প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যেন ইদে ঘরমুখো মানুষের বাড়ি ফেরার প্রতিচ্ছবি

আপডেট: জানুয়ারি ২৯, ২০২৩, ১১:৩৮ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক ও নাটোর প্রতিনিধি:


রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় আসার জন্য বিশেষ ট্রেনে যেন ইদে ঘরমুখো মানুষের বাড়ি ফেরার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। ট্রেনে করে রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে নগরীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে ছুটে এসেছেন। ট্রেনের ভিতরে যাত্রীতে পরিপূর্ণ ট্রেনের ছাদে চেপে বাড়ি ফেরেন মানুষ। এমন দৃশ্যও দেখা গেল আরেকবার।

আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নাটোর থেকে বিশেষ ট্রেনে রাজশাহী সমাবেশ এসেছেন নেতাকর্মীরা। ট্রেনের ভেতর আসন পরিপূর্ণ হওয়ায় নেতাকর্মীরা উঠেছেন ট্রেনের ছাদেও। ইঞ্জিনের সামনেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়াতে দেখা গেছে তাদের। এ যেন ইদে ঘরমুখো মানুষের বাড়ি ফেরার প্রতিচ্ছবি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা সফল করতে নেতাকর্মীরা ট্রেনে চেপে, ঝুলে ও দাঁড়িয়ে জনসভায় এসেছেন।

রোববার (২৯ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায় বিশেষ ট্রেনটি নলডাঙ্গা মাধনগর, নলডাঙ্গা স্টেশন হয়ে নাটোর রেলস্টেশনে এসে থামে। প্রায় ৫ মিনিট স্টেশনে ট্রেনটি অবস্থান করে। এসময় স্টেশনে অপেক্ষায় থাকা শতশত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ট্রেন থামলে উঠতে শুরু করেন। বিশেষ ট্রেনটি দেখার জন্য বহু উৎসুক মানুষও অপেক্ষা করছিলেন স্টেশনে।

আব্দুল গণি মিয়া নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী বলেন, আমাদের প্রাণের নেত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহীতে আসছেন। নেত্রীকে এক পলক দেখতে রাজশাহীতে এসেছি। তাকে সারাসরি দেখার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নাটোর থেকে ছুটে এসেছি।
আতাউর রহমান নামে এক কর্মী বলেন, ট্রেনে প্রচন্ড ভিড়, পা ফেলার জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে এসেছি। নেত্রীকে একবার দেখার পর সব কষ্ট আর ক্লান্তি চলে যাবে।

শফিকুল ইসলাম নামে এক যুবলীগ কর্মী বলেন, অনেক আনন্দ লাগছে সব নেতাকর্মী একসাথে এসেছি। আমরা আবারো শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে নিরলস কাজ করবো।

নলডাঙ্গা থেকে আসা ৮০ বছরের বৃদ্ধ আওয়ামী লীগ কর্মী লিয়াকত প্রমানিক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর রাজশাহী জনসভা সফল করতে আমরা নেতাকর্মী সবাই একত্রে ট্রেনে এসেছি। জীবনের প্রথমবার সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে দেখবো। কাছ থেকে তার ভাষণ শুনবো। কখনো সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে দেখা হয়নি। আজ নিজ চোখে নেত্রীকে এক পলক দেখবো।

নাটোর রেলস্টেশনের কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার কামরুন নাহার বলেন, সাধারণত ইদে প্রচুর যাত্রীর চাপ সামলাতে হয়। অনেক সময় শৃঙ্খলা থাকে না। এবার চাপ একইরকম হলেও শৃঙ্খলা রয়েছে। তবে অনেক যাত্রী ছাদে উঠে গেছেন। আমরা এমন বিপজ্জনক যাত্রা নিরুৎসাহিত করলেও তারা শুনছেন না।

তিনি আরো জানান, রেল কর্তৃপক্ষ ১ লাখ ২৪ হাজার ৩২৪ টাকায় একটি বিশেষ ট্রেন বরাদ্দ দিয়েছে। আজ ঢাকা-রাজশাহী চলাচলকারী আন্তঃনগর সিল্কসিটি ট্রেনটি সাপ্তাহিক বন্ধ থাকায় ওই ট্রেন বিশেষ ট্রেন হিসেবে চলাচল করছে। ট্রেনটি চলাচলে অন্য ট্রেনের সময়সূচিতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ রহনপুর থেকে ট্রেনে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা রাজশাহীতে এসেছি প্রধানমন্ত্রীকে। চাচা-ভাতিজা সকালের ট্রেনে উঠে পড়েছি। রাজশাহীতে নেমে দেখছি বিশাল আয়োজন। চারিদিকে শুধু প্রধানমন্ত্রীর পোস্টার। অনেক ভালো লাগলো রাজশাহীতে এসে।

ট্রেনে করে সিরাজগঞ্জ থেকে এসেছেন রাকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, সকালে প্রথমে বাসে উঠেছিলাম। বাস থেকে নেমে ট্রেনে চড়ি। সব জায়গাতেই প্রধানমন্ত্রী ও তার উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা। নির্বাচনের বছরে হওয়ায় রাজশাহীর জনসভা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে প্রধানমন্ত্রী যশোর, চট্টগ্রামের জনসভায় ভোট চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীকে এক পলক কাছে থেকে দেখতে অনেক দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে এসেছে।

প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় জয়পুরহাট থেকে আসা রাজিব হোসেন জানান, বাসে করে রাজশাহীতে আসলাম প্রধানমন্ত্রীর জনসভা দেখতে। টিভি চ্যানেল, পেপার পত্রিকায় দেখেছি প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে অনেক সুন্দর করে রাজশাহী সাজানো হয়েছে। এসে সাজানো দেখলাম। সত্যিই অনেক ভালো লাগছে। প্রধানমন্ত্রী সভাস্থলে আসার আগ পর্যন্ত রাজশাহী নগরী ঘুরবো। পরে প্রধানমন্ত্রী কথা শুনে বাড়ি ফিরে যাব।

রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক টিটু জানান, রাজশাহী সব রুটে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে কেন্দ্র করে রাজশাহীতে প্রচুর মানুষ এসেছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ বাসে এসেছে।
রাজশাহী রেলওয়ের স্টেশন ম্যানেজার আব্দুল করিম জানান, ট্রেনগুলো বিভিন্ন জয়গা থেকে ছেড়ে আসছে। এছাড়া রাজশাহী থেকে বিভিন্ন রুটে ট্রেনগুলো ছেড়ে যাচ্ছে। সিডিউল বিপর্যয়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আর বিশেষ সাতটি ট্রেন শুধুমাত্র চলেছে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ