মাহাবুল ইসলাম:
একটি জেলার উন্নয়ন ও পরিবর্তনের মূল কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে জেলা প্রশাসন দপ্তর। সরকারের নীতি বাস্তবায়নে এই দপ্তরই মূখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। এ দপ্তরে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও চমৎকার সাফল্য দেখাচ্ছেন। অন্যান্য সময়ের চেয়ে বর্তমানে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। যা পরোক্ষভাবে প্রান্তিক পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়নকেও শক্তিশালী করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিভাগের ৮ টি জেলার জেলা প্রশাসনে সরাসরি কর্মকর্তা হিসেবে নারীর অংশগ্রহণে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। ‘শূন্যে’ রয়েছে নওগাঁ জেলা প্রশাসন। যদিও সরকারের নারীবান্ধব নীতিমালার কারণে প্রশাসনিক পদের এ চিত্র সর্বক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নে সব সময় উল্লেখযোগ্য মানদ- হিসেবে বিবেচিত না হলেও এটি গুরুত্বপূর্ণ বলে মত ব্যক্ত করছেন বিশেষজ্ঞরা।
৮ টি জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, রাজশাহী জেলা প্রশাসনে মোট ২২ টি প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদ রয়েছে। এরমধ্যে ৮ টি পদে নারী রয়েছেন। অর্থাৎ প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নারীর অংশগ্রহণ ৩৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ১৬ টি পদের বিপরীতে নারী রয়েছেন ২ জন। শতাংশের হিসেবে যা দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। বগুড়ায় নারীর অংশগ্রহণ ১৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ, নাটোরে ২০ শতাংশ, জয়পুরহাটে ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ, পাবনায় ২৫ শতাংশ এবং নওগাঁ ‘শূণ্য’। আর রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার দপ্তরে ৭ টি কর্মকর্তা পদের বিপরীতে নারী রয়েছেন ২ জন। অর্থাৎ এখানে নারীর অংশগ্রহণ ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। বিভাগের ৮ টি জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসনে কর্মকর্তা হিসেবে মোট নারীর অংশগ্রহণ হলো ১৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। ১৫৭ পদের বিপরীতে এখানে নারী রয়েছেন মোট ৩০ জন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়নে নানাভাবে অনেক আগে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। যার সুফল মিলছে। সমাজে আজ নারীরা প্রতিষ্ঠিত। নারীরা শিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে। কর্মক্ষেত্রেও এগিয়ে যাচ্ছে। সে ধারাবাহিকতায় উচ্চ শিক্ষা ও বিসিএস’র মতো প্রতিযোগিতামূলক পরিক্ষাগুলোতে নারীরা নিজেদের অবস্থানকে জানান দিচ্ছে। পুরুষের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই নারীরা নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে প্রশাসনিক পদে আসীন হচ্ছেন। আর একজন নারী যখন প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকছেন, তখণ নারীর ক্ষমতায়নে তা অনেক বড় ভূমিকা রাখছে।
রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফারহাত তাসনীম বলেন, একজন নারীকে উচ্চ শিক্ষা শেষে কর্মক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার বিষয়টি একজন পুরুষের চেয়েও চ্যালেঞ্জিং। কারণ একজন নারীকে সংসার, পরিবার, সন্তান সামলানোর পরে আবার কর্মক্ষেত্রেও নিজেকে প্রমাণ করতে হয়। তবে এখন আর নারীরা নিজেদের পিছিয়ে রাখতে চান না। সরকারও নারীর ক্ষমতায়নের জায়গাটা নিয়ে কাজ করছেন। সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছেন। আর প্রতিযোগিতামূলক পরিক্ষার মধ্যে দিয়ে নারীরা প্রশাসনিক পদগুলোতে যাচ্ছেন। যা নারীর ক্ষমতায়নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর সরকারের নারীবান্ধব কর্মসূচিগুলোর কারণে এখন প্রতিনিয়তই নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি।
রাজশাহী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসরিন আক্তার মিতা বলেন, প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীর আসীন হওয়া মনে নারীর ক্ষমতায়ন শক্তিশালী হওয়া। প্রশাসনিক পদসহ কর্মক্ষেত্রের প্রতিটি জায়গায় এখন নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। নানা প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে চ্যালেঞ্জিং পেশাতেও নারীরা ভালো করছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিসিএসের মতো প্রতিযোগিতামূলক পরিক্ষায় নারীর চমৎকার সাফল্য দেখা যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের নারীবান্ধব নীতি নারীর ক্ষমতায়নকে প্রতিনিয়তই শক্তিশালী করছে বলে মনে করেন তিনি।
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, বিগত সময়গুলোর চেয়ে বর্তমানে শুধু প্রশাসনিক এ পদগুলোতে নয়; সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। আর এসব পদে নারীরা বিসিএসের মতো প্রতিযোগিতায় নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছেন। নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বর্তমান সরকারের ইতিবাচক নীতিমালা রয়েছে। যা নারীর শিক্ষাসহ ক্ষমতায়নকে শক্তিশালী করছে। কর্মক্ষেত্রেও নারী অনেক ভালো করছেন। ভবিষ্যতে এটা আরও বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, রাজশাহী জেলা প্রশাসনে নারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, কারণ বিভাগীয় শহর হওয়ায় এখানে সুযোগ-সুবিধা বেশি। তবে কোথাও শূণ্য এবং কোথাও বেশির বিষয়টি আগামীতে সমন্বয় করা হবে।