ফের আইসিইউতে জয়ললিতা

আপডেট: ডিসেম্বর ৬, ২০১৬, ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক



ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জে জয়ললিতাকে আবারও আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে।
রোববার সন্ধ্যায় কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পর তাকে চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হয় বলে এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়।
ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে গেল ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ওই হাসপাতালেই চিকিৎসা নিচ্ছেন ৬৮ বছর বয়সী জয়ললিতা। ওই সময় ডায়রিয়া ও জ্বরের কারণে ভর্তি হলেও পরে ফুসফুসের সংক্রমণজনিত কারণে এক দফা তাকে আইসিইউতে রাখা হয়।
গেল মাসে আইসিইউ থেকে অন্য একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। শনিবার এআইএডিএমকে (অল ইন্ডিয়া আন্না দ্রাবিড়া মুনেত্রা কাজাগাম) তাদের শীর্ষ নেতার সুস্থ হয়ে ওঠারও খবর দেয়। এরপর রোববার সন্ধ্যায় কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। ডাক্তাররা জানান, ভারতের অন্যতম প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় এ রাজনীতিকের হৃদপি- ও ফুসফুস সচল রাখতে শরীরে একটি এক্সট্রাকর্পোরেল মেমব্রেন্স হার্ট এসিস্ট ডিভাইস বসানো হয়েছে।
হাসপাতালের মুখপাত্র ড. সুব্বাইয়াহ বিশ্বনাথন বলেন, “একটি বিশেষজ্ঞ দল তার চিকিৎসা করছে, যার মধ্যে হৃদরোগ, বক্ষরোগ ও সংকটকালীন চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞরা আছেন।”
এনডিটিভি জানায়, মুখ্যমন্ত্রীকে আইসিইউতে ভর্তির খবর পেয়ে এআইএডিএমকে’র মন্ত্রীরা হাসপাতালে ছুটে আসেন; এদের অনেকেই রাতে হাসপাতালে অবস্থান করেন।
‘আম্মা’ হিসেবে খ্যাত জয়ললিতার স্বাস্থ্যের এ অবনতির খবর পেয়ে অ্যাপোলো হাসপাতালের বাইরে হাজার হাজার সমর্থক জড়ো হয়ে প্রিয় নেতার সুস্থতায় প্রার্থনা করছেন। হাসপাতালের বাইরে কয়েকশ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতির জন্য হাজারখানেক দাঙ্গা পুলিশকে ‘প্রস্তুত’ রাখা হয়েছে বলে প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং ফোনে জয়ললিতার চিকিৎসার খোঁজ নিচ্ছেন। তার ফোন পেয়ে তামিলনাড়ুর গভর্নর সি বিদ্যাসাগর রাও মহারাষ্ট্র থেকে চেন্নাই ছুটে আসেন। তিনি হাসপাতালের ভেতর ১০ মিনিট অবস্থান করেন এবং পরে কোনো বক্তব্য না দিয়েই সেখান থেকে চলে যান।
রাজ্যের সব পুলিশকে ‘সর্বোচ্চ সতর্ক’ থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুরো বাহিনীকে সোমবার সকাল ৭টার মধ্যে রিপোর্ট করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি। সেখানকার ক্লাস ও পরীক্ষা কার‌্যক্রম সূচি মেনেই চলবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সেপ্টেম্বরে জয়ললিতাকে হাসপাতালে ভর্তির সময় এআইএডিএমকে বলেছিল, ডায়রিয়া ও জ্বরের কারণে তাকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এরপর থেকে জয়ললিতার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। তার শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণের চিকিৎসা করতে দিল্লি ও লন্ডন থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা উড়ে আসেন।
প্রভাবশালী এ রাজনীতিককে দেখতে হাসপাতালে আসেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও কেন্দ্রীয় সরকারের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীরা। গেল মাসে ‘সুস্থ বোধ করায়’ তাকে হাসপাতালের আইসিইউ থেকে আলাদা একটি কক্ষে স্থানান্তর করা হয়েছিল।
শনিবার এআইএডিএমকে এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, তাদের নেত্রী সুস্থ হয়ে উঠেছেন এবং কবে বাড়ি ফিরবেন সে বিষয়ে দ্রুতই সিদ্ধান্ত জানাবেন। বিবৃতিতে বলা হয়, “আম্মা গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন; যারা তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছে তাদের সঙ্গে মাঝে মাঝে কথাও বলছেন।”
দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সের তিনজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারও জয়ললিতার ‘পুরো সুস্থ’ হয়ে উঠেছেন বলে ঘোষণা করেছিলেন।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত অক্টোবরে উপ-মুখ্যমন্ত্রী ওপি পান্নিরসেলভামের কাছে যাবতীয় প্রশাসনিক দায়িত্ব হস্তান্তর করেন জয়ললিতা। এর আগেও পান্নিরসেলভাম আরও দুই দফা তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
২০০১ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট জয়ললিতাকে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে একবছর পান্নিরসেলভাম ওই দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগে জয়াললিতা দোষী সাব্যস্ত হলে আবারও তামিল নাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হন ‘আম্মা’র ঘনিষ্ঠ পারিষদ পান্নিরসেলভাম। ২০১৫ সালের মে মাসে কর্নাটক হাইকোর্ট জয়ললিতাকে সব অভিযোগ থেকে খালাস দিলে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান পান্নিরসেলভাম।
ডাক্তাররা জানান, ভারতের অন্যতম প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় এ রাজনীতিকের হৃদপি- ও ফুসফুস সচল রাখতে শরীরে একটি এক্সট্রাকর্পোরেল মেমব্রেন্স হার্ট এসিস্ট ডিভাইস বসানো হয়েছে। ফাইলছবি: রয়টার্স
ডাক্তাররা জানান, ভারতের অন্যতম প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় এ রাজনীতিকের হৃদপি- ও ফুসফুস সচল রাখতে শরীরে একটি এক্সট্রাকর্পোরেল মেমব্রেন্স হার্ট এসিস্ট ডিভাইস বসানো হয়েছে। ফাইলছবি: রয়টার্স
জয়ললিতার ক্যারিয়ারের শুরু ১৯৬১ সালে তামিল ছবিতে, তখনও তিনি স্কুলছাত্রী। জনপ্রিয় অভিনেতা এম জি রামচন্দ্রনের হাত ধরে ১৯৮২ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন এ অভিনেত্রী।
রামচন্দ্রন মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব ছাড়ার পর ১৯৯১ সালে তামিলনাড়ুর ক্ষমতায় বসেন তিনি। রাজনীতিতে দ্যুতি ছড়িয়ে পরিণত হন ‘আম্মা’য়।
১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মেয়াদে দুর্নীতির অভিযোগে জয়ললিতার বিরুদ্ধে মামলা করেন বর্তমানে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা সুব্রামানিয়াম স্বামী। তার অভিযোগ ছিল, প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে জয়ললিতা মাত্র এক রুপি বেতন নিতেন। কিন্তু ওই সময়ে পাঁচ বছরে তিনি কমপক্ষে ৬৬ কোটি রুপির মালিক হয়েছেন। ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ললিতার দল দ্বিতীয়বারের মতো তামিলনাডুর ক্ষমতায় এলে বিচার যাতে প্রভাবিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে বিরোধীপক্ষের দাবির মুখে মামলাটি তামিলনাড়ু থেকে ব্যাঙ্গালুরুর বিশেষ আদালতে আনা হয়। মামলার ১৮ বছর পর ২০১৪-র সেপ্টেম্বরে ৫৪ কোটি রুপির অবৈধ সম্পদ রাখায় দায়ে মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতাকে চার বছরের কারাদ- দেওয়া হয়, করা হয় ১০০ কোটি রুপি জরিমানা। জয়ললিতার সহযোগী শশীকালা নটরাজনসহ  মামলার তিন আসামিকেও কারাদ- দেয় আদালত।
তিন সপ্তাহ জেলে থাকার পর ভারতের সর্বোচ্চ আদালত থেকে শর্তসাপেক্ষে জামিন পান এইএডিএমকে নেত্রী। আপিল করেন হাই কোর্টে।
২০১৫ সালের ১১ মে কর্ণাটকের হাই কোর্ট যে রায় দেয়, তাতে নির্দোষ ঘোষণা করা হয় জয়ললিতাকে। মামলার অপর তিন আসামিও খালাস পান। ওই রায়ের পর তামিলনাড়ুতে উল্লাসে ফেটে পড়েন জয়ললিতার সমর্থকরা। নেচে-গেয়ে, পতাকা উড়িয়ে ‘আম্মার’ জন্য তারা আনন্দ প্রকাশ করেন।
২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ৩৯টি আসনের মধ্যে ৩৭টিতে জয়ী হয়ে চমক দেখায় এআইএডিএমকে। দুই বছর পর বিধানসভা নির্বাচনেও জয়ললিতার দলের প্রতিই আস্থা রাখে তামিলরা।- বিডিনিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ