ফুলবাড়ীতে যমুনার তীরে সনাতন ধর্মালম্বীদের সূর্য পূজা

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়েছে দুইদিনব্যাপী সনাতন (হিন্দু) ধর্মালম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সূর্য পূজা (ছট পূজা)।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে ফুলবাড়ীর ছোট যমুনা নদীর পূর্ব তীরে দুইদিনব্যাপী সূর্য পূজা (ছট পূজা) শুরু হয়। যা শুক্রবার (৮ নভেম্বর) সূর্য ওঠার পরপরই সকালে শেষ হয়েছে।

জানা গেছে, স্বামী, সন্তান ও সংসারের মঙ্গলের জন্য সূর্য দেবতার কৃপালাভের আশায় সনাতন (হিন্দু) সম্প্রদায়ের নারীরা নিজ নিজ বাড়ি থেকে ডালায় কুলাভর্তি বিভিন্ন ফলমূল, নিজের তৈরি বিভিন্ন মিষ্টি, আটার তৈরি লুচি, পুরি, ঠেকুয়া ও খাজতাসহ বিভিন্ন প্রসাদ সাজিয়ে বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে ছোট যমুনা নদীর পূর্ব তীরে সূর্য দেবতার কৃপা লাভের আশায় সূর্যের দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা করেন উপোস থাকা (রোজা) নারীরা।

সূর্যাস্তের পর নারীরা কুলার প্রসাদ ডালায় উঠিয়ে নিয়ে ফিরে যান নিজ নিজ বাড়িতে। পরদিন শুক্রবার (৮ নভেম্বর) রাত দুইটার পর থেকে আবারো ফিরে আসেন নদীর তীরে। কুলার প্রসাদ সাজিয়ে প্রতিক্ষায় থাকেন সূর্য ওঠার জন্য।

এদিকে সূর্য পূজাকে (ছট পূজা) কেন্দ্র করে ছোট যমুনার তীরে দুইদিনব্যাপী বসেছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী সব বয়সী নারী ও পুরুষের মিলনমেলা। ঢাক আর ঢাকির তালে মুখরিত ছিল নদীর তীরের পূজাস্থল। আলোকসজ্জাসহ কিশোর-কিশোরীদের নানা রকম আতশবাজিতে জমজমাট ছিল পুরো পূজা এলাকা।

অপরদিকে সূর্য ওঠার পর থেকেই নদীর তীরে অবস্থানরত নারীরা সূর্য দেবতার কৃপালাভের জন্য নদীতে স্নান শেষে কুলায় ভর্তি প্রসাদ নিয়ে অর্ঘ্য দেন সূর্য দেবতার উদ্দেশ্যে। প্রসাদ অর্ঘ শেষে বিবাহিতা নারীরা একে অপরকে সিঁদুর পরিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

ফুলবাড়ী উপজেলা কেন্দ্রীয় শ্রী শ্রী শ্যামা কালী মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি শ্রী জয়প্রকাশ গুপ্ত ও সাধারণ সম্পাদক শ্রী জয়রাম প্রসাদ বলেন, সূর্যোপসনার উৎসব ছটপূজা ভারতের বিহার, উত্তর প্রদেশ, ঝাড়খন্ড প্রদেশসহ নেপালের অবাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পালন করে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় যুগযুগ ধরে বাংলাদেশের সবস্থানেই এই সূর্যপূজা অর্থাৎ ছটপূজার আয়োজন করা হয়ে থাকে।

ফুলবাড়ী কেন্দ্রীয় কালী মন্দিরের প্রধান পূরহিত শ্রী সুদামা উপাধ্যয় বলেন, সূর্য পূজা (ছট পূজা) মূলত অবাঙালি সনাতন (হিন্দু) ধর্মাবলম্বী নারীরা তাদের স্বামী, সন্তান ও সংসারের মঙ্গলার্থে দেবের কৃপা লাভের আশায় নদীর তীরে যুগ যুগ ধরে পরমপরাভাবে করে থাকেন। এই পূজা ভগবান শ্রী রামের স্ত্রী সীতা মাইয়া এবং পার্বতী দেবীও পালন করেছিলেন।