প্রফেসর ড. আবদুল খালেক : বটবৃক্ষের ছায়াতলে জন্মদিনের জয়গান

আপডেট: ডিসেম্বর ২৫, ২০২২, ১২:১৬ পূর্বাহ্ণ

মো. হামিদুর রহমান:


প্রফেসর ড. আবদুল খালেক (জন্ম- ২৫ ডিসেম্বর, ১৯৩৭)। একাধারে তিনি সাবেক উপাচার্য, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়; বর্তমান উপাচার্য, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি; শাহজাদপুরের রবীন্দ্র বিশ^বিদ্যালয়ের সফল স্বপ্নদ্রষ্টা; সম্মানিত সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (২০০৩ হতে অদ্যবধি); মাননীয় চেয়ারম্যান, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক জাতীয় উপকমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (২০১৭ হতে অদ্যাবধি); সভাপতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ রাজশাহী জেলা (১৯৮৫ হতে অদ্যাবধি); সভাপতি, বাংলাাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতি (২০১৫ হতে অদ্যাবধি) মোটাদাগে এসব পরিচয়ের পাশাপাশি বর্তমানে আরও প্রায় ডজনখানেক সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-সাহিত্যিক সংগঠন তাঁর যোগ্য নেতৃত্ব ও নিরলস কর্মপ্রাণনায় ক্রিয়াশীল।
১৯৫০ সালে কিশোর খালেকের হাত ধরে গড়ে ওঠা ‘কিশোর মজলিশ’ থেকে শুরু করে পরবর্তীতে ‘প্রগতি সংঘ’, ‘করতোয়া ডিগ্রি কলেজ’, ‘আহমদ আলী পাবলিক লাইব্রেরী’, শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ^বিদ্যালয়’ ও সর্বশেষ নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মতো সুবৃহৎ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মূল কারিগর হিসেবে ড. আবদুল খালেকের যে শ্রম-সততা- মেধা ও সাংগঠনিক দক্ষতা পরিদৃষ্ট তা সত্যিই কিংবদন্তীতূল্য।
রাজশাহী বিশ^দ্যিালয়ে কৃষি অনুষদ নামে স্বতন্ত্র একটি অনুষদের সৃষ্টি এবং ফোকলোর ও নৃতত্ত্ব, মিউজিক ও ড্রামা, অ্যাপ্লায়েড ম্যাথমেটিক্স সহ অর্ধডজন বিভাগের জন্ম ও পূর্ণতাদানকারী উপাচার্য হিসেবে তিনি চিরস্মরণ্য-প্রণম্য। রাবির প্রায় ৩০ বছর ধরে আটকে থাকা কনভোকেশন জটেরও সফল পরিসমাপ্তি তাঁর হাতে!
শুধু কী তাই! সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক ৬০ এর অধিক প্রবন্ধ লেখা, দেশ-জাতি-সমাজ ও রাজনীতি বিষয়ক প্রায় দুু’শতাধিক নিবন্ধ রচনা, দেশ-বিদেশ মিলিয়ে ৩৭ টি এমফিল-পিএইচডি ও ডি.লিট গবেষণার সফল তত্ত্বাবধায়ক ও পরীক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন, ২০টির অধিক দেশি-বিদেশি স্বীকৃতি-সম্মাননা, অসংখ্যবার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সেমিনারে অতিথিবক্তা হিসেবে সক্রিয় অংশগ্রহণ; এসবের মাঝেও প্রায় ২৫ টি স্বরচিত প্রবন্ধ সংকলন ও গবেষণামূলক গ্রন্থের প্রণয়ন! সংখ্যাগুলোকে স্বপ্নের মতো শোনালেও স্যারের একজীবনে এসব ঘটমান। গর্বের সাথে উচ্চার্য, একা নিজ হাতে উত্তরবঙ্গের দুই দুইটি বিশ^দ্যিালয়ের স্বপ্নদ্রষ্টা ও সফল কারিগরও তিনি! আরও বিস্ময়ের, ৮৬ বছরের জীবনপাতে এসেও সম্পূর্ণভাবে সক্রিয় তাঁর সৃজনশীলতা-গবেষণা-শিক্ষকতা ও সাংগঠনিক সবকিছু। অপার এক তারুণ্য তাঁর কাজে, অনবদ্য এক আকর্ষণ তাঁর কথায়-বক্তৃতায়, অসাধারণ এক কর্মচাঞ্চল্য তাঁর জীবনচলায়।
সত্যিই তাই! শুদ্ধতায়-স্নিগ্ধতায়-শুভ্রতায়, শ্রমে-সম্ভ্রমে-সফলতায় এক অনন্য যৌবন জীবনব্যাপি যাপন করে চলেছেন তিনি। বয়সের বেড়াজাল, বার্ধক্যের বন্দিত্ব-বিবশতা-বন্ধ্যাত্ব কিংবা শারীরিক অপারগতাকে দুপায়ে মাড়িয়ে বহমান তিনি স্রোতস্বিনী নদীর মতো। তিনি যেন স্বাপ্নিক অগ্রযাত্রার অভিমুখে আগুয়ান এক বয়সীতরুণ! যেন কী এক অমিয় আনন্দধ্বনির ঝংকারে তাঁর সচেতনতার কোষগুলো সদা অনুরণিত-স্পন্দিত-জাগ্রত। তাঁর যে ধীশক্তি আর তিনি যে পরিমাণ স্থিতধী তা তার নিকটমানুষ মাত্রই অবগত ও যারপরনাই বিস্মিত। এই বয়সেও একা একজন মানুষের পক্ষে এত বেশি সূক্ষè ও দূরদর্শী হওয়া কিংবা স্মরণসুষমায় জারিত থাকা সম্ভব কিভাবে তা এক প্রকার সকলেরই জিজ্ঞাসা! চৈতন্যহীন সুপ্তির শৈথিল্যে তিনি আক্রান্ত নন কখনোই। এভাবেই, সকলকে বিস্ময়ের আবহে রেখেই সব্যসাচী স্যার একের পর আরেক করে চলেছেন কাজ, গড়ে চলেছেন ইতিহাস।
উত্তরবঙ্গের উচ্চশিক্ষা-সংগঠন-সাহিত্য বিশেষ করে ফোকলোর-সাধনা ও ফোকলোর চর্চার প্রাতিষ্ঠানিক পথ প্রশস্ত করতে তাঁর যে অবদান তার স্বীকৃতি হিসেবে ‘শিক্ষায় একুশে পদক’ বা ‘ফোকলোরে বাংলা একাডেমী পুরস্কার’ নিঃসন্দেহে তাঁর প্রাপ্য ছিল বহুআগেই। তবু ভূমিকাভোলা জাতি হিসেবে আমরা তা তাঁকে দিতে পারি নি এখনাবধি। এতে প্রফেসর ড. আবদুল খালেকের এসে যায় নি কিছুই। কিন্তু একদিন আমরাই হয়তো এজন্য হয়ে পড়বো লজ্জিত, অনুতপ্ত। বলা হয়ে থাকে, কিছু কিছু ব্যক্তিত্বকে পুরস্কার দিতে পারলে পুরস্কার নিজেই পুরস্কৃত হয়ে ওঠে ইতিহাসের বিচারে। প্রফেসর ড. আবদুল খালেক তেমনই একজন…।
১৯৬২ সালে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ পাবনার বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকজীবনের প্রারম্ভ যাত্রা। এরপর রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে প্রভাষক থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিটি পদ রাঙিয়ে উপাচার্য হিসেবে সফল সমাপ্তি। অবসরে এসে নিজেই বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মতো সুবৃহৎ কর্মযজ্ঞে সফলতা এবং শিক্ষকতার আরেক অধ্যায়ের সূচনা!
জীবনপথের ৮৬ বছর পূর্তির পাশাপাশি এখন তার শিক্ষকতারও সুবর্ণজয়ন্তী। শুভ জন্মদিন স্যার, সফল এক শিক্ষকজীবনের সুবর্ণজয়ন্তীতেও আপনাকে সশ্রদ্ধ শুভেচ্ছা!
লেখক : এককালের সহকর্মী ও চিরকালের ছাত্র