শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রভাব খাটিয়ে নিয়মবহির্ভুতভাবে স্ত্রীকে চাকরি পাইয়ে দেন জাতীয় শ্রমিক লীগের রাজশাহী নগর শাখার বহিষ্কৃত নেতা ওয়ালী খান। শুধু নিজের স্ত্রীকে চাকরি পাইয়ে দেয়া নয়, দলীয় পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে অসংখ্য নিয়মবহির্ভুত কাজ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগের সত্যতা এবং দলের সাংগঠনিক বিধি অমান্য করার কারণে ওয়ালী খানকে জাতীয় শ্রমিক লীগের সহসভাপতির পদ থেকে আবার বহিষ্কার করা হয়।
শুধু স্ত্রীকে চাকরি পাইয়ে দেয়া নয়, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে রেলের নিয়োগ-বাণিজ্য থেকে শুরু করে রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ট্রান্সফার, পদায়ন, নিজের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনদের চাকরি দেয়া, টিকিট কালোবাজারি, কোয়ার্টার দখলসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে এই শ্রমিক লীগ নেতার বিরুদ্ধে।
অথচ ওয়ালী খান রেলওয়ের চাকরিতে প্রবেশ করেছিলেন এমএলএসএস হিসেবে। পদোন্নতি পেয়ে হয়েছেন রেলওয়ে ওয়েল ফেয়ার পরিদর্শক। কিন্তু তার কাজকর্ম রেলের জেনারেল ম্যানেজারের মতো। তার ভয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল জোনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চরম আতঙ্কিত ও তটস্থ থাকেন।
সূত্র জানায়, স্ত্রীকে চাকরি পাইয়ে দিতে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করে তার স্ত্রীকে নিয়োগ দিতে ওয়ালী খান। এইজন্য দুই দুইবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিতে বাধ্য হয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। অথচ সেই সময় নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগ পান নি ৩৯ প্রার্থী। নিয়োগবঞ্চিতরা আদালতে মামলা করেন।
রেলের জনবল সঙ্কট দূর করতে ২০০৬ সালে পোটার ও খালাসি পদে নিয়োগের জন্য প্রথম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তখন পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল রেলে ওই দুটি পদে ১২৯ পদের বিপরীতে আবেদন করেন ৩৬ হাজার। আবেদনকারীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়। পরীক্ষা শেষে রেল কর্তৃপক্ষ এ নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করে ২০০৭ সালে পোটার ও খালাসি পদের বিপরীতে আরো একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা করেন চাকরিপ্রত্যাশী ৩৯ জন। এরপর ২০১০ সালের ১৫ এপ্রিল উচ্চ আদালত রায়ে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে রেল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সেইসময় উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়নের নামে রেলওয়ের কতিপয় অসাধূ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শুরু করেন বাণিজ্য। সেই সময় ওয়ালী খানের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন পোটার পদে নিয়োগ পান। অথচ সাবিনা ইয়াসমিন ২০০৬ সালে আবেদন করেন নি। তিনি আবেদন করেন ২০০৭ সালে। অথচ সরকারি চাকরির বয়সসীমা অনুয়ায়ী তার বয়স ছিল না। নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার হওয়া সত্ত্বেও ঠিকানা ব্যবহার করেছিলেন বগুড়ায়।
তখন পশ্চিম রেলের পারসোনেল অফিসার গোলাম কিবরিয়া সংবাদকর্মীদের বলেছিলেন, যারা মামলা করেছিল তারা কেউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ায় নিয়োগ দেয়া হয় নি। শ্রমিক লীগ নেতার চাকরি পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি কোন মন্তব্য করতে চান নি।
এছাড়া গত ১৫ অক্টোবর রেল শ্রমিক লীগ আরবিআর শাখার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানের ওপর হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। অভিযোগ রয়েছে, শ্রমিক লীগের বহিষ্কৃত নেতা ওয়ালী খানের শ্যালক রায়হানের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় মেহেদী হাসান দীর্ঘদিন আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
অভিযোগের ব্যাপারে বহিষ্কৃত নেতা ওয়ালী খান বলেন, প্রভাব খাটিয়ে স্ত্রীকে চাকরি পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ সঠিক না। আর শ্রমিক লীগ নেতা মেহেদীর ওপর হামলার ঘটনায় আমার সম্পৃক্ততার যে অভিযোগ আনা হচ্ছে সেটিও বাস্তবসম্মত না। একটি মহল আমার সাংগঠনিক দক্ষতায় ঈর্শ্বানিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।