নিজস্ব প্রতিবেদক :
অবশেষে অবসান হচ্ছে রাজশাহী অঞ্চলের সাধারণ মানুষের বহুল আকাক্সিক্ষত অপেক্ষা। মাসব্যাপি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের অনেক প্রস্তুতি, উৎসাহ-উদ্দীপনা ও কৌতুহল পেরিয়ে আজ রোববার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠের মঞ্চে উঠবেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। ‘শেখের বেটি’ হাসিনাকে সরাসরি একটিবার অপলক দৃষ্টিতে দেখার যে আকাক্সক্ষা তাও আজ পূরণ হতে চলেছে রাজশাহীর সর্বস্তরের মানুষের। সমাবেশের আগেই নেতা-কর্মীদের সরব পদচারণায় রাজশাহীজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে সারদা পুলিশ একাডেমীতে পাসিং প্যারেড পরিদর্শন করবেন। এরপর রাজশাহী বিভাগের মোট ৩৩ টি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। এরপর দুপুর ২ টায় রাজশাহী মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন। আর সমাবেশের আগের দিনই প্রধানমন্ত্রীর এই নির্বাচনী জনসভাকে সফল করতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা রাজশাহীতে অবস্থান করে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। সবুজ, শিক্ষা, রেশম নগরীতে প্রধানমন্ত্রীর এই আগমনে জনমনেও নানা কৌতুহল বিরাজ করছে।
আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বলছেন, গণতন্ত্রের মানসকন্যা বঙ্গবন্ধুতনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ ৫ বছর পর রাজশাহীতে পা রাখছেন। তার আন্তরিকতা ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের প্রচেষ্টায় নগরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এছাড়া বিভাগের ৮ টি জেলাতেই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। আর এই উন্নয়নের চমক দৃষ্টিকারী মহিয়সী নারী শেখ হাসিনা রাজশাহীতে আসছেন। তার আগমনকে সামনে রেখে নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষও অনেক কৌতুহলী। কারণ তিনি এই সফরে রাজশাহীতে ভোট চাওয়ার পাশাপাশি কিছু আশার বাণী তো অবশ্যই শোনাবেন। কি সেই বাণী! সেটা অজানা। আর এটা নিয়েই সাধারণ মানুষের কৌতুহলও বেশি।
সরকারি প্রতিষ্ঠান, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুগোপযোগী করতে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ হাসিনার যে অবদান, তার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ রাজশাহীবাসী। এ অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ সকল মানুষের জীবনমান উন্নয়নে তার যে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা প্রতিফলিত হয়েছে-তা রাজশাহীবাসীকে এই সমাবেশ নিয়ে আরও কৌতুহলী করে তুলেছে।
রাজশাহীর দিনমজুর, শ্রমিক, অটো রিকশাচালক ও বেশকিছু পথচারীর সঙ্গে সমাবেশ সম্পর্কে জানান, শেখ হাসিনা তাদের কাছে মা ও বোনের ‘প্রতিকী’। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে তারই কন্যা শেখ হাসিনার উপর ভরসা রেখে কোনো দিকে না তাকিয়েই ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে কোনো রাজনীতি না করেও শেখ হাসিনার জন্য ভোট চেয়েছিলাম। এরপর তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে ঘিরে রাজশাহীবাসীর অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রত্যাশার বেশি কিছুই এ অঞ্চলের মানুষকে তিনি দিয়েছেন। তবে যুগের সঙ্গে সাধারণ মানুষের চাহিদাও বেড়েছে। অচিরেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তা পূরণ হওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তারা।
আশরাফু ইসলাম (৪১)। তিনি নগরীতে গত ৫ বছর ধরে অটোরিকশা চালান। শেখ হাসিনা কেমন? তিনি বলেন, ‘তিনি তার মতই’। কারণ এর আগে শেখ হাসিনার মতো এতো দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার সৌভাগ্য কারও হয় নি। তার মতো উন্নয়নও কেউ করে নি, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি যখন রাজশাহীতে আসবেন, এমন প্রচারণার শুরু থেকেই আমাদের মাঝে ভিন্ন কৌতুহল ছিলো। এখনও আছে। আর প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি দেখার সুযোগ কখনো হয় নি। তাই এবার সেই সুযোগ হাতছাড়া করবো না।
দিনমজুর রফিকুল ইসলাম। তার বাড়ি গোদাগাড়ি উপজেলায়। সে নগরীতে রাজমিস্ত্রির কাজ করে। রফিকুল জানান, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে তিনি কাজ করছেন। লেবার থেকে এখন মিস্ত্রি হয়েছেন। সাইকেল যোগেই বাড়ি থেকে শহরে যাতায়াত করেন তিনি। আজ থেকে ৫ বছর আগেও রাস্তার যে বেহাল দশা ছিলো, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন সেই রাস্তাই শুধু নয়; নগরের চিত্রই বদলে গেছে। তাদের কাজের পরিধি ও মজুরি দুটোই বেড়েছে। পরিবার নিয়ে ভালোই চলে যায় তার। আর সে জানুয়ারির আগে থেকেই রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রী আসবেন-এমন খবর জানতে পারেন। এর আগেও প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীতে বেশ কয়েকবার এসেছেন। তখন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে এতোটা আগ্রহ তার ছিলো না। তবে এখন চিত্রটা ভিন্ন। কারণ করোনাকালে তিনি সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। দেশে বড় বড় স্থাপনাও তৈরি করেছেন। তাই তাকে দেখার আগ্রহ থেকে সমাবেশে যোগ দিবেন তিনি।
জয়পুরহাট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সোনার দেশকে বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাজশাহী, জয়পুরহাটসহ পুরো বাংলাদেশেই উন্নয়নের জোয়ার হয়েছে। করোনা ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে বিশ্ব যখন টালমাটাল, তখন বাংলাদেশে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ছিলো। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা ও মেট্রোরেলের মতো উন্নয়ন দেশবাসীকে কৌতুহলী করে তুলেছে। শেখ হাসিনা সর্ম্পকে সাধারণ মানুষের ভিন্ন এক বার্তা দিচ্ছে। যা এর আগের কোন সরকারপ্রধান করতে পারে নি। আর একারণেই আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের একজন সমর্থকও এদিন ঘরে থাকবে না। মাদ্রাসা মাঠেই ঢল নামবে।
মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল জানান, সকল প্রস্তুতি শেষ। এখন শুধু নেত্রী আসবেন। মঞ্চে উঠবেন। রাজশাহীবাসীর উদ্দ্যেশ্যে বক্তব্য রাখবেন। তার বক্তব্য শোনার জন্য অধীর আগ্রহ ও কৌতুহল নিয়ে বিভাগের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীসহ রাজশাহীবাসী অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, শেখ হাসিনা দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে তিলেতিলে শুধু আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করার চেষ্টাই করেন নি, দেশের উন্নয়নের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দেশকে নিয়ে তার একাগ্র চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন আজকের বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে। এমন অনেক সাহসী পদক্ষেপের কারণে প্রধানমন্ত্রী দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সর্বজন স্বীকৃত মানুষ। সুতরাং তাকে ঘিরে নগরসহ রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের অনেক আশা। ভরসার জায়গাও শেখ হাসিনা। আর তার আগমনে রাজশাহীবাসী উচ্ছ্বসিত। ৭ লক্ষ মানুষের জনসমুদ্রে দাঁড়িয়েই শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক বক্তব্য রাখবেন।