মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৪ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক :
ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ইংরেজি জুন মাসের ২৭ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে শোকের মাস আল মহরম। মুসলিম ধর্মে যে চারটি মাসকে পবিত্র বলে ধরা হয় তার মধ্যে অন্যতম এই মাসে ইসলামিক রীতি অনুযায়ী কোনওরকম আনন্দ বা উৎসবে অংশগ্রহণ করা যায় না।
সেকারণে এবছর বাংলা-বিহার -ওড়িশার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার মৃত্যুদিনে তাঁর সমাধিস্থল খোশবাগে গিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে পারলেন না বাংলার-বিহার -ওড়িশার অন্যতম নবাব মীরজাফরের ১৫তম বংশধর সৈয়দ রেজা আলী মির্জা। যাঁকে মুর্শিদাবাদবাসী ছোটে নবাব বলেই বেশি চেনেন।
আলীবর্দী খানের পর মাত্র ২৩ বছর বয়সে ১৭৫৬ সালে বাংলার নবাবের সিংহাসনে বসেছিলেন সিরাজউদ্দৌলা। ঐতিহাসিকরা বলেন সিরাজউদ্দৌলা অন্যতম সেনাপতি মীরজাফরের ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র কারণে সিরাজ ২৩ জুন ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে হেরে যান।
যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর সিরাজ যখন গোপনে নৌকা করে পাটনার উদ্দেশ্যে পালিয়ে যাচ্ছিলেন সেই সময় মীরজাফরের সৈন্যরা তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ১৭৫৭ সালে ২ জুলাই মীরজাফরের ছেলে মীর মিরনের নির্দেশে মহম্মদ আলি বেগ লালবাগ শহরের নিমকহারাম দেউড়ির কাছে সিরাজের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।
বর্তমানে মুর্শিদাবাদ শহরে ভাগীরথী নদীর তীরে খোশবাগে সিরাজের সমাধি রয়েছে। নয়নাভিরাম এই সমাধিক্ষেত্র আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’র তরফে বর্তমানে অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ওই সমাধিস্থলে সিরাজ তাঁর পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য এবং প্রিয় কয়েকটি পশু পাখির সঙ্গে চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন।
সিরাজের সঙ্গে মীরজাফরের ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র গল্প ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পেলেও সেই বৈরিতা বয়ে চলতে রাজি নন মীরজাফরের ১৫ তম বংশধর সৈয়দ রেজা আলি মির্জা। তিনি বলেন,’ আমরা মীরজাফরের বংশধর বলে অনেকেই একটু ভ্রু কুঁচকে আমাদেরকে দেখেন। তবে বাংলার নবাব হিসেবে সিরাজউদ্দৌলা আমার পূর্বপুরুষ। আমার বাড়িতে অন্যান্য পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সিরাজউদ্দৌলারও ছবি রয়েছে।’
ছোটে নবাব বলেন,’ প্রত্যেক বছর আমি সিরাজউদ্দৌলার মৃত্যুদিনে খোশবাগে গিয়ে তাঁর সমাধিতে ফুল দিয়ে আসি। কিন্তু এবছর ২ জুলাই তাঁর মৃত্যুদিনে মহরম মাস চলার জন্য আমি সেখানে যাইনি। মহরম মাসে আমাদের উৎসব বা অন্য কোনও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে নেই। এটি শোকের মাস। ধর্মীয় রীতি পালন করার জন্য এবং মহররমের অন্যান্য আনুষাঙ্গিক কাজে ব্যস্ত থাকার জন্য এবছর আমার পক্ষে আর খোশবাগে যাওয়া হয়নি।’
মীরজাফরের ১৭ তম বংশধর ফাহিম মির্জা বলেন ,’ আমার বাবা মাঝেমধ্যে খোশবাগে সিরাজউদ্দৌলার সমাধিতে যান। তবে আমি এই বিশেষ দিনে কখনও সেখানে গিয়ে আলাদা করে কোনও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করিনি।’
তিনি বলেন,’ এখন মহরমের মাস চলছে। সেই কারণে আমি এবং বাবা দুজনেই ধর্মীয় রীতি পালনের জন্য ব্যস্ত রয়েছি। সম্ভবত সেই কারণেই বাবা এবছর খোশবাগে সিরাজউদ্দৌলার সমাধিতে যেতে পারেননি।’
তথ্যসূত্র: আজকাল অনলাইন