নিজস্ব প্রতিবেদক :ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট নামক নামসর্বস্ব অনলাইন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে রাজশাহীতে প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন অনেক মানুষ। খুইয়েছেন ৩০০ কোটি টাকা। অর্থ ফেরত পেতে ও প্রতারকদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন ভুক্তভোগীরা।
শনিবার (৩ জানুয়ারি) দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে) কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
এসময় ভুক্তভোগীরা অর্থ ফেরত পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে প্রতারকদের গ্রেফতারের দাবি জানান।
মানববন্ধনে প্রতারণার ফাঁদে ভুক্তভোগীরা জানান, ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টের মাধ্যমে ফরেক্স মার্কেটে বিনিয়োগের নামে মিথ্যা প্রলোভনে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এক লাখ টাকার বিপরীতে প্রতিমাসে রেমিটেন্স আকারে ১১ হাজার ২০০ টাকা করে মুনাফা দেয়ার প্রলোভন দিয়েছিলো প্রতারক চক্র।
এসময় ভুক্তভোগীরা দাবি করেন, রাজশাহীর ২ হাজার মানুষের ৩০০ কোটি টাকা লুটে নিয়েছে প্রতারক চক্র।
প্রতারণার ফাঁদে ভুক্তভোগীরা জানান, এ প্রতারক চক্রের রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান হিসেবে ছিলেন মো. ওয়াহেদুজ্জামান সোহাগ (৩৮), বিভাগীয় ব্যবস্থাপক হিসেবে ছিলেন সোহাগের স্ত্রী ফাতেমা তুজ জহুরা ওরফে মিলি (৩২) এবং জেলা এজেন্ট হিসেবে ছিলেন মিঠুন মন্ডল (৩৬)। তারা সবাই পলাতক রয়েছে।
প্রতারণার ফাঁদে মানববন্ধন কর্মসূচিতে নগরীর শিরোইল এলাকার বাসিন্দা সুফী আবদুল নাঈম বলেন, তিনি একটি ব্যাংকে দীর্ঘদিন চাকরি করে অবসর নিয়েছেন। হাতে টাকা ছিল। এক মামার মাধ্যমে বিভাগীয় ওহেদুজ্জামান সোহাগের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল। সোহাগ তাকে বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে এই অ্যাপে বিনিয়োগ করান। তিনি নিজে বিনিয়োগ করেছিলেন ৩৫ লাখ টাকা। আত্মীয়-স্বজনের মিলিয়ে বিনিয়োগ করা টাকার পরিমাণ ৯৮ লাখ। এখন তিনি প্রায় নি:স্ব।
রাজশাহীর গোদাগাড়ীর ইউসুফ আলী বলেন, প্রথমে আমি ৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি। পরে ট্রাক্টর বিক্রি করে ২৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করি। আমার বন্ধু-বান্ধবেরা মিলিয়ে প্রায় কোটি টাকার বিনিয়োগ। সে টাকা লুট করে নিয়েছে। এটি কোন বিদেশি প্রতিষ্ঠান না। এটা দেশীয় প্রতারক চক্র। আমাদের টাকা বিদেশে পাচার হয় নি। এখন দেখছি ওহেদুজ্জামান সোহাগ ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকায় একটা জমি কিনেছে। নামে-বেনামে আরও সম্পদ গড়েছে। আমরা ভুক্তভোগীরা চাই, সরকার আমাদের পাশে দাঁড়াক এবং আমাদের টাকাগুলো ফেরতের ব্যবস্থা করুক।
প্রতারণার ফাঁদে মানববন্ধনে এসেছিলেন নগরীর ডাসমারী এলাকার বাসিন্দা হলুদ-মরিচের ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন। তিনি বলেন, সোহাগের কাছে এক লাখ ২৬ হাজার টাকা বিনিয়োগ করিয়েছিলেন। ব্যবসা থেকে টাকা টেনে কাউকে কিছু না বলে বিশ^াস করে টাকাগুলো বিনিয়োগ করেছিলাম। এখন নিজের ভুল বুঝতে পারছি। আমার কষ্টের টাকাগুলো ফেরতের ব্যবস্থা করে দিন।
প্রতারণার ফাঁদে মানববন্ধনে ভুক্তভোগীরা জানান, টাকা উদ্ধারে তাদের পক্ষ থেকে রাজশাহীর রাজপাড়া ও গোদাগাড়ী থানায় দুটি মামলা করা হয়েছে। এই মামলায় আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিয়েছেন ওহেদুজ্জামান সোহাগের স্ত্রী ফাতেমা তুজ জহুরা মিলি। এরপর হুমকি-ধামকি দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগে মিলি উল্টো বাদি হয়ে ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা করেছেন। তারা হয়রানিমূলক এ মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি তাদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।
গোদাগাড়ী থানার মামলাটির তদন্ত করছেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) শিহাব উদ্দিন। তিনি জানান, মামলার এক আসামি জামিন নিয়েছেন বলে তিনি শুনেছেন। অন্য আসামিদের নাম-ঠিকানা যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় কাগজ পাঠানো হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের অনুরোধও জানানো হয়েছে।