মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
মাহাবুল ইসলাম:
ক্যান্সার! যাকে মরণব্যাধিও বলা হয়। এই মরণব্যাধি ক্যান্সার আক্রান্ত বাবা ইনসাব আলীকে সুরক্ষিত করতে প্রায় অর্ধশত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রাজশাহী শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে আসছিলেন ছেলে-মেয়ে ও নাতনি। ক্লিনিকে ক্যান্সারের কেমোথেরাপি দিয়ে তারপর বাড়ি ফেরার কথা ছিলো। ইনসাব আলীর রোগাক্রান্ত হওয়ার চিন্তাই ভর করেছিলো পুরো পরিবারকে। তবে প্রাণ বাঁচাতে শহরে এসেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ঝরলো তাজা পাঁচ প্রাণ। এরমধ্যে একজন প্রতিবেশী হলেও অপর চারজন একই রক্তের বাঁধন।
শনিবার (২৫ নভেম্বর) ক্যান্সার আক্রান্ত ইনসাব আলী (৭৫) কেমোথেরাপি দিতে রাজশাহী শহরে আসছিলেন। সঙ্গে ছিলো তার ছেলে, মেয়ে, নাতনি। প্রতিবেশী চাচাতো ভাই মোখলেসুর রহমানের সিএনজি রিজার্ভ করেছিলেন তারা। পথিমধ্যেই রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুর এলাকায় মুহূর্তেই পরিবর্তন হয়ে যায় গন্তব্য।
শনিবার দুপুর ৩ টা থেকে সাড়ে ৩ টার মধ্যবর্তী সময়ে বেপরোয়া ঘাতক ট্রাক চাপা দেয় সিএনজিটিকে। এতে ঘটনাস্থলেই ক্যান্সার আক্রান্ত নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার কান্তপুর গ্রামের ইনসাব আলী ৭৫ মারা যান। এরপর স্থানীয়দের ফোন পেয়ে প্রথমে বিশ^বিদ্যালয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে ৪ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়। পরে পুঠিয়া ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আরও একজনের লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে আনে।
পথিমধ্যেই ইনসাব আলীর ছেলে আইয়ুব আলী লাবু (৩৫), মেয়ে পারভিন বেগম, নাতনি রাজশাহীর শাহ মখদুম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী শারমিন ও সিএনজি চালক ভাতিজা মোখলেসুর রহমান মারা যান।
দুর্ঘটনায় কাছের কেউ আহত হয়েছেন এমন খবর শুনেই নগরীতে অবস্থান করা রাজশাহী কলেজের দর্শন বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্রী মিথিলা আক্তার (২৩) ছুটে এসেছিলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। হাসপাতালে এসে জরুরি বিভাগে তিনজনের লাশ দেখতে পান। এসময় ইনসাব আলী (৭৫) নামের একজনকে শণাক্ত করে শোকাগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। সম্পর্কে তিনি ইনসাব আলীর ভাতিজি। কিছুক্ষণ পরে একে একে পাঁচজন আত্মীয়ের লাশ দেখে আঁতকে ওঠেন তিনি।
এরপর একের পর এক লাশ দেখে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেন তিনি। এরপরই তার চাচাতো বোন সাদিয়া খাতুন আসে। সেও নগরীর একটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী। লাশ জরুরি বিভাগ থেকে মর্গে নেয়ার আগ পর্যন্ত তাদের আহাজারিতেই ভারি হয়ে উঠেছিলো মেডিকেলের আকাশ-বাতাস। এই মর্মান্তিক দৃশ্যে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে শোকের ছায়া নামে।
মৃত ইনসাবের ভাতিজি মিথিলা আক্তার জানান, প্রথম বাসা থেকে তাকে ফোন করে হাসপাতালে যেতে বলেছিলো। সেখানে আমাদের কোন আত্মীয় আহত হয়েছে এটা বলেছিলো। কিন্তু হাসপাতালে এসে আঁতকে উঠেছি। সবাই আমারই আত্মীয়। আমি আর নিতে পারছি না। এটা কি হলো!
এদিকে, মৃত্যুর খবরে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার কান্তপুর গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া নেমেছে।