রবিবার, ২৬ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১২ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
এবারও শুখা মরশুমে গঙ্গার জলসঙ্কট দেখা দিতে পারে, এমনই আশঙ্কা করছেন ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ। গত বছর জলসঙ্কটের কারণেই ৬টি ইউনিটের মধ্যে ৫টি ইউনিটেই বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থা এনটিপিসি–র ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ। চালু ছিল ৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন শুধুমাত্র ৬ নম্বর ইউনিটটি। এই ইউনিটে রয়েছে ‘কুলিং টাওয়ার’। এই কুলিং টাওয়ারের সাহায্যে জল ‘রিসাইকেল’ করে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন চালু রাখা সম্ভব হয়েছিল। সেটা ছিল ২০১৬–তে মার্চ মাসের ঘটনা।
কেন এমন আশঙ্কা? ফরাক্কা ব্যারেজের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানান, গঙ্গার আপ স্ট্রিমে গত দু’মাসের জলপ্রবাহের খতিয়ান দেখে এমনই আশঙ্কা করছি। বর্তমানে গঙ্গার আপ স্ট্রিমে জলস্তর ৭১.৮০ ফুট। আর ডাউন স্ট্রিমে জলস্তর ৪৪.১০ ফুট। জল যা আছে তাতে এখনই জলসঙ্কট দেখা দেবে না। কিন্তু মনে হচ্ছে, মার্চ–এপ্রিল মাস নাগাদ জলসঙ্কট দেখা দিতে পারে। গত বছর এই সময়ে গঙ্গার আপ স্ট্রিমে জলস্তর প্রায় এরকমই ছিল। কেন প্রায় প্রতি বছর এরকম জলসঙ্কট দেখা দিচ্ছে? এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ওই আধিকারিক। কিন্তু স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তির জন্যই জলসঙ্কট দেখা দিচ্ছে। প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে তৎকালীন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর উপস্থিতিতে দেশের প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তি হয়। চুক্তি অনুসারে শুখা মরশুমের ৫ মাস (জানুয়ারি থেকে মে) ১০ দিনের হিসেবে ১৫টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। জলের জোগান অনুসারে ৫০:৫০ ভাগে ভাগ করার কথা বলা হয়েছে। আর ১১ মার্চ থেকে ১৩ মে পর্যন্ত জল ৬টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ৫০ হাজার কিউসেক যদি জল থাকে, তবে ১১ মার্চ থেকে প্রথম ১০ দিন বাংলাদেশ পাবে ৩৫ হাজার কিউসেক, আর ভারত পাবে ১৫ হাজার কিউসেক। আবার ২১ মার্চ থেকে ভারত পাবে ৩৫ হাজার কিউসেক, আর বাংলাদেশ পাবে ১৫ হাজার কিউসেক জল। অর্থাৎ ১০ দিন অন্তর জল ভাগাভাগি কমবে–বাড়বে। এভাবেই চলতে থাকবে। প্রথম দিকে জলসঙ্কট দেখা না দিলেও ১১ মার্চ থেকে জলসঙ্কট দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। গঙ্গার জলসঙ্কট প্রসঙ্গে তৃণমূলের মুর্শিদাবাদ জেলার সহ–সভাপতি সোমেন পান্ডে বলেন, ১৯৯৬ সালে চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার আগের ১০ বছরে কত পরিমাণে জল ফরাক্কা ব্যারেজের আপার ক্যাচমেন্টে সঞ্চিত ছিল তার খতিয়ান দেখেই চুক্তিটি করা হয়েছিল। সে–সময় গঙ্গার জলের প্রবাহ ভালই ছিল। ১৯৯৬ সালের পরে যত দিন গেছে আপার ক্যাচমেন্টে জলের প্রবাহ কমেই চলেছে। যা ক্রমেই তলানির দিকে চলে যাচ্ছে। এই অবস্থায় দু’দেশের স্বার্থের কথা ভেবে চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন করা হোক। চুক্তিটি পরিমার্জিত হলে অনেকটাই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ফরাক্কার কংগ্রেস বিধায়ক তথা এআইসিসি–র সম্পাদক মইনুল হক বলেন, গত বছর ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। জলের অভাবে ফরাক্কায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেচ ও পানীয় জলের আকাল দেখা দিয়েছিল। তার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন করা হোক। এ প্রসঙ্গে জঙ্গিপুরের প্রাক্তন সাংসদ আবুল হাসনাত খান বলেন, জলসঙ্কট নিয়ে গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তিকে দায়ী করা ঠিক নয়। ভারত ও বাংলাদেশ, দু’দেশের স্বার্থে ১৯৯৬ সালে গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তি হয়। সে–সময় গঙ্গার জল ভালই ছিল। তারপরে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে প্রায় ১০০টি খাল কাটা হয়েছে। ওই খালের মাধ্যমে প্রচুর জল গঙ্গা থেকে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। যার ফলে ফরাক্কায় গঙ্গার জলের প্রবাহ অনেক কমে গেছে। এছাড়াও ভূগর্ভস্থ নয়, ‘সারফেস ওয়াটার’ ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে মানুষের মধ্যে, ফলে জলের প্রবাহ কমে যাচ্ছে। সমস্যা সমাধানের জন্য ভারত সরকারের উচিত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা। সেটা হল সঙ্কোশ খালের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে গঙ্গার মেলবন্ধন ঘটানো তাহলেই গঙ্গার জলস্তর বাড়বে।- আজকাল