মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার
নাটোর প্রতিনিধি:
প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে ছুটির পরিমাণ কমিয়ে পাঠদানের সময় বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার।
মঙ্গলবার (১৩ মে) দুপুরে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বড়াইগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনকালে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা লেখাপড়ার মানোন্নয়নের জন্য বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ নিচ্ছি। এর মধ্যে আমাদের এক নম্বর টার্গেট (লক্ষ্য) হচ্ছে, ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষকদের সময়টা, সেটা বাড়ানো।’
সেটি করতে গিয়ে শিক্ষকের অপ্রতুলতার মতো বিষয়টিও তুলে আনেন তিনি। বলেন, শিক্ষকদের সংখ্যা কোথাও বেশি আছে, কোথাও কম আছে। সেটিকে সামঞ্জস্য করার একটি বিষয় রয়েছে। এছাড়া রয়েছে শূন্য পদগুলো পূরণ করার মতো বিষয়।
ডা. বিধান রঞ্জন বলেন, আমাদের (শিক্ষকদের) উপর লেভেলে (উচ্চ পর্যায়ে) কিছু শূন্য পদ রয়ে গেছে, সেগুলোও পূরণ করতে হবে। এটি পদোন্নতি ও নিয়োগ—উভয় মাধ্যমেই করা হবে। এর পাশাপাশি শিখন ঘণ্টা বাড়ানো যায় কিনা, সে বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে বলে জানান তিনি। বলেন, আমরা ছুটিগুলো কিছু কমিয়ে দিতে পারি। কারণ, আমাদের ছুটির দিন অনেক বেশি। ফলে বছরে ক্লাস হয় অল্প দিন। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে শিক্ষার মান উন্নয়নের উদ্যোগগুলো সফল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন উপদেষ্টা।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মোহাম্মদ মাসুদ রানা, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মোহাম্মদ শামসুজ্জামান, পরিচালক কামরুল হাসান, নাটোরের জেলা প্রশাসক আসমা শাহীনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
পরে বিকালে নাটোর জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে আরও একটি মতবিনিময় সভায় অংশ নেন অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। তিনি এখানে বলেছেন, ছাত্র ও শিক্ষকের সম্পর্ক বাবা-মায়ের চেয়েও ঘনিষ্ঠ হওয়া উচিত। একজন শিক্ষার্থীর বিকাশে শিক্ষকের বিকল্প নেই।
উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার আরও বলেন, শিশুরা কতটুকু পড়াশোনা করছে এবং তারা স্কুল থেকে কতটা সুবিধা পাচ্ছে—তা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া যায় না, বরং সামগ্রিক আচরণগত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মন্ত্রণালয় হলো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। আমাদের সন্তানরা আক্ষরিক অর্থে বেশি শিক্ষিত হচ্ছে, কিন্তু তারা যদি ভাবার্থ অনুধাবন না করতে পারে, তবে প্রকৃত শিক্ষা অর্জিত হচ্ছে না। অনেক সময় দেখা যায়, একজন শিক্ষার্থী লিখতে পারলেও সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হলেন শিক্ষক নেতৃত্বের প্রতীক। একটি প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের মান ও পরিবেশ তার ওপর নির্ভর করে। ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষার বিকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ঘটাতে হবে। সব ধরনের শিক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে, তাহলেই আমাদের সন্তানেরা পূর্ণ বিকশিত হবে।
উপদেষ্টা আরও উল্লেখ করেন, একজন শিক্ষার্থীকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে একজন শিক্ষকের ভূমিকা অপরিসীম। একজন প্রধান শিক্ষক পুরো প্রতিষ্ঠানকে পরিচালনা করেন এবং তিনিই একটি স্কুলকে আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে পারেন।
নাটোর জেলা প্রশাসক মিস আসমা শাহীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচীব আবু তাহের মোঃ মাসুদ রানা, মহাপরিচালক আবু নুর মোঃ শামছুর রহমান, অধিদপ্তরের এনডিসি পরিচালক (পলিসি এন্ড অপারেশন) মোহাম্মদ কামরুল হাসান।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, রাজশাহী বিভাগের, উপ-পরিচালক মোঃ ছানাউল্লা, নাটোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্ত ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ।
অনুষ্ঠানে জেলার শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থেকে নিজ নিজ মতামত ও পরামর্শ তুলে ধরেন।