নিজস্ব প্রতিবেদক:
বসন্ত পেরিয়ে চৈত্রেও ফুলে ফুলে সাজছে রাজশাহী নগর। বৃষ্টিস্নাত চৈত্রের নগর প্রাণ-প্রকৃতি নান্দনিক রূপ ধারণ করেছে। নগর সড়কের দু’পাশসহ আইল্যান্ডজুড়ে বাহারি রঙের ফুলে ফুলে সাজছে নগর। সন্ধ্যার পর দৃষ্টিনন্দন সড়ক বাতির সঙ্গে ফুল ও সবুজের সৌন্দর্যের মুর্ছনা মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে।
নগরীর প্রবেশপথ থেকে শুরু করে সকল সড়কেই অপার সৌন্দর্যের এই হাতছানি। এ যেন শিল্পীর রং-তুলিতে আঁকা কোনো ছবি। প্রকৃতিতে প্রতিটি ঋতুর আবর্তনেই যেন নতুন রূপে নতুন যৌবন ফুটে ওঠে নগরীতে। এক এক ঋতুতে প্রকৃতি নিজেকে সাজিয়ে তুলে ব্যতিক্রমী সাজে। তেমনিভাবে বসন্তে এখানকার প্রকৃতিতে ঘটেছে বিভিন্ন ফুলের আগমন। বসন্তের পলাশ-শিমুলের আগুন রাঙ্গা সৌন্দর্য এখন আর নেই। তবে প্রকৃতিতে কচি পাতার ফাঁকে ফাঁকে সূর্যমূখী, রক্তকাঞ্চন, হলিহকসহ নানা ফুলের সৌন্দর্য ফুটে উঠছে।
নগরীর আইল্যান্ডসহ সড়কের দু’পাশে অনেক রক্তকাঞ্চনের গাছ রয়েছে। অন্য অনেক ফুলের তুলনায় রক্তকাঞ্চন দুর্লভ। যখন ফোটে, গাছ ভরে যায়। আবার ঝরেও পড়ে নিয়মিত। গাছগুলো চারদিকে ডালপালা ছড়িয়ে দিয়েছে। বিস্তৃত শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগে ফুল আর ফুলে ভরে উঠছে। নিচের দিকেও ঝুলতে থাকা সরু ডালেও ফুল উঁকি দিচ্ছে।
নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থেকে বাইপাস সড়ক ও কোর্ট থেকে ঐতিহাসিক মাদ্রাসামাঠ পর্যন্ত আইল্যান্ডজুড়ে ঠাঁয় পেয়েছে অসংখ্য সূর্যমূখী। অধিকাংশই গাছেই ফুল ফুটে এক মায়াবি রূপ ধারণ করেছে। এছাড়া নগরীর অন্যান্য সড়কগুলোতেও লাগানো সূর্যমুখীতে ফুল ফুটছে। এছাড়া আইল্যান্ডজুড়ে হলিহক ফুল গাছের বিভিন্ন রঙের ফুল স্নিগ্ধতা ছড়াচ্ছে। এই সৌন্দর্যে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে বসন্তে ঝরে পড়া গাছের কচি পাতার সমাহার আর প্রজাপতি ও ড্রিম লাইটের আলোকায়ন। বিশেষ করে নগরীর রাতের সৌন্দর্যের মুর্ছনা অতুলনীয়।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) তথ্যমতে, নগরীর প্রায় ৩৬ কিলোমিটারের অধিক সড়কের আইল্যান্ডজুড়ে সৌন্দর্যবর্ধনে ঋতুর পরিবর্তনকে বিবেচনায় নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এতে বছরজুড়েই শোভা ছড়াচ্ছে রং-বেরঙের ফুল। এতে ঘর থেকে সড়কে চোখে পড়লেই প্রতিটি রাস্তার ফুটপাত, সড়ক বিভাজন, আইল্যান্ডে ফুলের শোভা। এছাড়া গত দুই বছরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে লক্ষাধিক গাছ লাগিয়েছে রাসিক। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানিক উদ্যোগেও অনেক গাছ লাগানো হয়েছে। যার সুফল মিলতে শুরু করেছে।
এদিকে, নগরীর বিলসিমলা রেলক্রসিং থেকে কাশিয়াডাঙ্গা মোড় পর্যন্ত চারলেনে উন্নীত সড়ক ও আলিফ-লাম-মিম ভাটার মোড় থেকে বিহাস পর্যন্ত দৃষ্টিনন্দন প্রজাপতি সড়কবাতি, কোর্ট থেকে সিঅ্যান্ডবি মোড় হয়ে ফায়ার সার্ভিস মোড়, আলুপট্টি থেকে তালাইমারি হয়ে ভদ্রা মোড় পর্যন্ত আধুনিক ড্রিম লাইটের আলোকায়ন ব্যবস্থা নগর নিরাপত্তায় বাড়তি মাত্রায় শুধু নিয়ে আসে নি, সৌন্দর্য বর্ধনেও প্রসংশনীয় সংযোজন এটি।
রাজশাহী নগরীর সৌন্দর্যের প্রশংসা শুনে নগরীতে কিশোরগঞ্জ থেকে ঘুরতে এসেছিলেন আসাদুল্লাহ। বন্ধুদের সঙ্গে প্রায় তিন দিন নগরীতে অবস্থান করে সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন। তিনি বলেন, রাজশাহী নগর ছোট্ট একটি শহর। তবে অনেক গুছানো ও পরিপাটি শহর। আর সৌন্দর্য বলতে, সন্ধ্যার পর নগরীজুড়ে যে বিচিত্র রূপ ধারণ করে রাজশাহী, তা দেশের আর অন্য কোথাও নেই। খুবই ভালো লেগেছে।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিং অফিসার হিসেবে কর্মরত আহসান হাবিব জানান, কাজের প্রয়োজনে প্রতিদিনই নগরীর একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ঘুরতে হয় তাকে। বিগত ৪-৫ বছরের মধ্যে নগরীর চেহারাই পরিবর্তন হয়ে যেতে দেখেছেন তিনি। বিশেষ করে সড়ক বড় করাসহ সবুজায়ন ও সৌন্দর্য বর্ধণের উদ্যোগগুলো তার নজর কেড়েছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন জানান, তিনি বিশে^র বিভিন্ন দেশে ঘুরেছেন। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে রাজশাহী নগরীকে সাজানোর বাসনা থেকেই বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাও রাজশাহীর উন্নয়নে আন্তরিক। প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার কাজ নগরজুড়ে হচ্ছে। আর রাজশাহীর সবুজ ও ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করেই বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এতে নগরীর চেহারাই পাল্টে গেছে।
মেয়র আরও বলেন, নগরীর সৌন্দর্য ও পরিচ্ছন্নতা নিয়ে তিনি সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন। নগরবাসীও অনেক সচেতন। এতে সারাবিশ্বের মানুষের কাছে রাজশাহী গ্রিন, ক্লিন, বাসযোগ্য নগরী হিসেবে প্রশংসিত হচ্ছে। আর নগরীর এই সৌন্দর্য ধরে রেখে কাজ করতে তিনি বদ্ধপরিকর।