প্রার্থীতা ফিরে পেলেন শফিকুর রহমান বাদশা দুই বাদশার হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস!

আপডেট: ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩, ১২:০৪ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-২ আসনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের মহানগর সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা। সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) উচ্চ আদালত থেকে তিনি প্রার্থিতা ফিরে পান। তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-২ (সদর) আসনে এবার লড়াই হতে যাচ্ছে দুই বাদশার। একজন ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা, অন্যজন আওয়ামী লীগের নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা। জোটের রাজনীতিতে ফজলে হোসেন বাদশা নৌকায় উঠলেও শফিকুর রহমান বাদশা স্থানীয় আওয়ামী লীগের বড় একটা অংশেরই সমর্থন পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে । এই দুই প্রার্থীর মধ্যে লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছেন ভোটাররা।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা ২০০৮ সালে ১৪ দলের প্রার্থী হয়ে প্রথমবার এ আসনের এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হয়েই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালেও একইভাবে নৌকায় উঠে নির্বাচনের বৈতরণী পার হন তিনি। প্রতিবারই তিনি নিজ দলীয় প্রতীক হাতুড়ি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে নির্বাচন করেন। রাজশাহীতে ওয়ার্কার্স পার্টির তেমন ভোটব্যাংক না থাকলেও আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়েই তিনি এমপি হন।

কিন্তু এমপি হয়েই আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেননি বলে অভিযোগ আছে। তাই এবার নৌকার মাঝি বদলের জোর দাবি উঠেছিল। আওয়ামী লীগ দলের রাজশাহী মহানগরের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামালকে মনোনয়নও দিয়েছিল দল। তবে জোটের রাজনীতিতে শেষ পর্যন্ত নৌকা তুলে দিতে হয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ফজলে হোসেন বাদশার হাতে।

তবে নৌকা পেয়েও স্বস্তি নেই ফজলে হোসেন বাদশার। কারণ, এবার স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থন আদায় করা তার জন্য কঠিন বলে অনেকেই মনে করছেন। এ আসনে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা। মনোনয়নপত্র বাতিলের পর সোমবার আপিলেট ডিভিশনে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন তিনি।

শফিকুর রহমান বাদশা বলেন, গত তিন নির্বাচনের মতো এবারও নৌকা ‘ছিনতাই’ হয়ে গেছে। আমার লড়াইটা হবে নৌকা মাঝি পাল্টানোর। যিনি এই আসনে নৌকা পেয়েছেন তিনি প্রকৃত মাঝি নন। বাধ্য হয়ে আমাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগের কেউ এই আসনে মনোনয়ন পেলে নেতাকর্মীরা চাঙ্গা থাকতো। তাদের মনেও কষ্ট থাকতো না। স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন নিয়েই মাঠে নেমেছি। মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) আমার প্রতীক বরাদ্দ হলে প্রচারে নামবো। শিক্ষাবিদ হিসেবে নিজের জয়ের ব্যাপারেও শতভাগ আশাবাদী তিনি।

এদিকে শফিকুর রহমান বাদশা প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন। এতে ফজলে হোসেন বাদশাকে চ্যালেঞ্জ করছেন ইঙ্গিতে। ফজলে হোসেন বাদশা নৌকা পেলেও নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশার জন্য কাজ করবেন এমন ইঙ্গিতও দেয়া হচ্ছে ফেসবুকে।

সোমবার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ তার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রার্থিদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করেন। প্রতীক নিতে নিজেই যান নৌকার প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা। পরে তিনি হযরত শাহমখদুমের (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন। এরপর জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান। তবে তার সঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতাকর্মী ছাড়া আওয়ামী লীগ কিংবা জোটের অন্য কোনো নেতাকর্মীদের দেখা যায়নি।

মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, তারা তো আমাদের ডাকেনি। তাহলে আমরা যাব কেন? পাঁচ বছরের মধ্যে একদিন ফোনও দেয়নি। আজ দুবছর হয়ে গেল আমি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। ফজলে হোসেন বাদশা একদিনও আমাকে ফোন করেননি। কথা বলেননি। বার বার তিনি নৌকা পেয়ে যান। তিনবার থেকেই গেলেন। চতুর্থবারের মতো তাকেই নৌকা দেয়া হলো। এই দুঃখ আমরা কাকে বলব! আমাদের ভাগ্যের দোষ!’ আওয়ামী লীগ এবার দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশার বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ কী করবে, এমন প্রশ্নে মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, আমাদের মাথার ওপরে ছাতা হলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি ঢাকায় আছেন। ফিরে আসুক, আমরা বসে সিদ্ধান্ত নেব। এই মুহূর্তে এটা বলা একটু মুশকিল হবে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য জোট প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশাকে কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী যে কেউ হতে পারেন। কিন্তু তার পোস্টারে নৌকা থাকবে না, শেখ হাসিনার ছবি থাকবে না। আমাদের প্রার্থীর পোস্টারে তা থাকবে। তাই মনে করি যারা আওয়ামী লীগ করেন, তারা নৌকার সঙ্গেই থাকবেন।

নৌকার প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশার সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দেখা না যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, তারা সবাই থাকবেন। আজ তো কেবল শুরু হলো। এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহী ১৪ দলের সমন্বয়ক। তিনি ঢাকায় আছেন। আমরা তার ফেরার অপেক্ষায় আছি। সবকিছু বসে ঠিক করে নেব।

রাজশাহী সদর আসনে ফজলে হোসেন বাদশা ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হলেও এ আসনে শরিক দল জাসদেরও প্রার্থী আছেন। দলটির মহানগরের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী মশাল প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। জয়ের ব্যাপারে তিনিও আশাবাদী। এছাড়া জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম স্বপন লাঙল, বিএনএমের কামরুল হাসান নোঙর, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ইয়াসির আলিফ বিন হাবিব ছড়ি ও বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির মারুফ শাহরিয়ার ডাব প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশার প্রার্থিতা বৈধতার বিষয়ে আদালতের কাগজপত্র এসে পৌঁছানোর পর তিনি প্রতীক পাবেন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ