বঙ্গবন্ধুর প্রতি আবেগ-ভালবাসার যত দৃষ্টান্ত

আপডেট: আগস্ট ১১, ২০২১, ১২:৩০ পূর্বাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক:


দরিদ্র ভ্যান চালক হাসমত আলী। ছিলেন বঙ্গবন্ধুর জন্য অন্তঃপ্রাণ। আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ সমর্থক। জীবদ্দশায় হাড়ভাঙা পরিশ্রমের আয় থেকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জন্য ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে কিনেছিলেন ৭ শতাংশ জমি। ঘটনাটি ২০০৩ সালের। ওই সময় ২৪ হাজার টাকায় কেনা জমি রেজিস্ট্রিও করেছিলেন জাতির জনকের কন্যার নামেই।
নান্দাইলের পল্লী চিকিৎসক তোফাজ্জল হোসেন। নৃশংস ও বর্বরোচিত হামলায় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ঘটনায় বেদনায়-কান্নায়, দুমড়ে-মুচড়ে পড়া বাঙালির বুকের ভেতরটার মতো তার হৃদয়েও সৃষ্টি হয়েছিল গভীর ক্ষত। ঘৃণ্য এ হত্যাযজ্ঞের খুনিদের বিচার দাবিতে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত টানা ৩৪ বছর তিনি হেঁটেছেন খালি পায়ে।
ঈশ্বরগঞ্জের হারুন সালেহ রতন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা- মেনে নিতে না পেরে টানা ৪০ বছর তিনি ছিলেন ভাত না খেয়ে। ঈশ্বরগঞ্জের জাটিয়া ইউনিয়নের কুমারুল গ্রামের এ বাসিন্দা স্থাপন করেছেন বিরল ভালবাসার দৃষ্টান্ত।
বিপন্ন মানুষের সংগ্রামী নেতা থেকে স্বাধীন দেশের প্রেসিডেন্ট। সপরিবারে ক্ষণজন্মা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যার পর আবেগ, অকৃত্রিম শ্রদ্ধা আর হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসার এমন টুকরো টুকরো গল্পের নজির স্থাপন করেছে ময়মনসিংহের মানুষ।
বাঙালির স্বপ্ন ও বাস্তবতার সার্থক রূপকার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর জন্য সমুজ্জ্বল, সমান শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা যেন জেগে ওঠে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।
গফরগাঁওয়ের হাসমত আলীর কেনা সেই জমিতেই ২০১০ সালে একতলা বাড়ি করে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বছরের ৩১ মার্চ নিজে এসে হাসমত আলীর স্ত্রী রমিজা খাতুনকে বাড়িতে উঠিয়েও দিয়েছিলেন। রমিজা এখন ভাল আছেন। স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করছেন।
বঙ্গবন্ধুর ৪০তম শাহাদত বার্ষিকীতে দুপুরে মোবাইল ফোনে প্রয়াত হাসমত আলীর স্ত্রী রমিজা খাতুনের সঙ্গে আলাপ করে বাংলানিউজ। তিনি জানান, সকালে গফরগাঁও উপজেলা সদরের শহীদ মিনারে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছি। আমি এখন ভাল আছি।
তোফাজ্জল হোসেন ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খবর পেয়েই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। দু’দিন পর তার জ্ঞান ফিরলে শপথ করেছিলেন এ হত্যাকা-ের বিচার না হলে কখনোই পায়ে জুতা পরবেন না। টানা ৩৪ বছর হয়েছিলও তাই। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা তোফাজ্জলকে জুতা, পায়জামা-পাঞ্জাবি উপহার দিয়েছিলেন।
ভাত খেতে গেলেই বঙ্গবন্ধুর রক্তাক্ত মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠতো ঈশ্বরগঞ্জের জাটিয়া ইউনিয়নের হারুন সালেহ রতনের। এ কারণে তিনি ওই সময় থেকে আর ভাত খেতে পারেননি। দীর্ঘ ৪০ বছর তিনি শুধু খেয়েছেন ভাতের ফেন আর নানা তরল খাদ্য।
সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর পৈশাচিক হত্যাকা-ের পর সামরিক জান্তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দুর্বার সাহসে ময়মনসিংহে প্রথম জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে কালো পতাকা উড়িয়েছিলেন পল্লী চিকিৎসক নীলকান্ত সাহা।
ময়মনসিংহের সীমান্তঘেঁষা ধোবাউড়া উপজেলার পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের পোড়াকান্দুলিয়া গ্রামে নিজের ফার্মেসিতে কালো পতাকা উড়িয়ে মহান স্বাধীনতার স্থপতির হত্যাকা-ের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন শিক্ষিত ও সচেতন এ চিকিৎসক।
১৫ আগস্ট সন্ধ্যায় বিবিসির খবর শুনে নীলকান্ত প্রথম যে পতাকা উড়িয়েছিলেন, ২০০০ সালের শুরুর দিকে তিনি মারা যাবার আগ পর্যন্ত ধূলোয় মলিন, ছেঁড়া এ কালো পতাকা সেই জায়গাতেই ছিল।
সৌজন্যে বাংলানিউজটুয়েন্টিফরডটকম