়ারির এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়।
১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে ৯ মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি যে চেতনায় উদ্দীপিত হয়ে বাঙালিরা রক্ত দিয়ে মাতৃভাষাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিল, আজ তা দেশের গ-ি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮) বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণে কয়েকজন তরুণ শহিদ হন। তাই ২১ ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়।
যারা আমাদের স্বাধীন ভাষা এনে দিয়েছে তারা এখন আর বেঁচে নেই। কিন্তু তারা তাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে রেখে যেতে চেয়েছিলো একটি স্বাধীন ও সুরক্ষিত ভাষা। দেশের প্রতি আর ভাষার প্রতি ভালোবাসার কথা ঠিক এমনভাবেই প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আধ্যায়নরত নাহার নিশা। তার মতে, ভাষার প্রতি দেশের প্রতি কেবল একদিন সম্মান দেখানোর কোনো অর্থ নেই। একে মনে প্রাণে লালন করতে হবে। অন্যদিকে দেশের বাইরে অধ্যায়নরত মাহমুদ হোসেন রবি বলেন, দেশের প্রতি ভালোবাসা তো বলে প্রকাশ করার কিছু নেই। তবে আমরা যারা দেশের কর্ণধার তাদের বলবো ভাষাকে বিকৃতি করবেন না। বাংলা এবং ইংরেজি দুটিকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করুন। আমরা যারা বাইরের দেশে পড়াশুনা করছি তারাই পারি দেশকে জাতিকে সবার সামনে তুলে ধরতে। ভাষার মর্ম আমাদের জাতির থেকে ভালো কেউ বোঝে না। তাকে বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করা আমাদের কাজ।
দেশকে একদিন নয় প্রতিদিন ভালোবাসুন। ভাষাকে একদিন নয় প্রতিদিন সম্মান দিন। দেখবেন দেশের সাথে সাথে বাঙালি হিসেবে আমরাও পাচ্ছি বিশ্বের কাছে নতুনভাবে নিজেদের উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরতে। ( ফিচারটি জাগোনিউজ থেকে নেওয়া)।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ