নিজস্ব প্রতিবেদক:
আসন্ন রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
বুধবার (৭ জুন) বেলা ১০ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমীতে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস।
মতবিনিময় সভায় রাজশাহী সৌন্দর্য ও মানুষের সৌহার্দ্যরে প্রশংসা করে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনে থেকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন। প্রার্থীদের অবশ্যই আচরণবিধি প্রতিপালন করতে হবে। অন্যথায় আমাদের যে সংস্থাগুলো আছে তারা আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নিবেন। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাচ্ছি, নির্বাচনী আচরণবিধির প্রশ্নে কঠোর অবস্থানে থাকবো। গুরুতর অপরাধ করে থাকলে তথ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে প্রার্থীতা বাতিলের ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র অপেক্ষা করবো না। এর আগেও আমরা নির্বাচনের আগের দিন প্রার্থীতা বাতিল করেছি। আমরা চাই নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে একটি বাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে। কারণ আমরা একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বদ্ধপরিকর।
নির্বাচনে ইভিএম এর বিরোধিতাকারীদের তিরষ্কার করে নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা ইভিএমে অসংখ্য নির্বাচন করেছি। সুতরাং এই পদ্ধতি নিয়ে আর শুনতে চাই না। যদি কারও আস্থা না থাকে, তাহলে আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। কারণ ইভিএমে কোনো ধরনের অনিয়ম, ম্যানিপুলেশন, টেকনিক কোনো কিছুই আমরা দেখতে পায় নি। এতোগুলো নির্বাচন হয়েছে। সেখানে যদি ইভিএমে ভূত কিংবা পেতিœ দেখতে পেতাম, তাহলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিতাম। কারণ আমরাও সততায় বিশ^াস করি। আর নির্বাচন কমিশন সরকারের প্রতিনিধিত্ব করে না। নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। আমরা আমাদের প্রতি আরোপিত দায়িত্ব নিরপেক্ষতার সঙ্গে পালন করবো।
প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর উপর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সুস্পষ্ট নিদের্শনা থাকবে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড লাগবে। এটার প্রয়োজন আছে। আপেক্ষিক অর্থে এটা কম-বেশি হতে পারে। কিন্তু প্রকৃত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হতে পারে প্রার্থীদের মাধ্যমে। আপনারা যদি সহযোগিতা করেন তাহলে সেটা সম্ভব হবে। এসময় ভোটারদের মাঝে আস্থা তৈরিতে সকলকে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
সিসিটিভির মাধ্যমে ভোট কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করা হবে জানিয়ে কমিশনার আরও বলেন, নির্বাচনের সময় কেন্দ্রে সিসিটিভি থাকবে। এছাড়া ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার দিকে আমাদের চোখ থাকবে। মিডিয়াতে বিষয়টি কিভাবে উঠে আসে সেটা অধুনা বিশে^ গুরুত্বপূর্ণ। ভোর থেকে ভোটাররা আসবেন। লাইন ধরে দাঁড়াবেন। এখানে কোনো বিশৃঙ্খলতা, লাঠি পেটা হচ্ছে কী না? জোরপূর্বক সরিয়ে দেয়া হচ্ছে কী না? সেটা দেখা হবে। ভেতরে মিডিয়াও থাকবে। তাদের ছবি তুলতে, কাজ করতে বাঁধা নেই। গোপন কক্ষের বুথ ছাড়া বাকি সর্বত্রই সাংবাদিকরা যেতে পারবেন। সাংবাদিকদের মাধ্যমেই আমরা জানতে পারবো, নির্বাচন কতটা শুদ্ধ, সিদ্ধ ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হচ্ছে। নির্বাচনকে গণতন্ত্রের সুস্থ ধারায় পরিচালিত করতে যে কোনো অপকর্ম ও অপকৌশলের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন সজাগ থাকবে বলে জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ এনডিসি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান (অব.), নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলম, রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক মো. আব্দুল বাতেন বিপিএম পিপিএম, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. আনিসুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
এদিকে, অনুষ্ঠানের শুরুতেই মেয়রপ্রার্থী, কাউন্সিলরপ্রার্থী ও সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীদের অভিযোগ শোনেন নির্বাচন কমিশনার। এসময় রাসিক নির্বাচনের চার মেয়রপ্রার্থীর মধ্যে তিন মেয়রপ্রার্থীই বক্তব্য ও দাবি তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। তবে আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকার প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন কোনো বক্তব্য রাখেন নি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রাসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন। এসময় প্রার্থীরা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন ও ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন করেন।
এদিকে, মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, পেপার-পত্রিকায় বিভিন্ন চাপ আসছে, এমনটা শোনা যাচ্ছে। তবে আমরা কোনো চাপ অনুভব করছি না। আর ওই ইস্যুগুলোও আমরা গায়ে মাখছি না। আমাদের দায়িত্ব হলো সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনগুলোকে এগিয়ে নেয়া। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি। ওইগুলো সরকারের জন্য চাপ হতে পারে আমাদের জন্য নয়।
রাজশাহীতে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, রাজশাহীর নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কেমন হবে এটা আগাম বলতে পারবো না। ভোট হওয়ার পরে আপনারা দেখতে পারবেন। তবে গাজীপুরে তো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে।
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের সুস্পষ্ট অভিযোগ আসলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।