ফেটে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ ঘর নিয়ে বিপাকে রাণীনগরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা

আপডেট: মার্চ ৮, ২০২৪, ৫:৫৬ অপরাহ্ণ


আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ফেটে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ ঘরগুলোতে বসবাস করছেন ভূমিহীন মানুষরা। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে এই ঘরগুলোতে বসবাস করা কঠিন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন আশ্রয়ণের বাসিন্দারা। ঘর নির্মাণের সময় নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার দিয়ে ঘরগুলো নির্মাণ করার কারণে নির্মাণের প্রায় দুইবছর পরই অধিকাংশ ঘর ভিতরে ও বাইরে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।

সূত্রে জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক গৃহিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকটি ধাপের আওতায় উপজেলার একডালা, কালীগ্রাম, বড়গাছা ও কাশিমপুর ইউনিয়নে ১ম পর্যায়ে ৯০টি, ২য় পর্যায়ে ৩৩টি ও ৩য় পর্যায়ে ৫৩টিসহ মোট ১৭৬টি গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট প্রতিটি বাড়িতে দুটি কক্ষ, সংযুক্ত রান্নাঘর, টয়লেট ও সামনে খোলা বারান্দাও রয়েছে। প্রতিটি আশ্রয়ন পল্লীতে বাড়ি নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্যুৎ সংযোগ, টিউবয়েল স্থাপন, রাস্তা ও মসজিদসহ অন্যান্য প্রয়োজন নিশ্চিত করা হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, ২০২২ সালে উপজেলার ডাকাহার এলাকায় চৌধুরী পুকুরপাড় দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ৫৯টি আশ্রয়ণের ঘর। বর্তমানে এই আশ্রয়ণের অধিকাংশ ঘরে দেখা দিয়েছে ফাটল। কোন কোন ঘরের দেওয়ালে যে ফাটল দেখা দিয়েছে তাতে ঘরে বসবাস করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। ফাটলের কারণে টয়লেটের দরজা লাগানোও যাচ্ছে না। তবে দ্রুতই যদি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘরগুলো মেরামত করা না হয় তাহলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি ও কালবৈশাখী ঝড়ে ঘরগুলোতে বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কায় রয়েছেন আশ্রয়ণের বাসিন্দারা। একই অবস্থা কালিগাঁও (মালিপুকুর) আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩২টি ঘরেরও।

চৌধুরীপুকুরের ১৮ নম্বর ঘরের বাসিন্দা মামুন খন্দকার জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে আশ্রয়ণের যে ঘর পেলাম তা এখনই ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। দেয়াল ফেটে হা হয়ে থাকার জন্য রাতের বেলা ঘরের দরজা লাগানো সম্ভব হয় না। এছাড়া টয়লেটের দরজাও লাগানো সম্ভব হয় না। কাগজ দিয়ে দেয়ালের ফাটলগুলো লুকিয়ে রেখেছি। সুখের পরিবর্তে বর্তমানে এই ঘর নিয়ে সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। যদি দ্রুত ভালো ভাবে ঘরটি মেরামত করা না হয় তাহলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বউ-সন্তানকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হবে।

ডাকাহার আশ্রয়ণ প্রকল্প ০২ সমবায় সমিতি লিমিটেডের সহ-সভাপতি হাসান প্রামাণিক বলেন আশ্রয়ণের প্রায় প্রতিটি ঘরের ভিতরে ও বাহিরে ফাটল দেখা দিয়েছে। এর আগে ফাটল দেখা দিলে অফিসে জানালে কিছু মেরামত করে দিয়েছে কিন্তু এখন ঘরের ফাটলের কথা বললে অফিসের লোকজন আজ নয় কাল কাল নয় পরশু বলে বলে দিন কাটাচ্ছে। আর আমরা বসবাস করছি হতাশা নিয়ে।

কালিগাঁও (মালিপুকুর) আশ্রয়ণের বাসিন্দা শাহিনা বেগম বলেন ঘরগুলো মানসম্মত ভাবে নির্মাণ না করার কারণে দুইবছর যেতে না যেতেই ঘরগুলোতে ফাটল দেখা দিয়েছে। জানি না আরো দিন গেলে ঘরগুলোতে কি থাকা সম্ভব হবে কিনা। আমরা গৃহহীনরা প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঠিকই পেলাম কিন্তু জানিনা উপহারের ঘরে আর কতদিন মাথা লুকাতে পারবো।

কালিগাঁও (মালিপুকুর) আশ্রয়ণ ০২ সমবায় সমিতি লিমিটেডের সম্পাদক মোছা: ছাবিনা ইয়াসমিন (মীম) বলেন ঘরের মধ্যে দেয়াল এমন করে ফেটে গেছে যে কখন যেন শরীরের উপর ভেঙ্গে পড়বে। তাই আমরা আশ্রয়ণের বাসিন্দারা রাতে ঘর ভেঙ্গে পড়ে জীবন হারানোর ভয় বুকে নিয়ে রাত কাটাচ্ছি। ঘরগুলো মানসম্মত নির্মাণ না করার কারণে দুই বছর না যেতেই এখনই তা বসবাসের অনুপযোগি হয়ে পড়ছে। ফেটে যাওয়া ঘরগুলো পুনরায় ভালো ভাবে মেরামত করার মতো সামর্থ আমাদের নেই। তাই সরকারের পক্ষ থেকে যদি এই ঘরগুলো দ্রুত দীর্ঘস্থায়ী ভাবে মেরামত করে দেয়া হয় তাহলে আমরা পরিবার নিয়ে রাতে কিছুটা হলে চিন্তাবিহীন ঘুমাতে পারতাম।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান মুঠোফোনে জানান যে তিনি আশ্রয়ণের ঘরগুলোর ফেটে যাওয়ার খবর জানেন না। আপনার (প্রতিবেদক) মাধ্যমেই বিষয়টি জানতে পারলাম। দ্রুত ফেটে যাওয়া ঘরগুলো পরিদর্শন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে তিনি জানান। এছাড়া ঘর নির্মাণে কোন অনিয়ম হয়েছে কিনা এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান যে সময় কম থাকার কারণে ঘর নির্মাণে কিছুটা তাড়াহুড়ো হয়েছে কিন্তু নির্দিষ্ট উপকরণ দিয়ে মানসম্মত ভাবেই ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে।