প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে মন্ত্রীর হুশিয়ারি || কঠোর ব্যবস্থাটাই মানুষ দেখতে চায়

আপডেট: মার্চ ৩১, ২০১৭, ১২:৩৯ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ রোববার শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি পরীক্ষাকে সামনে রেখে পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ও বা ফাঁসের গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি দৃঢ়তার সাথেই বলেছেন, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু এই হুশিয়ারি প্রায়োগিক ক্ষেত্রে কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে খুব বেশি আশাবাদ হওয়ার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষা শুরুর আগে মন্ত্রী মহোদয় সংবাদ সম্মেলনে একই ধরনের বক্তব্য দিয়ে থাকেন। কিন্তু পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতচক্র ঠিকই সক্রিয় থাকে এবং তারা যেটা চায় সেটিই করে থাকে। এটি অবৈধ উপায়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার স্বার্থেই হোক কিংবা হীন রাজনৈতিক স্বার্থেই হোক অনাকাঙিক্ষত ঘটনাগুলো ঘটেই যায়। এসব অপরাধ জালিয়াতচক্রের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তেমনটি আমাদের জানা নেই। দেশের মানুষও এটা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন থাকে। কেননা প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা যখন চাউর হয়ে যায় তখন হোক না তা গুজবÑ সেটি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এই পরিস্থিতি ভাল শিক্ষার্থীদের জন্যও সুস্থ ও স্বস্তির সাথে পরীক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে মানসিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
তবে এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে একটি জালিয়াতিচক্রকে আটক করার ঘটনা অনেকটা আশ্বস্ত হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৭ মার্চ তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার সাতরাস্তা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ওই জালিয়াতচক্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাবলিক পরীক্ষার ভূয়া প্রশ্নপত্রফাঁসের অভিযোগে আটক ৯ জনের মূল হোতা গাজীরচট এএম উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ প্রিন্সিপাল মো. মোজাফ্ফর হোসেন। তার পরিকল্পনা মতেই ফেসবুকে বিভিন্ন সাইড খুলে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হতো। প্রতিটি প্রশ্নের জন্য নেয়া হতো ৫’শ থেকে ৫ হাজার টাকা। মোজাফ্ফর হোসেন ছাড়াও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত ৪ শিক্ষক ১ অফিস সহকারী ও ৪ ছাত্রসহ মোট ৯ জনকে গ্রেফতার করে ডিএমপির ডিবি পশ্চিম বিভাগ।
তবে জালিয়াতচক্রের আরো স্তর রয়েছে। সে গুলো নেপথ্যেই থেকে যায়। অজ্ঞাত কারণে ওই সব চক্রকে দৃশ্যমান করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায় না। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, মুদ্রশ এবং বিতরণ ব্যবস্থার মধ্যে কোনো ফাঁক- ফোকর আছে কি না তা খতিয়ে দেখার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এই ব্যবস্থাগুলি বারবারই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কিন্তু এর কোনো প্রতিকার কিংবা সদুত্তর সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে পাওয়া যায় না। ফলে বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ- বিশ্বাস থেকেই যায়।
মন্ত্রি মহোদয় সত্যিকার অর্থেই যদি কঠোর হতে চান সে ক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র তৈরি থেকে পরীক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছান পর্যন্ত প্রতিটি ধাপের ব্যবস্থাপনায় সতর্ক পর্যক্ষেণ থাকা দরকার। সর্ষেয় ভূত থাকলে সেই ভূত তাড়ানো সত্যিই খুব কঠিন হয়। এর ফলে সরকারের ভাল উদ্দেশ্যও প্রশ্নবিদ্ধ হয়, ভাবমূর্তির সঙ্কটে পড়ে। নিশ্চয় এমনটি কারুরই প্রত্যাশা নয়।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ